মুনীমের স্বপ্নযাত্রা
বিপিএলে দ্যুতি ছড়ানো পারফরম্যান্সের পর তাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ডাক পাবেন এমনটা শোনা যাচ্ছিল। সব কানে যাচ্ছিল মুনীম শাহরিয়ারের। কিন্তু আনুষ্ঠানিক ফোনের অপেক্ষায় ছিলেন। সেই ফোনটা রোববার সন্ধ্যায় করেছিলেন ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের সহকারী ম্যানেজার শাহরিয়ার নাফিস।
ওপাশ থেকে যখন শুনছিলেন, ‘কনগ্রাচুলেশন। তুমি জাতীয় দলের টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে সুযোগ পেয়েছ। তোমার জার্সি নম্বর ও সাইজ কতো….।’ তখন তার আনন্দের শেষ নেই। প্রিয় বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে খেলবে জাতীয় দলে। সেই স্বপ্নটি মুনীম পূরণ করেছেন।
বাবার স্বপ্ন পূরণের আনন্দেই দিশেহারা ময়মনসিংহের তরুণ। সাবেক ক্রিকেটারের থেকে যখন খবরটা শুনলেন তখন বাড়ির বাইরে ছিলেন। বাড়িতে পৌঁছে সবার আনন্দে অশ্রুসিক্ত মুনীম, ‘ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিলো জাতীয় দলে খেলবো। মাঝে তো অনেক হতাশাজনক সময় পার করেছি। আমাকে ফিরে আসার পেছনে যারা কাজ করেছেন সবাইকে অনেক বেশি ধন্যবাদ।’
ক্রিকেটার মুনীমের ক্রিকেটার হওয়া ও টিকে থাকার লড়াইয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমের রূপকার তার বাবা এইচএম নুরুজ্জামান। তিনি মুনীমের মধ্যে ক্রিকেটের বীজ বুনেছিলেন। নিজের আগ্রহে ছেলেকে নিয়ে গেছেন মাঠে। অনুশীলন করিয়েছেন, ক্রিকেট বুঝিয়েছেন। বয়সভিত্তিকের গন্ডি পেরিয়ে ক্যারিয়ার যখন আগাচ্ছিল না তখন মুনীম ক্রিকেট ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাবা তাকে মাঠে থেকে ফেরাননি। ছেলেকে সাহস দিয়েছেন। পেছনের ব্যর্থতা ঝেরে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দিয়েছেন।
সেই গল্প শোনালেন মুনীম, ‘বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলার পর খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। পরপর দুই বছর স্ট্যান্ডবাই ছিলাম, ২০১৪ ও ২০১৬ সালে। ময়মনসিংহে প্রিমিয়ার লিগও ধারাবাহিক হচ্ছিল না। তাতে আমার খেলার পরিসরও কমে যাচ্ছিল। ঢাকা লিগে দল পেলেও কখনো সুযোগ পেতাম কখনো পেতাম না। সব মিলিয়ে আমি নিজেও হতাশ ছিলাম। খেলা ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাবা আমাকে এই পথে থাকতে বলেন। বলেন লেগে থাকতে। এগিয়ে যেতে। আরো পরিশ্রম করতে। তার কারণেই আজ আমি এই পর্যায়ে।’
শুধু বাবা নন মুনীম কৃতজ্ঞচিত্তে আনন্দময় মুহূর্তে স্মরণ করলেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের দল আবাহনী লিমিটেড ও দলটির কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনকে। তাদের নিয়ে আলাদা করে বললেন, ‘সর্বশেষ ঢাকা লিগে আমি আবার ট্র্যাকে ফিরি। সুজন ভাই আমাকে সুযোগ দিলেন। মুশফিক ভাই, শান্ত ভাই আমাকে নতুন করে শুরু করতে বললেন। আমিও তাদের অনুপ্রেরণায় আশা দেখা শুরু করলাম। কয়েকটি ম্যাচে ভালো করার পর বুঝলাম ক্রিকেটেই আমার ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব।’
তবে বিপিএলে শুরুতে দল না পেয়ে হতাশ হয়েছিলেন মুনীম। প্লেয়ার্স ড্রাফটে ছয় দলের কেউ তার প্রতি আগ্রহ দেখায়নি। ড্রাফটের পর খালেদ মাহমুদ তাকে দলে নেন। কিন্তু মাঠে খেলা গড়াতেই তার ভাগ্য আকাশে কালো মেঘ। কোভিড হানায় সপ্তাহ খানেক পিছিয়ে যান। কিন্তু একবার সুযোগ পাওয়ার পর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ফরচুন বরিশালের হয়ে ৬ ম্যাচে ১৭৮ রান করেছেন ১৫২ স্ট্রাইক রেটে। নির্ভীক, আগ্রাসন, নিখুঁত টাইমিং, প্লেসমেন্ট, আত্মবিশ্বাস আর বোলারদের মনোবল ও পরিকল্পনা ভেস্তে দেওয়ার অনন্য গুণ তার ব্যাটিংয়ে।
টি-টোয়েন্টি মানানসই এই ব্যাটসম্যান জাতীয় দলে পাওয়া সুযোগটি পাকাপাকি করতে চান, ‘এখন স্কোয়াডে সুযোগ পেয়েছি, যদি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাই তাহলে জায়গাটাকে ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ থাকবে। আমি আসলে আর হারিয়ে যেতে চাই না। কারণ জানি জায়গাটা ধরে রাখা আরও বেশি কঠিন।’