খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক দাম রেকর্ড ছাড়াল
গত ফেব্রুয়ারিতে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক দাম বেড়ে যেকোনো সময়ের সর্বোচ্চে উঠেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভোজ্যতেল ও দুগ্ধপণ্যের বাজারদর। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)।
গত মাসে এফএও খাদ্যপণ্যের মূল্যসূচক গড়ে ১৪০ দশমিক ৭ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। জানুয়ারির তুলনায় মূল্যসূচক বেড়েছে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ, আর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ দশমিক ১ শতাংশ। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারির তুলনায় মূল্যসূচক বেড়েছে ৩ দশমিক ১ শতাংশ।
এফএও বলছে, খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক দাম বাড়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে ভোজ্যতেল। এক মাসের ব্যবধানে দাম ৮ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে অতীতের যেকোনো রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ভোজ্যতেলের মধ্যে মূলত পাম অয়েল, সয়াবিন ও সূর্যমুখীর দাম সর্বাধিক বেড়েছে।
সংস্থাটির তথ্যমতে, গত মাসে ভোজ্যতেলের আমদানি চাহিদায় ঊর্ধ্বমুখিতা অব্যাহত ছিল। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে সরবরাহজনিত যেসব জটিলতা দেখা দিয়েছিল, তা কাটেনি এখনো। এর মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ পাম অয়েল সরবরাহকারী দেশ ইন্দোনেশিয়া থেকে রফতানি কমে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে লাতিন আমেরিকায় খরার প্রভাবে কমে গেছে সয়াবিন উৎপাদন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চল থেকে সূর্যমুখী তেল রফতানি ব্যাহত হচ্ছে।
এফএওর মূল্যসূচক অনুযায়ী, গত মাসে দুগ্ধপণ্যের দাম জানুয়ারির তুলনায় ৬ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। মূলত পশ্চিম ইউরোপ এবং ওশেনিয়া অঞ্চলের দেশগুলো থেকে দুধ সরবরাহ আশঙ্কার চেয়ে বেশি কমে যাওয়ায় বাজারদরে ঊর্ধ্বমুখিতা তৈরি হয়। পাশাপাশি শক্তিশালী আমদানি চাহিদাও দাম বাড়াতে সহায়তা করেছে। বিশেষ করে উত্তর এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে দুগ্ধপণ্যের চাহিদা ছিল আকাশচুম্বী।
গত মাসে দানাদার খাদ্যশস্যের দাম এক মাসের ব্যবধানে ৩ শতাংশ বেড়েছে। এক্ষেত্রে গম ও চাল ব্যতীত অন্যান্য শস্য জ্বালানি জুগিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভুট্টার দাম ৫ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। কারণ লাতিন আমেরিকার দেশগুলোয় শস্যের আবাদ নিয়ে উত্কণ্ঠা ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। তার ওপর অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনের ভুট্টা রফতানি।
এদিকে বিশ্ববাজারে গমের দাম জানুয়ারির তুলনায় ২ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। যুদ্ধের কারণে কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চলে শস্যটির যে সংকট তৈরি হয়েছে, তারই প্রতিচ্ছবি এ মূল্যবৃদ্ধি। গত মাসে চালের বৈশ্বিক দাম ১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। পূর্ব এশিয়ার ক্রেতাদের মাঝে সুগন্ধি চালের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাজারদর ঊর্ধ্বমুখী। পাশাপাশি কয়েকটি রফতানিকারক দেশে ডলারের বিপরীতে মুদ্রার বিনিময় মূল্য কমে যাওয়াও দাম বাড়াতে সহায়তা করেছে।
এফএওতে মাংসের মূল্যসূচক বেড়েছে ১ দশমিক ১ শতাংশ। এর মধ্যে গরুর মাংসের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। বিশ্বব্যাপী পণ্যটির শক্তিশালী চাহিদা থাকলেও ব্রাজিল থেকে মাংস সরবরাহ কমায় বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। শূকরের মাংসের দামও কিছুটা বেড়েছে। তবে নিম্নমুখী ছিল ভেড়া ও হাঁস-মুরগির মাংসের দাম।
গত মাসে বিশ্ববাজারে চিনির দাম ১ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে। শীর্ষ উৎপাদক দেশ ব্রাজিল পিছিয়ে পড়লেও ভারত ও থাইল্যান্ডের মতো বড় রফতানিকারক দেশগুলোয় উৎপাদন বাড়ছে। বিষয়টি বাজারে স্থিতি ফেরাতে সহায়তা করেছে। এছাড়া সম্প্রতি ব্রাজিলে চিনি উৎপাদন পরিস্থিতি আগের তুলনায় কিছুটা উন্নতির দিকে রয়েছে। এ কারণে সরবরাহ সংকট ও ঘাটতি কমার সম্ভাবনা দেখছেন বাজার বিশ্লেষকরা।