পশুখাদ্যের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ
সয়াবিন মিল রফতানির খবরে স্থানীয় সয়াবিন মিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সয়াবিন মিলের দাম দফায় দফায় কেজিপ্রতি ১৫-২০ টাকা বাড়িয়েছে। এছাড়াও পশুখাদ্যের মধ্যে অন্য সব পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু সয়াবিন মিল রফতানির কারণে গত তিন মাসে পশুখাদ্যের মূল্য প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
গতকাল রাজধানীতে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক শাহ এমরান, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নাইব উল্লাহ এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট আলী আজম রহমান শিবলী, অর্থ সম্পাদক জাফর আহমেদ পাটোয়ারী উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে সয়াবিন মিলের চাহিদা বছরে প্রায় ১৮-২০ লাখ টন। এর মধ্যে ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ দেশীয় সয়াবিন তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে এবং অবশিষ্ট ২০-২৫ ভাগ আমদানির করা হয়। বাংলাদেশের ফিড মিলগুলো চাহিদা মেটানোর জন্য ভারত, আমেরিকা, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে।
এ সময় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন সময় তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস পেলেও মন্ত্রণালয় কর্মকর্তাদের বদলি ও অবসর গ্রহণের কারণে এজেন্ডা বাস্তবায়নে তেমন কার্যকরী পদক্ষেপ দেখছে না।
মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, ‘মিট অ্যান্ড বোন মিল (এমবিএম)’ আমদানি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করায় আমাদের ফিড মিলগুলো এখন সম্পূর্ণভাবে সয়াবিন মিলের ওপর নির্ভরশীল। যেখানে চাহিদা মেটাতে ফিড মিলগুলো প্রতিনিয়ত সয়াবিন মিল আমদানি করে আসছে, সেখানে সয়ামিল রফতানির সিদ্ধান্ত দেশের জন্য আত্মঘাতী। তাই সয়াবিন রফতানি বন্ধের পাশাপাশি মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এমবিএম আমদানি পুনরায় শুরু করার দাবি জানান তিনি।
বিডিএফএ সভাপতি খামার ও খুচরা পর্যায় তরল দুধের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ এবং বাজারজাত নিশ্চিত করার দাবি জানান। পাশাপাশি হিমায়িত মহিষের মাংস আমদানি বন্ধর আহ্বানও জানান তিনি। তিনি বলেন, পশুখাদ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে উপজেলা পর্যায়ে টিসিবির মাধ্যমে পশুখাদ্য পৌঁছে দিতে হবে। পশুখাদ্য ব্যবসায়ী সিন্ডিকেশন বন্ধ করে কঠোর নজরদারির আওতায় আনতে হবে। জরুরি শিশু খাদ্য নয় বরং বাল্ক ফিল্ড মিল্ক নামে নিম্ন মানের গুঁড়া দুধ আমদানি বন্ধ করে দেশীয় শিল্পের দিকে নজর দিতে হবে। ফর্মুলা মিল্কের ওপর আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে সুলভ মূল্যে শিশুখাদ্য নিশ্চিত করতে হবে।
বিডিএফএ সভাপতি বলেন, দুগ্ধ ও মাংস খামারের বিদ্যুৎ ও পানির বিল বাণিজ্যিক বিলের আওতায় থাকার কারণে এসবের উৎপাদন খরচ অত্যধিক। যেখানে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো ভর্তুকির মাধ্যমে দেশীয় শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিল এবং পানির বিল কৃষির আওতায় আনার দাবি মোটেই অযৌক্তিক নয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা জানান, নিজ দেশের শিল্প ও কৃষি স্বার্থ রক্ষায় দেশের সরকার আমদানিযোগ্য বিভিন্ন পণ্যের ওপর নানা ধরনের শুল্ক আরোপ করার মাধ্যমে আমদানি নিরুৎসাহিত করে থাকে। এমনকি অনেক সময় রফতানিও বন্ধ করে দেয়। ভারতেও অভ্যন্তরীণ সংকট ও মূল্য বৃদ্ধি পেলে চাল, পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্যের রফতানি বন্ধ করে দেয়া হয়; অথচ আমাদের দেশে শিল্পের স্বার্থে রফতানি উন্মুক্ত করে দিয়ে কার্যত দেশীয় ডিম, দুধ, মাছ, মাংস ও ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এ সময় অতি দ্রুত সয়াবিন রফতানি বন্ধ করে দেশীয় শিল্পকে রক্ষার জন্য সরকারের দাবি জানান বক্তারা।