বাড়ল দুগ্ধপণ্যের দাম

স্টাফ রিপোর্টার

আন্তর্জাতিক নিলামে আবারো বেড়েছে দুগ্ধপণ্যের দাম। এ নিয়ে টানা তিন নিলামে ৪ শতাংশ করে দাম বাড়ল। শীর্ষ আমদানিকারক দেশগুলোয় অতিরিক্ত চাহিদা, জাহাজীকরণ প্রতিবন্ধকতা দাম বাড়াতে সহায়তা করছে। এছাড়া গত বছরই বিশ্বজুড়ে দুধ উৎপাদন কমতে শুরু করে। চলতি বছরও সংকট অব্যাহত আছে। তীব্র সংকটের কারণে আগামী মাসগুলোয় দাম আরো বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

গ্লোবাল ডেইরি ট্রেডের (জিডিটি) সর্বশেষ নিলামে দুগ্ধপণ্যের মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫১৬ পয়েন্টে। ২০১৩ সালের পর সূচকে এমন উত্থান আর দেখা যায়নি। সর্বশেষ জিডিটি নিলামে দুগ্ধপণ্যের দাম বেড়েছে ৪ দশমিক ২ শতাংশ। প্রতি টনের গড় মূল্য স্থির হয়েছে ৪ হাজার ৮৪০ ডলারে। এবারের নিলামে সর্বোচ্চ ৩১ হাজার ৩২ টন দুগ্ধপণ্য সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে বিক্রি হয়েছে ২৭ হাজার ৭২৬ টন। নিলামে ১৮০ জন ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এর মধ্যে বিজয়ী হয়েছে ১১৬ জন।

এনজেডএক্স ডেইরি ম্যানেজার স্টুয়ার্ট ডেভিসন বলেন, এ মূল্যবৃদ্ধি বিশ্ববাজার আরো অস্থিতিশীল করে তুলবে। এরই মধ্যে ফিউচার মার্কেট ও দুধের মূল্যের পূর্বাভাস বাড়ানো হয়েছে।

এবারের নিলামে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ননিবিহীন গুঁড়ো দুধের (এসএমপি) দাম। প্রতি টনের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৯৫ ডলার, যা আগের নিলামের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি। বৃদ্ধির দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মাখন। পণ্যটির দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ১ শতাংশ। প্রতি টন বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৬৮৬ ডলারে।

এদিকে ননিযুক্ত গুঁড়ো দুধের (ডব্লিউএমপি) দাম ৪ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পণ্যটি টনপ্রতি লেনদেন হয়েছে ৪ হাজার ৫০৩ ডলারে। অন্যদিকে চেডার পনিরের দাম ৩ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে টনপ্রতি ৫ হাজার ৮৮১ ডলারে উন্নীত হয়েছে। ল্যাকটোজের দাম ৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৬০৯ ডলারে পৌঁছেছে। প্রতি টন অ্যানহাইড্রাস মিল্ক ফ্যাট বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৮৮৯ ডলারে। আগের নিলামের তুলনায় পণ্যটির দাম ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। এবারের নিলামে মাখনযুক্ত গুঁড়ো দুধ ও সুইট হুই মিল্ক পাউডার প্রস্তাব করা হয়নি।

স্টুয়ার্ট ডেভিসন বলেন, এ নিয়ে টানা তিনবার দুগ্ধপণ্যের দাম ৪ শতাংশ করে বেড়েছে। গত ছয় সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। এবার ননিযুক্ত গুঁড়ো দুধের দাম ২০১৩ সালে মাঝামাঝি উচ্চতায় পৌঁছেছে। এটি গত বছরের মার্চের মূল্যবৃদ্ধিকেও ছাড়িয়ে গেছে। দুগ্ধপণ্যের দাম আরো বাড়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন এ বিশ্লেষক।

বৈশ্বিক নিলামে সবচেয়ে বেশি দুগ্ধপণ্য সরবরাহ করে ওশেনিয়া অঞ্চল। এছাড়া দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলোর সরবরাহও থাকে ভরপুর। কিন্তু গত ছয় মাসে সরবরাহ আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক কমেছে। ফলে শীর্ষ ভোক্তা দেশগুলোর মাঝে সরবরাহ নিশ্চিতে প্রতিযোগিতা তীব্র হয়ে উঠেছে।

এদিকে বিশ্বজুড়ে দুগ্ধপণ্যের চাহিদা বাড়তে থাকায় কমছে মজুদ। সর্বশেষ নিলামে বরাবরের মতোই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে ডব্লিউএমপি ও এসএমপি। আর এসব পণ্যের শীর্ষ ক্রেতা ছিল চীন। দুই বছর ধরে দেশটি রেকর্ড পরিমাণ দুগ্ধপণ্য আমদানি করেছে। এমন অস্বাভাবিক চাহিদার কারণেই দাম হু-হু করে বাড়ছে। বিশ্লেষকদের প্রত্যাশা, বছরের শেষ দিকে চাহিদা কিছুটা কমলেও বার্ষিক চাহিদার হার ঊর্ধ্বমুখীই থাকবে। তবে চলতি বছরও দুগ্ধপণ্যের সরবরাহ থাকবে কমতির দিকে। প্রধান আমদানিকারক দেশগুলো বর্তমানে দুগ্ধপণ্যের মজুদ বাড়ানোর প্রতি জোর দিচ্ছে। উদ্দেশ্য আপত্কালীন ক্রমবর্ধমান চাহিদা মোকাবেলা করা। এছাড়া জাহাজীকরণ বিলম্বের কারণেও আগেভাগে দুগ্ধপণ্য সংগ্রহ করে রাখছে এসব দেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *