ব্যাংকিং খাতে তারল্য বেড়েছে ২১ হাজার কোটি টাকা

দেশের ব্যাংকিং খাতের তারল্য সংকট নাটকীয়ভাবে কাটতে শুরু করেছে। অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল’১৮-জুন’১৮) এই খাতে তারল্যের পরিমাণ প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। তারল্যের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৬ দশমিক ৮০ শতাংশ।

গত মার্চ মাস শেষে ব্যাংকি খাতে মোট তারল্যের পরিমাণ ছিল ৭৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। জুন মাস শেষে তা দাঁড়ায় ৯৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকায়।তিন মাসের ব্যবধানে তারল্য বেড়েছে ২০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

মূলত: ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) বা নগদ জমা সংরক্ষণ এর হার কমানোর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যাংকিং খাতের তারল্য প্রবাহে। এছাড়া ব্যাংকিং খাতে ঋণ বিতরণের হার কমে যাওয়ার বিষয়টিও এতে ভূমিকা রেখেছে।

২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে তারল্য সংকট গুরুতর আকার ধারণ করে। সেই সমস্যার সমাধানে ৪ এপ্রিল ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) বা বিধিবদ্ধ নগদ জমা সংরক্ষণের হার ৬.৫ শতাংশ থেকে ৫.৫ শতাংশে কমিয়ে আনে বাংলাদেশ ব্যাংক।

উল্লেখ, বিধি অনুসারে প্রতিটি ব্যাংককে তার আমানতের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া হারে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। এটিকে ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) বা বিধিবদ্ধ নগদ জমা বলা হয়। মূলত আমানতকারীদের নিরাপত্তার প্রয়োজনে এই অর্থ জমা রাখতে হয়।

২০১৭-১৮ অর্থবছরের ৩য় প্রন্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ব্যাংকগুলোর ভারসাম্যহীনতা লক্ষ্য করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে অনুধাবন করা যায়। ব্যাংগুলোতে ভারসাম্য আনতে সিআআর কমানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ১ শতাংশ হারে সিআরআর কামানোতে পর্যাপ্ত টাকা আসে ব্যাংকগুলোর হাতে। এর ফলে গত ২ মাসে সামগ্রিক ব্যাংক খাতে ১ থেকে ২ শতাংশ হারে ঋণের বিপরিতে সুদ হার কমতে শুরু করেছে।

ঋণের বিপরীতে সুদ হার এক অংকে নিয়ে আসার শর্তে সিআরআর কামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। বর্তমানে ১০ থেকে ১১ শতাংশ হারে সুদ গ্রহণ করছে বেশিরভাগ ব্যাংক। এক মাস আগেও এই সুদের হার ছিল ১৩ শতাংশের উপরে।

বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি যাওয়ার কারণেও ব্যাংকের কাছে নগদ টাকার প্রবাহ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চ মাসে ব্যাংকিং খাতে ঋণ বিতরণে প্রবৃদ্ধি হয় ১৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এপ্রিলে কমে ১৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ হয়। মে মাসে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার আরও কমে ১৭ দশমিক ৬০ শতাংশে নামে। জুন মাসে তা কমে দাঁড়ায় ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

সরকার নিয়ন্ত্রিত রূপালি ব্যাংকের এক জেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে আমদের ব্যাংকের সুদ হার এক অংকের ঘরে নেমে এসেছে তবে তা শুধু শিল্প ঋণের ক্ষেত্রে। ভোক্তা ঋণের ক্ষেত্রে এখনও ১৩ শতাংশ হারে ঋণ গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

প্রয়োজনের তুলনায় টাকার প্রবাহ বেশি থাকলে তাকে অতিরিক্ত তারল্য বলা হয়। সিআরআর কমানোর ফলে সেই ঘটনা ঘটেছে ব্যাংক খাতে।

জুন মাস শেষে অতিরিক্ত তারল্যের ৫৩ হাজার ৫৫ কোটি টাকা রয়েছে সরকারি ব্যাংকগুলোর কাছে। কিন্তু মার্চ মাসে এই টাকার পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। অতিরিক্ত তারল্যের ৫৫ শতাংশই রয়েছে সরকারি ব্যাংকগুলোতে।

অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কাছে রয়েছে ৩১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। মার্চ প্রান্তিকে যার পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। অতিরিক্ত তারল্যের ৪৭.৫৮ শতাংশ রয়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কাছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী বেসরকারি ব্যাংকগুলোর বেশিরভাগের সুদহার এখনো রয়েছে দুই অঙ্কের ঘরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *