এলএনজির বাণিজ্য শ্লথ হয়ে পড়ার আশঙ্কা
চলতি বছর তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গত বছর এশিয়ায় শক্তিশালী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার ফলে জ্বালানি পণ্যটির বাণিজ্যে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছিল। কিন্তু এ বছর তা কমে ৪ শতাংশে নামতে পারে। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ)।
প্রান্তিকভিত্তিক গ্যাসের বাজার প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, ২০২১ সালে এশিয়ায় এলএনজি চাহিদা ছিল ঊর্ধ্বমুখী। তবে এ বছর তা মন্দার মুখে থাকবে। অন্যদিকে খরায় বিপর্যস্ত লাতিন আমেরিকার দেশগুলোয় জ্বালানি পণ্যটির আমদানি কমতে পারে।
দ্য ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ অব লিকুইফায়েড ন্যাচারাল গ্যাস ইম্পোর্টার্স জানায়, ২০২০ সালে এলএনজির বৈশ্বিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৩৫ কোটি ৬০ লাখ টন। আইইএর প্রাক্কলন অনুযায়ী, গত বছর বাণিজ্য ৬ শতাংশ বেড়ে ৩৭ কোটি ৭০ লাখ টনে পৌঁছে। তবে চলতি বছর প্রবৃদ্ধির হার থাকবে কম। বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৩৯ কোটি ২০ লাখ টনে।
প্রতিবেদনে আইইএ বলছে, চলতি বছর এলএনজি আমদানিতে নিট প্রবৃদ্ধির পুরোটাই আসবে এশিয়া থেকে। এ সময় চীন জ্বালানি পণ্যটির সবচেয়ে বড় আমদানিকারক দেশে পরিণত হবে। যদিও দেশটির আমদানি প্রবৃদ্ধির হার কমে ৯ শতাংশে নামতে পারে। কারণ চীন রাশিয়া থেকে সরাসরি পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে দেশটিতে সর্বোপরি গ্যাসের চাহিদা প্রবৃদ্ধির গতিও মন্থর।
সংস্থাটি জানায়, গত বছর ভারতের এলএনজি আমদানি সাময়িকভাবে কমে গিয়েছিল। তবে চলতি বছর প্রক্ষেপিত আমদানি ২০২০ সালের পর্যায়ে ফিরতে পারে। আমদানিতে প্রবৃদ্ধি আসতে পারে ১২ শতাংশ।
এদিকে এশিয়ার দেশগুলোয় এলএনজির চাহিদা মহামারীপূর্ব অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে। কিন্তু এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়েনি পণ্যটির উৎপাদন। ফলে আমদানি সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে এ অঞ্চলের দেশগুলো। এতে চলতি বছর এশিয়ায় এলএনজির প্রবাহ ২৭ শতাংশ বাড়তে পারে।
অন্যদিকে এ বছর ইউরোপের বাজারে এলএনজি আমদানিতে ঊর্ধ্বমুখিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আইইএ। আকাশচুম্বী চাহিদা এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাখবে। তবে আমদানি ২০১৯-২১ সালের তুলনায় বাড়ার সম্ভাবনা নেই।
গ্যাস ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইউরোপের তথ্যানুুযায়ী, ইউরোপে গ্যাসের মজুদ স্মরণকালের সর্বনিম্নে অবস্থান করছে। বর্তমানে সক্ষমতার মাত্র ৩৯ শতাংশ মজুদ রয়েছে।
আইইএ বলছে, চলতি বছর মধ্যপ্রাচ্যে ১১ শতাংশ এলএনজি আমদানি প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা রয়েছে। মূলত কুয়েতে নতুন করে আল-জোউর নামে একটি টার্মিনাল তৈরি হওয়ায় এ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। নতুন আমদানিকারক দেশ ঘানা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও সেনেগালে জরুরি প্রয়োজনের কারণে আফ্রিকা মহাদেশেও আমদানি ঊর্ধ্বমুখী থাকবে।
চলতি বছর এলএনজি রফতানি প্রবৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেবে উত্তর আমেরিকা। এলএনজির বৈশ্বিক নিট সরবরাহ বৃদ্ধিতে অঞ্চলটি ৭৫ শতাংশ অবদান রাখবে বলে জানিয়েছে আইইএ।
এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে জ্বালানি পণ্যটির উৎপাদন বাড়বে ১৬ শতাংশ। সাবিন পাস ট্রেন ৬ ও ক্যালকাসিউ টার্মিনালের মাধ্যমে দেশটি রফতানি বাড়াবে। বিদায়ী বছরের ডিসেম্বরে বিশ্বের শীর্ষ এলএনজি রফতানিকারক দেশে পরিণত হয় যুক্তরাষ্ট্র। জ্বালানি সংকটে বিপর্যস্ত ইউরোপে সরবরাহের পরিমাণ অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বাড়ানোয় রফতানিতে শীর্ষে থাকা কাতার ও অস্ট্রেলিয়াকে ছাড়িয়ে যায় দেশটি। চলতি বছরও এ দুই দেশকে পেছনে ফেলে শীর্ষ এলএনজি রফতানিকারকের মুকুট ধরে রাখতে সক্ষম হবে দেশটি।