নিজেদের ওপর সম্পদ কর আরোপের আহ্বান অতিধনীদের
মহামারীতে বিশ্বজুড়ে আরো প্রকট হয়েছে সম্পদের ব্যবধান। কভিডজনিত বিধিনিষেধে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে আরো দরিদ্র হয়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। অন্যদিকে ঘরবন্দি এ সময়েও ফুলে-ফেঁপে উঠেছে ধনীদের সম্পদের পরিমাণ। এ অবস্থায় নিজেদের ওপর সম্পদ কর আরোপের আহ্বান জানিয়েছে শতাধিক অতিধনীর একটি দল। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ভার্চুয়াল সম্মেলনে বিশ্বজুড়ে সরকারগুলোর প্রতি তারা আবেদন জানান, ‘আমাদের আরো কর দিতে বাধ্য করুন’। খবর রয়টার্স।
নিজেদের ‘পেট্রিয়টিক মিলিয়নেয়ারস’ (দেশপ্রেমিক মিলিয়নেয়ার) আখ্যা দেয়া দলটি বলেছে, বর্তমানে কভিডের বিপর্যয় কাটিয়ে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে ত্বরান্বিত করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অতিধনীদের অংশ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে না। ধনীদের এখন আরো বেশি অবদান রাখতে হবে।
স্বাক্ষরকারীরা একটি খোলা চিঠিতে বলেছেন, মিলিয়নেয়ার হিসেবে আমরা জানি যে বর্তমান কর ব্যবস্থা ন্যায্য নয়। গত দুই বছরে বিশ্ব এক বিপর্যয় পার করছে। তার পরও মহামারী চলাকালীন আমরা আমাদের সম্পদ বাড়তে দেখছি। তবে আমরা কেউই সততার সঙ্গে বলতে পারব না যে আমরা ন্যায্য হারে কর দিই।
মহামারীর প্রথম বছরে বিশ্বজুড়ে লকডাউনের মতো বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। ফলে ওই বছর বিশ্ব অর্থনীতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ মন্দার মুখোমুখি হয়। এমন পরিস্থিতিতেও ২০২০ সালে ধনকুবেরদের সম্পদ বিস্ময়করভাবে বেড়েছে। এজন্য ১০২ জন মিলিয়নেয়ার ও বিলিয়নেয়ারের দলটি মহামারীর শুরু থেকেই অতিধনীদের ওপর উচ্চ কর আরোপের আহ্বান জানিয়ে আসছে। যদিও এটি ১৩০টি দেশকে একটি চুক্তিতে পৌঁছতে উৎসাহিত করেছে। এ চুক্তির অধীনে বিশ্বের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর সর্বনিম্ন ১৫ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। এ চুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর ফাঁকি এড়ানো কঠিন করে তুলেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত অক্সফামের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, গত দুই বছরে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ১০ জনের সম্পদে ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলার যুক্ত হয়েছে। এ হিসাবে প্রতি সেকেন্ডে তাদের সম্পদ বেড়েছে ১৫ হাজার ডলার।
চিঠিতে মার্কিন বিনোদন কোম্পানি ডিজনির উত্তরাধিকারী অ্যাবিগেল ডিজনি ও ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট নিক হ্যানাউয়ারের স্বাক্ষর রয়েছে। সপ্তাহব্যাপী দাভোস সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে তারা বলেন, আপনি একটি পাবলিক ফোরামে উত্তর খুঁজে পাবেন না। তবে কোনো সন্দেহ নেই যে আপনিও বৈশ্বিক অসমতা সমস্যার অংশ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের একজন মুখপাত্র বলেন, করের ন্যায্য অংশ প্রদান করা ফোরামের নীতিগুলোর মধ্যে একটি। সুইজারল্যান্ড সম্পদ করের একটি ভালো মডেল হতে পারে বলে জানান তিনি।
ইউরোপ ও সম্প্রতি যুক্ত হওয়া দক্ষিণ আমেরিকার হাতেগোনা কয়েকটি দেশ ছাড়া বেশির ভাগ দেশেই ধনীদের রিয়েল এস্টেট, স্টক বা শিল্পকর্মের মতো সম্পদের ওপর বার্ষিক কর দিতে হয় না। কেবল সম্পদ বিক্রি করতে গেলে তারা করের মুখোমুখি হন। অক্সফাম ও অন্যান্য অলাভজনক সংস্থার সঙ্গে পেট্রিয়টিক মিলিয়নেয়ারসের পরিচালিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, ৫০ লাখ ডলারের সম্পদ থাকা ধনীদের ওপর ২ শতাংশ থেকে শুরু করে অতিধনীদের জন্য এ সম্পদ কর ৫ শতাংশ পর্যন্ত আরোপ করা যেতে পারে। এ মাধ্যমে ২ লাখ ৫২ হাজার কোটি ডলার সংগ্রহ হবে। বিপুল পরিমাণ এ অর্থ ২৩০ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যের বাইরে নিয়ে আসতে পারে। পাশাপাশি এ অর্থ নিম্ন আয়ের দেশে বসবাসকারী ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সুরক্ষার নিশ্চয়তা তৈরি হবে।
গত বছর বিশ্বব্যাংকও একটি নিবন্ধে বিশ্বজুড়ে সম্পদ কর আরোপের আহ্বান জানিয়েছিল। দেশগুলোকে বৈষম্য কমাতে এবং কভিডজনিত প্রণোদনায় খালি হওয়া কোষাগার পূরণ করতে এবং সামাজিক আস্থা পুনরুদ্ধারে সহায়তার জন্য সম্পদ কর আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করার আহ্বান জানায় বৈশ্বিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি। যদিও মহামারী শুরুর পর আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়া ছাড়া অন্য কোনো দেশে সম্পদ কর আরোপ করা হয়নি।