সঞ্চয় বাড়াচ্ছে ব্রিটিশরা
যুক্তরাজ্যে ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটার পরিমাণ কমে গেছে। পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেয়ার পরিমাণও কমেছে। চলতি বছরের জানুয়ারির এ নিম্নমুখী প্রবণতা ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের পর সবচেয়ে কম। মূলত নভেল করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে দোকান, রেস্তোরাঁ ও বারগুলোয় মানুষের যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটার পরিমাণও কমতে শুরু করে। খবর দ্য গার্ডিয়ান।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের তথ্য বলছে, জানুয়ারিতে ভোক্তা ঋণ ৬০ কোটি পাউন্ড বেড়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে এ ঋণ বাড়ার হার ছিল ৮০ কোটি পাউন্ড। অন্যদিকে নভেম্বরে ছিল ১২০ কোটি পাউন্ড। আরেকটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ব্রিটিশ পরিবারগুলো জানুয়ারিতে সঞ্চয় করেছে ৭৭০ কোটি পাউন্ড। এ সঞ্চয়ের পরিমাণ ডিসেম্বরের ২৭০ কোটি পাউন্ড থেকে বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ পরিসংখ্যান দেখে মনে হচ্ছে মহামারী শুরুর দিকের পরিস্থিতি আবারো ফিরে এসেছে। সে সময় কভিডজনিত বিভিন্ন অনিশ্চয়তায় মানুষ ব্যয় কমিয়ে দিয়েছিল এবং অনেক বেশি সঞ্চয় করেছিল।
সংশ্লিষ্ট ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, গত বসন্তে নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায় ভোক্তা পর্যায়ের জীবনযাপনের খরচ। বিশেষ করে খাবার ও জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় সে সময় ভোক্তাদের ঋণের ওপর বেশ নির্ভরশীল হতে হয়েছিল।
স্টেপচেঞ্জের ডাইরেক্টর অব এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স রিচার্ড লেন বলেন, সে সময় যুক্তরাজ্যের পরিবারগুলোর ওপর আর্থিক চাপ বেশি ছিল। তবে ভূরাজনৈতিক অবস্থা, জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে সামনের দিনগুলোয় আর্থিক চাপ অব্যাহত থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
মানি অ্যাডভাইস ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জোয়ানা ইলসন বলেন, খাদ্য ও জ্বালানির দাম ক্রমেই বাড়ছে। যেহেতু বিদ্যুতের দাম অনেক বেড়ে গেছে, আমরা আশঙ্কা করছি যে সামনের দিনগুলোয় আরো বেশি মানুষ বিপদে পড়বে। বিদ্যুৎ বিলের দাম কমানোর বিষয়ে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেনি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
আরএসএম ইউকের অর্থনীতিবিদ থমাস পুঘ বলেন, ওমিক্রনকে যতটা ভয়াবহ ভাবা হয়েছিল, বাস্তবে তা হয়নি। ফলে দ্রুত অর্থনীতির পুনরুদ্ধার শুরু হয়। আর পুনরুদ্ধারের এ সময়ে সাধারণত ঋণের পরিমাণ বাড়ে এবং সঞ্চয় কমতে থাকে। যার মাধ্যমে ভোক্তা ব্যয় বেড়ে গিয়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে।
কিন্তু এবার তেমনটি দেখা যাচ্ছে না। যদিও বেশির ভাগ পরিবারের অবস্থা মহামারী শুরুর সময়ের চেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে। কারণ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধের পরিমাণও আগের চেয়ে বেড়েছে।
থমাস পুঘ বলেন, সাধারণত ভোক্তার ব্যয় বৃদ্ধিতে অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হিসেবে ধরা হয়। এর অর্থ হলো অর্থনীতির পুনরুদ্ধার হচ্ছে, অর্থনীতির অবস্থা ভালো হচ্ছে। মানুষ বড় অংকের ঋণ নিয়ে গাড়ির মতো প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে শুরু করেছে।
তবে পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। আগামী বছর ভোক্তা ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ার অর্থ হলো মূল্যস্ফীতির প্রভাব ভোক্তাদের ওপর পড়তে শুরু করেছে। ফলে জীবনযাপনের মাত্রা ধরে রাখতে তাদের অতিরিক্ত ঋণ করতে হচ্ছে।