সয়াবিন তেলের বৈশ্বিক বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকবে

স্টাফ রিপোর্টার

গত বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। সংকটের কারণে কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাসের বাজারও ছিল চড়া। ফলে বিকল্প হিসেবে কদর বাড়ে সয়াবিন থেকে উৎপাদিত বায়োডিজেলের। এছাড়া পরিচ্ছন্ন জ্বালানি হিসেবেও পণ্যটি সমাদৃত। ব্যবসায়ীরা কম খরচে জ্বালানি উৎপাদনের লক্ষ্যে বিপুল পরিমাণ সয়াবিন তেল আমদানি শুরু করেন। ফলে গত বছর এ তেলের গড় দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে যায়। চলতি বছরও বাজারদরে ঊর্ধ্বমুখিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনডেক্স বক্সের এক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি বছর সয়াবিন তেলের আন্তর্জাতিক বাজারদর প্রায় ৪ শতাংশ বাড়তে পারে। সে হিসাবে প্রতি টনের গড় দাম ১ হাজার ৪২৫ ডলারে পৌঁছবে।

প্রতিষ্ঠানটির গবেষকরা বলছেন, বায়োডিজেল উৎপাদনে সয়াবিন তেলের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। জ্বালানি পণ্যটি উৎপাদনে সয়াবিন তেলের বৈশ্বিক চাহিদা বাড়ছে। বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলোয় চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, গত বছর সয়াবিন তেলের বার্ষিক গড় দাম আগের বছরের তুলনায় ৬৫ শতাংশ বাড়ে। প্রতি টনের মূল্য ৮৩৮ থেকে ১ হাজার ৩৮৫ ডলারে উন্নীত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দ্রুত দাম বেড়েছে বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর)। এক্ষেত্রে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে দক্ষিণ আমেরিকা। এ অঞ্চলে বৈরী আবহাওয়াজনিত কারণে উৎপাদন ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে শীর্ষ ব্যবহারকারী দেশগুলো সরবরাহ নিশ্চিতে বিপাকে পড়ে। বিশেষ করে গত বছর চীনে পণ্যটির শক্তিশালী চাহিদা তৈরি হয়। পাশাপাশি বিশ্বে অতিরিক্ত জাহাজ ভাড়াও মূল্যবৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। ভারত বিশ্বের শীর্ষ সয়াবিন তেল আমদানিকারকের তকমা ধরে রেখেছে। এক্ষেত্রে শীর্ষ সরবরাহকারী দেশ হিসেবে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে আর্জেন্টিনা।

ইনডেক্স বক্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে সয়াবিন তেলের বৈশ্বিক আমদানি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ১ কোটি ৩০ লাখ টনে পৌঁছে। ওই সময় টানা দ্বিতীয় বছরের মতো পণ্যটির আমদানি বাড়ে। এর আগে তিন বছর ধরে নিম্নমুখী ছিল সয়াবিন তেল আমদানি। ২০২০ সালে বিশ্বে ১০৩ কোটি ডলারের সয়াবিন তেল আমদানি হয়।

ওই বছর শীর্ষ আমদানিকারক হিসেবে ভারত ৩৭ লাখ টন সয়াবিন তেল আমদানি করে, যা বৈশ্বিক সরবরাহের ২৮ শতাংশ। ৯ লাখ ৬৩ হাজার টন আমদানির মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় শীর্ষে উঠে এসেছে চীন। এছাড়া আলজেরিয়া ৬ লাখ ৭০ হাজার বাংলাদেশ ৬ লাখ ৬৬ হাজার টন সয়াবিন তেল আমদানি করেছে। বৈশ্বিক আমদানির ১৭ শতাংশই গিয়েছে এসব দেশে। অন্যদিকে মরোক্কো ৫ লাখ ৪৭ হাজার টন, মৌরিতানিয়া ৫ লাখ ৩৭ হাজার, পেরু ৫ লাখ ২১ হাজার, দক্ষিণ কোরিয়া ৩ লাখ ৯০ হাজার, কলম্বিয়া ৩ লাখ ৭৮ হাজার, ভেনিজুয়েলা ৩ লাখ ৭৩ হাজার, মিসর ২ লাখ ৪৩ হাজার, পোল্যান্ড ২ লাখ ৪৩ হাজার ও নেপাল ২ লাখ ১৫ হাজার টন সয়াবিন তেল আমদানি করে।

শীর্ষ রফতানিকারক হিসেবে আর্জেন্টিনা ২০২০ সালে ৫৩ লাখ টন সয়াবিন তেল রফতানি করে, যা বৈশ্বিক রফতানির ৪২ শতাংশ। ১২ লাখ ৩৮ হাজার টন রফতানির মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় স্থান দখল করে আছে যুক্তরাষ্ট্র। ব্রাজিল ১১ লাখ ১০ হাজার টন, প্যারাগুয়ে ৬ লাখ ৩১ হাজার, নেদারল্যান্ডস ৬ লাখ ১৫ হাজার ও রাশিয়া ৬ লাখ ১১ হাজার টন রফতানি করেছে। বৈশ্বিক রফতানির ৩৩ শতাংশই সরবরাহ করেছে এসব দেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *