প্রবৃদ্ধির পথে বৈশ্বিক প্লাটিনাম উত্তোলন
বিশ্ববাজারে কদর বাড়ছে স্বর্ণের চেয়েও মূল্যবান ধাতু প্লাটিনামের। শক্তিশালী চাহিদা থাকায় প্লাটিনামসমৃদ্ধ দেশগুলো উত্তোলন বাড়াচ্ছে। গত বছর কভিড-১৯ মহামারীর প্রকোপ দেখা দিলে অচলাবস্থা দেখা দেয় ধাতুটির উত্তোলন খাতে। বিশেষ করে শীর্ষ প্লাটিনাম উত্তোলক দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় খনিজ সম্পদ উত্তোলন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে তলানিতে নামে মূল্যবান এ ধাতুর বৈশ্বিক উত্তোলন। তবে এ বছর পরিস্থিতি ইতিবাচক দিকে মোড় নিয়েছে। গত বছরের ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বৈশ্বিক প্লাটিনাম উত্তোলন।
অলংকার তৈরিতে প্লাটিনামের ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ করা যায়। শিল্প খাত ও গ্লাস উৎপাদনেও ধাতুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এছাড়া কম্পিউটার হার্ডডিস্কসহ প্রযুক্তির নানা খাতে ধাতুটির কদর রয়েছে। বিনিয়োগের জনপ্রিয় একটি মাধ্যমও প্লাটিনাম। তবে বর্তমানে ধাতুটির সবচেয়ে বেশি চাহিদা তৈরি হয়েছে অটোমোবাইল নির্মাণ খাতে। কার, বাস, ট্রাকসহ যানবাহনের ইঞ্জিন থেকে কার্বন নিঃসরণ রোধে ব্যবহূত অটো-ক্যাটালিটিকের প্রধান উপকরণ প্লাটিনাম। প্রতি বছর বৈশ্বিক চাহিদার ৫০ শতাংশ প্লাটিনামই অটো-ক্যাটালিটিক তৈরিতে ব্যবহার হয়। ফলে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ধাতুটির অবদান অনস্বীকার্য হয়ে উঠছে।
বিশ্বের শীর্ষ তথ্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ডাটা সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানায়, চলতি বছর প্লাটিনামের বৈশ্বিক উৎপাদন গত বছরের তুলনায় ২১ দশমিক ৯ শতাংশ বাড়তে পারে। অটোমোবাইল ও অলংকার খাত ঘুরে দাঁড়ানোয় প্লাটিনাম উত্তোলনের চাহিদা বেড়েছে। বছর শেষে ধাতুটির বৈশ্বিক উত্তোলন দাঁড়াবে ৬০ লাখ ৩০ হাজার আউন্সে।
গ্লোবাল ডাটার খনিজ সম্পদবিষয়ক বিশ্লেষক বিনিথ বাজাজ বলেন, চলতি বছর অটোমোবাইল খাতে প্লাটিনামের চাহিদা সর্বাধিক বেড়েছে। চাহিদা বৃদ্ধির হার ২৭ দশমিক ১ শতাংশ। চক্রবৃদ্ধি বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার (সিএজিআর) ২ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে অলংকার খাতও উত্তোলন প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে। এ খাতে চলতি বছর প্লাটিনামের চাহিদা বাড়বে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
গ্লোবাল ডাটার গবেষণায় দেখা গেছে, প্লাটিনাম উত্তোলন বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে দক্ষিণ আফ্রিকা। মোট বৈশ্বিক উত্তোলনের ৭২ শতাংশই আসবে দেশটি থেকে। এছাড়া ১০ দশমিক ৪ শতাংশ রাশিয়া, ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিম্বাবুয়ে ও ৩ দশমিক ৯ শতাংশ প্লাটিনাম আসবে কানাডা থেকে।
বাজাজ বলেন, গত বছর কভিড-১৯ মহামারীর কারণে শীর্ষ প্লাটিনাম উত্তোলক দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় লকডাউনসহ নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। ফলে প্লাটিনাম উত্তোলনে ধস নামে। তবে এ বছর দেশটিতে প্লাটিনাম উত্তোলন ৩৪ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়তে পারে।
এদিকে চলতি বছর প্লাটিনামের বৈশ্বিক বাজারে বড় আকারের উদ্বৃত্ত থাকার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বাজারে সরবরাহের আধিক্য বজায় থাকবে আগামী বছরও। ফলে মূল্যবান ধাতুটির বাজারদর কমে আসবে। ওয়ার্ল্ড প্লাটিনাম ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিল (ডব্লিউপিআইসি) এ তথ্য জানিয়েছে।
সংস্থাটি চলতি বছরের মে মাসে প্লাটিনামের বৈশ্বিক ঘাটতির পূর্বাভাস দিয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি ইতিবাচক দিকে মোড় নেয়ায় সেপ্টেম্বরে ১ লাখ ৯০ হাজার আউন্স উদ্বৃত্তের পূর্বাভাস দেয়া হয়। তবে চলতি মাসে উদ্বৃত্ত পূর্বাভাস চমকপ্রদভাবে বাড়ানো হয়েছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, বছর শেষে প্লাটিনামের উদ্বৃত্ত থাকবে ৭ লাখ ৬৯ হাজার আউন্স। বছরের তৃতীয় প্রান্তিকেই (জুলাই-সেপ্টেম্বর) উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৯২ হাজার আউন্সে, যা প্রান্তিক ভিত্তিতে আট বছরের সর্বোচ্চ উদ্বৃত্ত। এদিকে আগামী বছর শেষে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়াবে ৬ লাখ ৩৭ হাজার আউন্সে।