পতিত জমিতে রেকর্ড পরিমাণ ধান উৎপাদন
নতুন জাতের নেরিকা আউশ দেশের মোট ধান উৎপাদনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মাত্র ১০০ দিনে এ ফসল ঘরে আসায় কৃষকরাও আগ্রহ সহকারে চাষাবাদে উদ্ভুদ্ধ হচ্ছেন। বোরো ধান কাটার পর আমন ধান লাগানোর আগ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন মাস জমি পতিত থাকে। এ সময় এবার নেরিকা আউশের ওপর ভর্তুকি দিয়ে চাষাবাদ করার আয়োজন করে কৃষি মন্ত্রণালয়।
ফলে যে সময় কৃষক জমি ফেলে রাখে সে সময় দেশে মোট ৮ লাখ ২৪ হাজার ৫২০ মন নেরিকা জাতের ধান উৎপাদন হয়েছে। এটা বাড়তি উৎপাদন যা কখনোই কৃষকরা করতো না। এ ছাড়া এবার ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আউশ ও নেরিকা আউশ মিলে ২৭ লাখ ৩৯ হাজার ২২৮ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে যা আউশ উৎপাদনে বাম্পার ফলন।
বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বোরো মৌসুম শেষ হয়ে আমন মৌসুম আসার আগ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন মাস জমি ফেলে রাখতো কৃষকরা। বিশেষ করে মতিয়া চৌধুরী কৃষিমন্ত্রী হওয়ার পর আউশ এবং নেরিকা আউশের ওপর দারুণ মনোযোগ দেন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আউশ ধানের উৎপাদন বাড়াতে দেশের ২ লাখ ৩৭ হাজার ক্ষদ্র্র ও প্রান্তিক কৃষককে বিনামূল্যে ৪০ কোটি টাকার বীজ ও রাসায়নিক সার দেওয়া হয়। দেশের ৬৪ জেলার কৃষকদের উফশী আউশের জন্য ৩২ কোটি ৩৩ লাখ ৫৩ হাজার ১৭০ টাকা এবং ৪০ জেলার কৃষকদের নেরিকা আউশ আবাদে সাত কোটি ২৯ লাখ ৩০ হাজার ৭৫ টাকা বীজ ও সার বিতরণ করা হয়। ফলে এবার আউশের উৎপাদনও বেড়ে যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আউশ ও নেরিকা আউশ মিলে ২৭ লাখ ৩৯ হাজার ২২৮ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে ১০ লাখ, ৭৫ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে ২৭ লাখ ৯ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। এ ছাড়া ১১ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমিতে নেরিকা আউশ ধান উৎপাদন হয়েছে ৩০ হাজার ১২৮ মেট্রিক টন। ফলে দেশে চালের মোট উৎপাদন সমৃদ্ধ করেছে আউশ।
বাংলাদেশ বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ । ২০১৮ সালে দেশে রেকর্ড পরিমাণ চাল উৎপাদন হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ৩ কোটি ৬২ লাখ ৭৯ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়েছে। দেশের জনসংখ্যা অনুযায়ী আমাদের খাদ্যের চাহিদা রয়েছে ২ কোটি ৯১ লাখ মেট্রিক টন। সে হিসাবে এবার উদ্বৃত্ত চাল রয়েছে ৭১ লাখ ৭৯ হাজার মেট্রিক টন। স্বাধীনতার পর এত চাল আর কখনোই উৎপাদন হয়নি। এ উদ্বৃত্ত চাল উৎপাদনে আউশ বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘নেরিকা আউশ মাত্র ১০০ দিনের ফসল। স্বল্পকালীন ফসল হওয়ায় এ ধান চাষে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠেছে।’
তিনি বলেন, ‘বোরো ও আমনের মাঝখানের সময়টা দেশের অধিকাংশ জমি পতিত থাকতো। এখন এ সময় আউশ ও নেরিকা আউশ উৎপাদনে আমরা খাদ্য নিরাপত্তা বলয় তৈরি করতে পারছি।’ আগামীতে এ ধান চাষে কৃষকরা আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এ কৃষিবিদ।