আকাশচুম্বী উচ্চতায় সিঙ্গাপুরে বাড়ি ভাড়া
মহামারীর শুরু থেকেই অন্যান্য দেশের মতো সিঙ্গাপুরেও বাড়ির চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী হয়। বাড়ি থেকে কাজ ও অনলাইনে ক্লাস আবাসন সংকট তৈরি করে। পাশাপাশি কভিডজনিত বিধিনিষেধে সংকুচিত হয় নির্মাণ কার্যক্রম। এ পরিস্থিতি বাড়ি ভাড়াকে রেকর্ড উচ্চতায় ঠেলে দেয়। এরই মধ্যে বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল এ শহরে বাড়ি ভাড়া সাত বছরের সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে। খবর রয়টার্স।
বিশ্লেষকদের ভাষ্য, মহামারীর শুরু থেকেই চলাচলে বিধিনিষেধ জারি করে সিঙ্গাপুর সরকার। দেশটির প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজে উৎসাহিত করে। ফলে ঊর্ধ্বমুখী হয় বাড়ি ভাড়া নেয়ার চাহিদা। যদিও মহামারীতে চাকরি হারিয়ে অনেক প্রবাসী নিজ দেশে পাড়ি জমায়। এ কারণে দুই বছর ধরে দেশটির জনসংখ্যা নিম্নমুখী হয়েছে।
সিঙ্গাপুর সরকারের তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) নগররাজ্যের বেসরকারি আবাসিক সম্পত্তির ভাড়া মূল্যসূচক ১১৪ দশমিক ২ পয়েন্টে পৌঁছেছে। এ হার আগের বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। চাহিদার পরিমাণ সরবরাহকে ছাড়িয়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। কভিডজনিত বিধিনিষেধের কারণে নির্মাণ বিলম্ব বাড়ির সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে।
মার্কিন নাগরিক অ্যামি ইয়েগার সপ্তাহব্যাপী বাড়ি খোঁজার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি মাসিক ভাড়ার বাজেট প্রায় ১০ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলারে উন্নীত করার পর একটি নতুন ৪ বেডরুমের বাড়ি খুঁজে পেয়েছেন। তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরে বাড়ি খোঁজা অনেকটা লটারি জেতার মতো। বাড়ি ভাড়ার পেছনে বিপুল পরিমাণ এ ব্যয় বেশির ভাগের পক্ষেই বহন করা দুঃসাধ্য।
তার এ অভিজ্ঞতা স্থানীয় ও বিদেশী উভয় ভাড়াটিয়াদের প্রতিধ্বনি। কভিড মহামারীর কারণে শ্রমিক ও উপকরণ সংকট বেসরকারি এবং সরকারি হাউজিং ডেভেলপমেন্ট বোর্ডকে (এইচডিবি) অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ ধীর করে দিয়েছে। একই সঙ্গে চাহিদা বাড়ায় বাড়ি ভাড়া রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। বিশ্লেষকরা বাড়ি ভাড়া বাড়ার পেছনে এমন বিভিন্ন কারণের কথা উল্লেখ করেছেন।
এ পরিস্থিতি স্থানীয় বাসিন্দাদের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই ভাড়া নিতে বাধ্য করছে। পাশাপাশি উচ্চ দাম কিছু বাড়িওয়ালাকে তাদের ইউনিট বিক্রিতেও প্ররোচিত করছে। মহামারী চলাকালীন সিঙ্গাপুরবাসীরা দেশে ফিরে এসেছিল এবং আগে ভাড়া দেয়া বাড়িগুলো ফিরিয়ে নিয়েছিল। সিঙ্গাপুরের তরুণ পেশাদাররাও পারিবারিক আবাসস্থল থেকে সরে যাচ্ছেন এবং বাড়ি থেকে কাজ করার জন্য নিজস্ব জায়গা ভাড়া নিচ্ছেন। যদিও সিঙ্গাপুরবাসীরা সাধারণত একটা পর্যায় পর্যন্ত বাড়ি ভাড়া নেয় না। বিয়ে ও ভর্তুক্তিযুক্ত পাবলিক হাউজিংয়ের যোগ্য না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের পারিবারিক বাড়িতে থাকে।
ক্রমবর্ধমান সম্পত্তির বাজার শহরটিতে বসবাসের খরচ ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের বিশ্লেষণে সিঙ্গাপুর বসবাসের জন্য প্যারিসের সঙ্গে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল শহর হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। দেশটির মূল্যস্ফীতিও কয়েক বছরের শীর্ষে উঠেছে। পাশাপাশি জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম আরো বাড়বে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইসিএ ইন্টারন্যাশনালের লি কোয়ান বলেন, চলতি বছর সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠানগুলো যদি নতুন প্রবাসী নিয়োগ ও পুরনোদের ধরে রাখতে চায়, তবে তাদের উচ্চ বেতন এবং সুবিধা সরবরাহ করতে হবে। তা না হলে জীবনযাপনের উচ্চ ব্যয় মোকাবেলা করে প্রবাসীদের এখানে থাকা সম্ভব হবে না।
সরকারি তথ্যানুসারে, গত বছরের শেষ তিন মাসে বেসরকারি আবাসিক ইউনিটগুলোর শূন্যতার হার এক বছর আগের ৭ শতাংশ থেকে কমে ৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মহামারীর মধ্যে অনেক প্রবাসী সিঙ্গাপুর ছাড়লেও বাড়ি ভাড়ায় ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। বিশ্লেষকদের আশা, এ বছরও ভাড়া ৮ থেকে ১২ শতাংশ বাড়তে পারে। কারণ সীমান্ত বিধিনিষেধ শিথিল করায় এখন আরো বেশি বিদেশী নগররাজ্যটিতে প্রবেশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।