বেনাপোলে শুল্ক ফাঁকির ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে
দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে মিথ্য ঘোষণায় পণ্য আমদানির মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকির ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। একটি চক্র বেনাপোল কাস্টমস থেকে প্রতিনিয়ত শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্যের চালান বের করে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত অর্থবছরে (২০১৭-১৮) বেনাপোল স্থলবন্দরে শুল্ক ফাঁকির ঘটনা ঘটেছে ৯৯টি। পরে এসব ঘটনা শনাক্তের মাধ্যমে সরকার ২১ কোটি ৭০ লাখ ৯ হাজার টাকা অতিরিক্ত শুল্ক আদায় করেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শুল্ক ফাঁকির ঘটনা ঘটেছিল ১১৪টি, যা থেকে শুল্ক আদায় করা হয় ৩১ কোটি ৯৮ লাখ ৪ হাজার টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এমন ১৮১টি ঘটনা থেকে সরকার শুল্ক আদায় করে ১৫ কোটি ৬৩ লাখ ৪১ হাজার টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, বেনাপোল কাস্টমস ও বন্দরের কিছু কর্মকর্তা, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও আমদানিকারকদের যোগসাজশে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির ঘটনা ঘটছে।
বেনাপোল কাস্টমসের শুল্ক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মাসওয়ারি হিসাবে গত অর্থবছরের শেষের দিকে শুল্ক ফাঁকির ঘটনা বেশি ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি নয়টি করে ঘটনা ঘটেছে মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে। এসব ঘটনা থেকে মোট ৮ কোটি ৭৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত শুল্ক আদায় করা হয়েছে। এছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হিসেবে গত বছরের অক্টোবর ও ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের জানুয়ারি ও জুনে সাতটি করে শুল্ক ফাঁকির ঘটনা শনাক্ত করে মোট ৬ কোটি ৬৬ লাখ ৯২ হাজার টাকা অতিরিক্ত শুল্ক আদায় করা হয়েছে।
বেনাপোল কাস্টমসের শুল্ক বিভাগের সহকারী কমিশনার নিপুণ চাকমা বলেন, বন্দর দিয়ে কেউ যেন শুল্ক ফাঁকি দিতে না পারে, সেজন্য আমরা তত্পর আছি। তবে আমাদের লোকবলে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। এর পরও ভবিষ্যতে বড় ধরনের শুল্ক ফাঁকির ঘটনা এড়ানোর জন্য আমাদের সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। শুল্ক ফাঁকি রোধে আরো জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সহসভাপতি নূরুজ্জামান অভিযোগ করেন, কাস্টমসের কিছু কর্মকর্তা শুল্ক ফাঁকি বা মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তাদের সম্মতি ছাড়া এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না। তিনি বলেন, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা কেবল পণ্য ছাড় করানোর দায়িত্ব পালন করে। শুল্ক ফাঁকি মূলত আমদানিকারক এবং কাস্টমস ও বন্দরের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে হয়ে থাকে।
যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, আমরা মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির পক্ষে নই। এসব ঘটনার সঙ্গে অবশ্যই কাস্টমসের কারো সম্পৃক্ততা রয়েছে। কেননা কাস্টমসের চোখ ফাঁকি দিয়ে শুল্ক ফাঁকি হতে পারে না। শুল্ক ফাঁকি রোধে কাস্টমসকে আরো বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বেনাপোল কাস্টমসের কমিশনার মো. বেলাল হোসেন চৌধুরী এ বিষয়ে জানান, কিছু কাস্টমস কর্মকর্তা, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সহযোগিতায় বেনাপোলে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানি চলছে। আমরা শুল্ক ফাঁকির ঘটনা ধরতে পারলে জড়িতদের লাইসেন্স বাতিল, মামলা, অর্থদণ্ডসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিই। জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য আমদানি প্রতিরোধে কাস্টমস কোনো ছাড় দেয় না। জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়লে আমদানিকারকের লাইসেন্স বাতিল হতে পারে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে প্রতি বছর গড়ে ২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করে সরকার।