তেলের দাম বেড়ে চার বছরের সর্বোচ্চে
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েই চলেছে। মঙ্গলবার প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে ৮২ ডলার এক সেন্টে উঠেছে; যা চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বরের পর তেলের দাম কখনোই এই স্তরে ছিল না। খবর আল জাজিরার।
খবরে বলা হয়েছে, তেলের উৎপাদন কমানোর বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আহ্বানে সৌদি আরব ও রাশিয়া সাড়া দেবে না এমন আভাসে আজ তেলের দাম নতুন করে বেড়ে যায়।
সোমবার আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে তেল উৎপাদনকারী প্রধান দেশগুলো তেলের উৎপাদন পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে বসেছিল। কিন্তু সে বৈঠকে উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে কোনো সমঝোতা বা ঐকমত্য হয়নি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ঘেঁটু হিসেবে পরিচিত সৌদি আরব পর্যন্ত আভাসে বুঝিয়ে দেয়, এ মুহূর্তে তারা তেলের উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়া স্পষ্ট করে জানায়, তারা কোনোভাবেই তেলের উৎপাদন কমাবে না।
উল্লেখ, বিশ্বে তেল উৎপাদনে সৌদি আরব ও রাশিয়ার অবস্থান যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয়। এ দুটি দেশের অনড় অবস্থানে স্পষ্ট হয়ে যায়, আপাতত বিশ্ববাজারে তেলের সরবরাহ বাড়ছে না। আর তাতেই তেজি হয়ে উঠে তেলের বাজার।
গত সপ্তাহে ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইটার বার্তায় তেল রপ্তানিকারকদের ফোরাম ওপেক’কে তেলের মূল্য কমিয়ে আনতে উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি ওপেকের সদস্য দেশ, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর প্রতি পরোক্ষ হুমকি দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ওই অঞ্চলে সামরিক নিরাপত্তা দিয়ে আসছে। তাই তাদের উচিত এ বিষয়ে (তেলের উৎপাদন বাড়ানোর যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে) সাড়া দেওয়া।
বার্তায় তিনি লিখেন, ‘আমরা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে সুরক্ষা দিয়ে থাকি, আমাদের সহায়তা না পেলে তারা এতোবছর নিরাপদ থাকতে পারতো না। অথচ তারা এখনো তেলের মূল্য বাড়িয়ে চলেছে। আমরা এটা মনে রাখবো। ওপেক নামের একচেটিয়া গোষ্ঠিটির উচিত, তেলের মূল্য কমিয়ে আনা।’
ট্রাম্পের ওই টুইটে শ্লেষ প্রকাশ করে ইরানের জ্বালানি মন্ত্রী বলেছিলেন, ট্রাম্পের এই টুইটারবাজি বন্ধ হলেই কেবল তেলের বাজার স্থিতিশীল হতে পারে।
উল্লেখ, এর কিছুদিন আগে ট্রাম্প ভারত, চীন ও তুরস্ককে ৪ নভেম্বরের মধ্যে ইরান থেকে তেল আমদানি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার ওই আহ্বানেও কোনো সাড়া মিলেনি।
তবে ভারত, চীন ও তুরস্ক সাড়া না দিলেও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ট্রাম্পের আহ্বান উপেক্ষা করতে পারবে না বলে মনে করা হয়েছিল। কারণ এসব দেশের স্বৈরাচারি ও গণবিরোধী সরকারগুলো যুক্তরাষ্ট্রের আশ্রয়-প্রশ্রয়েই বছরের পর বছর ধরে টিকে আছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের অনেকটা অবাক করে দিয়েই উপসাগরীয় দেশগুলো ট্রাম্পের আহ্বানকে এড়িয়ে যায়। বরং সৌদি আরবের জ্বালানি মন্ত্রী খালিদ আল-ফালাহ অনেকটা সাহস দেখিয়ে উত্তর দেন, ‘আমরা কোনোভাবেই তেলের মূল্যকে প্রভাবিত করতে পারি না।’
তেলের এই মূল্য বৃদ্ধি বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর চাপ বাড়াবে। সরকারকে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ভর্তুকী দিতে হবে, যা বাজেট ঘাটতি বাড়াবে। অন্যদিকে ভর্তুকী সহনীয় রাখতে অভ্যন্তরীন বাজারে তেলের মূল্য সমন্বয় (বাড়ানো) করা হলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে, শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে, স্থানীয় পণ্যের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমবে, যা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।