রেকর্ড পণ্য আমদানির পথে লস অ্যাঞ্জেলেস বন্দর
মহামারীর শুরু থেকেই বিশ্বজুড়ে দেখা দেয় সরবরাহ চেইনের জটিলতা। একদিকে কভিডজনিত বিধিনিষেধে বাধাগ্রস্ত হয় উৎপাদন কার্যক্রম। অন্যদিকে দেখা দেয় তুমুল ভোক্তা চাহিদা। ফলে মার্কিন বন্দরগুলোয় তৈরি হয় দীর্ঘ পণ্যজটের। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ২৪ ঘণ্টা কার্যক্রম পরিচালনাও শুরু করে লস অ্যাঞ্জেলেস বন্দর। তার পরও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে বন্দরটির কর্তৃপক্ষ। এমন পরিস্থিতিতেও চলতি বছর রেকর্ড পরিমাণ পণ্য আমদানি হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ব্যস্ততম এ বন্দর দিয়ে। খবর এপি।
লস অ্যাঞ্জেলেস বন্দরের নির্বাহী পরিচালক জিন সেরোকা বলেন, মার্কিন ভোক্তাদের টেকসই ও তুমুল চাহিদা আমাদের আমদানির পরিমাণকে নতুন মাত্রায় ঠেলে দিচ্ছে। ২০২১ সালে আমরা সর্বকালের সর্বোচ্চ আমদানির পথে রয়েছি।
বন্দরের মালবাহী কনটেইনারগুলোকে দ্রুত খালাস করা হচ্ছে। তার পরও জটের কারণে বিপুল সংখ্যক জাহাজকে লং বিচ বা আশপাশের বন্দরগুলোয় পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। দুই মাস আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন লস অ্যাঞ্জেলেস বন্দরে ২৪ ঘণ্টা কার্যক্রম চালু রাখতে একটি চুক্তির ঘোষণা দেন। তার পরও বন্দরটির সাতটি কনটেইনার টার্মিনালের মধ্যে কেবল একটি লক্ষ্য অনুযায়ী কাজ করতে পারছে।
সেরোকা বলেন, চলতি বছর লস অ্যাঞ্জেলেস বন্দর প্রায় ৫৫ লাখ ইউনিট কার্গো কনটেইনার আমদানি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। কার্গো কনটেইনারের এ সংখ্যা ২০১৮ সালের রেকর্ড পর্যায়ের চেয়েও ১৩ শতাংশ বেশি। কার্গো প্রবাহকে ত্বরান্বিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ সত্ত্বেও নভেম্বরে মোট আমদানি ২০২০ সালের একই সময়ের তুলনায় কম। এর আংশিক কারণ হলো অনির্ধারিত ও ছোট জাহাজ।
তিনি বলেন, নভেম্বরে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় পণ্যের গুদামজাত সূচক প্রায় ২ পয়েন্ট বেড়েছে এবং সরাসরি দোকানে বিক্রিযোগ্য পণ্যের সূচক কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। সরবরাহ চেইনে প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আমরা রেকর্ড সংখ্যক কার্গো রফতানিও করেছি। এক্ষেত্রে আমাদের আরো উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। তবে দেশের অভ্যন্তরেই তুমুল চাহিদার কারণে সরবরাহের ক্ষেত্রে আমরা কিছুটা পিছিয়ে আছি।
আমদানিতে রেকর্ডের পথে থাকলেও লস অ্যাঞ্জেলেস বন্দরের রফতানিতে পতন অব্যাহত রয়েছে। গত ৩৭ মাসের মধ্যে ৩৩ মাসেই বন্দরটি দিয়ে পণ্য রফতানি সংকুচিত হয়েছে। এমন পতনের আংশিক কারণ হিসেবে সেরোকা ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে শুরু হওয়া চীনের সঙ্গে বাণিজ্য উত্তেজনাকে দায়ী করেছেন। আবার ডলারের ঊর্ধ্বমুখী দাম মার্কিন পণ্যগুলোকে কম প্রতিযোগিতামূলক করে তুলেছে। ফলে পণ্যের পরিবর্তে অনেক খালি কনটেইনার এশিয়ার উদ্দেশে বন্দর ছেড়ে যাচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন সবচেয়ে ব্যস্ততম বন্দরটিতে আমদানি পণ্য আটকে থাকা কমেছে। ডকগুলোয় নয়দিন বা তার বেশি সময় ধরে আটকে থাকা আমদানি কনটেইনারের সংখ্যা ৫৬ শতাংশ কমে গেছে। এভাবে কনটেইনার আটকে থাকা নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ জরিমানার হুমকি দেয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়েছে।
বন্দরটির নির্বাহী পরিচালক বলেন, বর্তমানে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো ৭০ হাজারেরও বেশি খালি কনটেইনার টার্মিনাল বা বন্দরের জায়গাগুলোয় পড়ে আছে। বন্দর কর্মকর্তারা শিপিং কোম্পানিগুলোকে এ জট দূর করার জন্য বারবার অনুরোধ করে যাচ্ছেন। কোম্পানিগুলো পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হলে আমরা আর্থিক জরিমানার বিষয়টিও বিবেচনা করছি।
বন্দরের কার্যক্রম উন্নত হওয়ার পরও জাহাজের জট অব্যাহত থাকা নিয়ে সেরোকা বলেন, মার্কিন ভোক্তাদের উচ্চ চাহিদার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সরবরাহ চেইনে বাধা ও জটিলতার কারণে এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে বলেও ইংগিত দেন তিনি।