২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত হবে। ২১০০ সালের বাংলাদেশ কেমন হবে আমরা সেই পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছি। যে শিশু এখন জন্ম নিলো বা আগামীতে জন্ম নেবে, তাদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য আমাদের সরকার কাজ করবে। আমি ছেলেমেয়েদের বলবো, সকলকে লেখাপড়া শিখতে হবে। তাহলে বাবা-মার নাম যেমন উজ্জ্বল হবে। তেমনি দেশের নামও উজ্জল হবে।’

শনিবার বিকালে বরগুনার তালতলী সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় আয়োজিত জনসভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে তালতলীর উন্নয়নের জন্য অনেকগুলো প্রকল্প উদ্বোধন করেন তিনি।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসময় বলেন, ‘আপনাদের কাছে আমি দোয়া চাই। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। যাকেই নৌকা মার্কা দেওয়া হবে, তাকেই ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন।’

জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই এখানে একটি জাহাজ নির্মাণ শিল্প ও জাহাজ ভাঙার কারখানা গড়ে তোলার ব্যবস্থা নিচ্ছি।

এই এলাকার মানুষের কর্মসংস্থার ব্যবস্থা হবে। এই অঞ্চলটা এতো সুন্দর, এতো চমৎকার জায়গা; অথচ এই এলাকার মানুষ সবসময় কষ্ট করেছে। আর কষ্ট করতে হবে না। সকলেই সুন্দর করে বাঁচতে পারবেন। আমরা সেই ব্যবস্থা করে দেবো।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব খারাপ ছিল। আমি টুঙ্গিপাড়া থেকে একসময় স্পিডবোটে করে বরগুনা এসেছি। এই তালতলী একটি ইউনিয়ন ছিল। আজকে সেই তালতলীকে আমরা উপজেলা করে দিয়েছি। আমি যখন প্রথমবার এখানে আসি মাত্র একটা পাকা দালান ছাড়া আর কিছু ছিল না। এখন এখানে সবই আছে। ইনশাল্লাহ আরও হবে। আজ আমরা অনেকগুলো প্রজেক্ট উদ্বোধন করলাম। এখানকার বাঁধগুলো সংস্কার করে জলোচ্ছ্বাস-ঘূর্ণিঝড় থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য প্রকল্প গ্রহণ নিয়েছি। এছাড়াও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করে দিয়েছি।’

সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-মাদকের কোনও স্থান নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যে জঙ্গিবাদ দমনে সক্ষম হয়েছি। মাদকের জন্য অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। আমরা মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি।

প্রত্যেকটি জেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম করে দেবো, যাতে খেলাধুলার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আমাদের ইসলাম ধর্মে জঙ্গিবাদের কোনও স্থান নেই। ইসলাম শান্তির ধর্ম। তাই জঙ্গিবাদ বা মাদককে প্রশ্রয় দেবেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই, শুধু রাজধানীর মানুষ সুখে থাকবে তা নয়, প্রত্যেকটা গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত সুবিধা পৌঁছাতে চাই। প্রত্যেকটা গ্রামে আমরা শহরের মতো সুবিধা নিশ্চিত করতে চাই। ঘরে বসে ইন্টারনেটে কাজ করে পয়সা উপার্জন করে মানুষ যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে সেজন্য লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রজেক্ট নিয়েছি। যুবসমাজের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক করেছি। আওয়ামী লীগ সরকার বর্গাচাষিদের বিনাসুদে ঋণের ব্যবস্থা করেছে। আমাদের কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের আগে কোনও স্বীকৃতি ছিল না। আমরা তাদের কারিকুলাম ঠিক করে সনদের ব্যবস্থা করেছি। যে সনদের মাধ্যমে তারা দেশে বিদেশে চাকরির সুযোগ পাবে। তারাও আমাদেরই সন্তান। তাদের জীবনমান উন্নত হোক আমরা সেটাই চাই।’

বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তাই উন্নয়নেও বিশ্বাস করে না। এতিমের সম্পদ চুরি করার অভিযোগে খালেদা জিয়া আজ জেলে। তার ছেলে তারেক জিয়া মানি লন্ডারিং, দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় আজ সাজাপ্রাপ্ত।’

এর আগে বরগুনার তালতলীতে ২১টি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রকল্পগুলো হচ্ছে- একটি ২৫০ শয্যার হাসপাতাল, বামনা ও বেতাগি উপজেলায় দুইটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, জেলা পাঠাগার, জেলা পুলিশ লাইনে নারী পুলিশ সদস্যদের জন্য একটি ব্যারাকের নির্মাণ কাজ এবং অন্যান্য প্রকল্প, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য হোস্টেলের সম্প্রসারণ, আমতলী থানা ভবন, বরগুনা সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিস, দোয়াতোলা ইউনিয়ন ভূমি অফিস (উপকূলীয়), হোসনাবাদ ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলার পর ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় বাঁধসমূহ মেরামত, বরগুনা সদরের এম বালিয়াতলী ডিএন কলেজ, পাথরঘাটায় সৈয়দ ফজলুল হক ডিগ্রি কলেজ ও আমতলীতে ইউনুস আলী খান ডিগ্রি কলেজ-এর চারতলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন কাম ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, তালতলীতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্র, বাকেরগঞ্জ- পাদ্রিশিবপুর- কাঁঠালতলী- সুবিদখালী- বরগুনা সড়ক সম্প্রসারণ কাজ, একটি সেতু, তালতলী উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, গৌরচন্না ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স, বামনা ও তালতলীতে একটি বাড়ি একটি খামার ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ভবন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *