শ্রীলংকার চা রফতানি কমল
চলতি বছরটা শ্রীলংকার চা শিল্পের জন্য খুব একটা সুখকরভাবে কাটছে না। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে দেশটিতে চা উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে শ্রীলংকায় পানীয় পণ্যটির উৎপাদন ১৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে। এর প্রভাব পড়েছে শ্রীলংকার চা রফতানি খাতেও।
বছরের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) দেশটি থেকে পানীয় পণ্যটির রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৫ লাখ কেজি কমে গেছে। এর ফলে বছর শেষে শ্রীলংকায় চা উৎপাদন ও দেশটি থেকে পানীয় পণ্যটির রফতানির লক্ষ্য পূরণ নিয়ে আশঙ্কায় ভুগছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। খবর ফিন্যান্সিয়াল ট্রিবিউন ও কলম্বো পোস্ট।
ফোর্বস অ্যান্ড ওয়াকারের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে শ্রীলংকা থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ২১ কোটি ২৩ লাখ কেজি চা রফতানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৫ লাখ কেজি কম। ২০১৭ সালের প্রথম নয় মাসে শ্রীলংকান রফতানিকারকরা মোট ২১ কোটি ৫৮ লাখ কেজি চা রফতানি করেছিলেন।
গত নয় মাসে চা রফতানি করে দেশটির রফতানিকারকদের সম্মিলিত আয় দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ২৬০ কোটি শ্রীলংকান রুপি (স্থানীয় মুদ্রা)। ২০১৭ সালের একই সময়ে শ্রীলংকান রফতানিকারকরা মোট ১৭ হাজার ৩৪০ কোটি রুপির চা রফতানি করেছিলেন।
সেই হিসাবে, এক বছরে চা রফতানি বাবদ দেশটির আয় কমেছে ৮০ কোটি শ্রীলংকান রুপি। এ সময় শ্রীলংকা থেকে তুরস্ক, ইরাক, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), রাশিয়া, লিবিয়া, সিরিয়া, আজারবাইজান, চীনসহ শতাধিক দেশে চা রফতানি হয়েছে।
চা রফতানিতে মন্দাভাবের পেছনে শ্রীলংকার পাহাড়ি অঞ্চলে বিদ্যমান খরা পরিস্থিতিকে চিহ্নিত করেছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। চলতি বছর শ্রীলংকায় বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। দেশটির বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র খরা। ভরা মৌসুমে (জুন-আগস্ট) খরার প্রকোপে শ্রীলংকার চা উৎপাদন খাতে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। পানীয় পণ্যটির উৎপাদন ১৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমেছে।
শ্রীলংকার রাষ্ট্রায়ত্ত চা বোর্ডের মহাপরিচালক এসএ সিরিওয়ার্দেনা জানান, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে শ্রীলংকায় সব মিলিয়ে ১ কোটি ৯৩ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ কম। ২০০১ সালের পর এটাই সেপ্টেম্বরে দেশটিতে চা উৎপাদনের সর্বনিম্ন পরিমাণ। এর মধ্য দিয়ে টানা চার মাস শ্রীলংকার চা উৎপাদন খাতে ধারাবাহিক মন্দাভাব বজায় রয়েছে। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে দেশটিতে পানীয় পণ্যটির সম্মিলিত উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ শতাংশ কমেছে।
ভরা মৌসুমে খরার প্রভাবে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় চলতি বছর শেষে শ্রীলংকায় চায়ের উৎপাদন ও রফতানি লক্ষ্য পূরণ নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে শ্রীলংকার প্লান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (পিএ) এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে শ্রীলংকায় লক্ষ্য অনুযায়ী ৩২ কোটি কেজি চা উৎপাদন সম্ভব হবে না। এর প্রভাব পড়বে পণ্যটির দাম ও রফতানিতে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাজারে শ্রীলংকান চায়ের দাম কয়েক গুণ বাড়তে পারে। একই সঙ্গে পণ্যটির রফতানিতেও মন্দাভাব দেখা দিতে পারে।
২০১৮ সালে শ্রীলংকা থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৩২ হাজার কোটি রুপির চা রফতানির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত চা বোর্ড। তীব্র খরায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কারণে চা রফতানির এ বার্ষিক লক্ষ্য অধরা থেকে যেতে পারে বলে মনে করছে পিএ। বর্তমানে দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। এ পরিস্থিতি আরো কিছুদিন চলমান থাকলে শ্রীলংকা থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে চা রফতানিতে সম্ভাব্য মন্দাভাব জোরালো হওয়ার আশংকা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সুনীল পোহল্লাদ।