গ্যাস রফতানিতে রেকর্ডের পথে যুক্তরাষ্ট্র

যতই দিন যাচ্ছে, বৈশ্বিক জ্বালানি বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রভাব ততই বাড়ছে। উত্তোলন বৃদ্ধির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি পণ্যটির রফতানিও ক্রমে বাড়াচ্ছে ওয়াশিংটন। চলতি বছরের প্রথমার্ধে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রাকৃতিক গ্যাসের আমদানি-রফতানির বিষয়ে মঙ্গলবার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইআইএ)। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের দৈনিক গড় রফতানি গত বছরের সম্মিলিত গড়ের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। ফলে বছর শেষে দেশটি থেকে জ্বালানি পণ্যটির রফতানি কয়েক গুণ বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। খবর সিনহুয়া ও ব্লুমবার্গ।

ইআইএর প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিদিন গড়ে ৮৭ কোটি ঘনফুট বা প্রায় ২ কোটি ৪৬ লাখ ৪০ হাজার ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানি হয়েছে। ২০১৭ সালে দেশটি থেকে দৈনিক গড়ে ৩৪ কোটি ঘনফুটের সামান্য বেশি বা ৯৬ লাখ ৩০ হাজার ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানি হয়েছে। সে হিসাবে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই দেশটি থেকে আগের বছরের গড়ের তুলনায় প্রতিদিন অতিরিক্ত ৫৩ কোটি ঘনফুট বা ১ কোটি ৫০ লাখ ১০ হাজার ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানি হয়েছে।

প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সাল শেষে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি পণ্যটির দৈনিক গড় রফতানি আরো বেড়ে ২০০ কোটি ঘনফুটে দাঁড়াতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ইআইএ। প্রতিষ্ঠানটির সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, পরের বছর (২০১৯ সাল) দেশটি থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের দৈনিক গড় রফতানি আরো বেড়ে ৫৫০ কোটি ঘনফুটে দাঁড়াতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের শীর্ষ প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনকারী দেশ। অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পর প্রতি বছর দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানি হয়। জ্বালানি পণ্যটির রফতানিকারকদের বৈশ্বিক তালিকায় দেশটি সপ্তম অবস্থানে রয়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদকারী দেশগুলোর শীর্ষ তালিকায়ও যুক্তরাষ্ট্র চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। মাটির নিচে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মজুদের কারণেই সাম্প্রতিক দিনগুলোয় প্রাকৃতিক গ্যাসের উত্তোলন বাড়িয়েছে মার্কিন প্রশাসন।

ইআইএর সর্বশেষ শর্টটার্ম এনার্জি আউটলুকের (এসটিইও) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কূপগুলো থেকে আগের বছরের তুলনায় বেড়ে প্রতিদিন গড়ে ৭ হাজার ৩৫৭ কোটি ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন হয়েছে।

প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় চলতি বছর শেষে দেশটির কূপগুলো থেকে জ্বালানি পণ্যটির দৈনিক গড় উত্তোলন আরো বেড়ে ৮ হাজার ১৩৪ কোটি ঘনফুটে দাঁড়াতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ইআইএ। সে হিসাবে, এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন বাড়তে পারে ৭৭৭ কোটি ঘনফুট।

এটা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনের সর্বোচ্চ রেকর্ড। এর আগে ২০১৫ সালে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন হয়েছিল। সে সময় দেশটির নিয়ন্ত্রণাধীন কূপগুলো থেকে প্রতিদিন সব মিলিয়ে ৭ হাজার ৪১৫ ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন হয়েছিল।

চলতি বছর শেষে দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলনে আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে প্রতিষ্ঠানটি। ইআইএর আগের এসটিইওতে চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদিন গড়ে ৮ হাজার ১২০ কোটি ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনের প্রাক্কলন করা হয়েছিল। সে হিসাবে, সাম্প্রতিক পূর্বাভাসে দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির দৈনিক গড় উত্তোলন ১৪ কোটি ঘনফুট বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মূলত বাড়তি উত্তোলনের জের ধরে আগামী দিনগুলোয় যুক্তরাষ্ট্র থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানি কয়েক গুণ বাড়তে পারে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *