জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে ট্রাম্প
আন্তর্জাতিক বাজারে কিছুদিন ধরে উত্থান-পতনের মধ্যে রয়েছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৮০ ডলার ছুঁই ছুঁই করেছিল। এ পরিস্থিতিকে জ্বালানি পণ্যটির কাঙ্ক্ষিত মূল্যবৃদ্ধির পথে অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজের (ওপেক) দীর্ঘদিনের উদ্যোগের সফলতা বিবেচনা করেছিলেন বিশ্লেষকরা। তবে ওপেকের এমন উদ্যোগ ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরব হন। ট্রাম্পের ওপেকবিরোধী টুইটার বার্তায় আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের মূল্যবৃদ্ধির গতি কমে আসে। এমন অবস্থানের কারণে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ব্রেন্ট ক্রুডের ব্যারেল ৮০ ডলারের উপরে দেখতে চান না ট্রাম্প। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন অবস্থানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইরান। খবর রয়টার্স ও অয়েলপ্রাইসডটকম।
ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বাড়তির দিকে ছিল। আগামী দিনগুলোয় সরবরাহ কমে গিয়ে জ্বালানি পণ্যটির দাম ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানায় সৌদি আরবের জ্বালানি মন্ত্রণালয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ তথ্য প্রকাশের পর হঠাৎ করেই গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৮০ ডলারে হওয়ার পরিস্থিতি দেখা দেয়। এ জন্য ওপেককে দায়ী করে টুইটারে সরব হন ট্রাম্প।
টুইটার বার্তায় ট্রাম্প জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পেছনে ওপেকের ‘একচেটিয়া অবস্থান’কে চিহ্নিত করে বলেন, ‘ওপেকের মনোপলি বন্ধ হয়ে জ্বালানি তেলের দাম কমে আসা উচিত।’ ট্রাম্প আরো বলেন, আমরা (যুক্তরাষ্ট্র) মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে দীর্ঘমেয়াদে নিরাপত্তা দিয়ে চলেছি। অথচ তারা জ্বালানি তেলের দাম কমাতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।
জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে ট্রাম্পের এ অবস্থানের বিষয়ে কোপেনহেগেনভিত্তিক সাক্সো ব্যাংকের কমোডিটি স্ট্র্যাটেজি বিভাগের প্রধান ওলে স্লথ বলেন, সৌদি আরবের উদ্বেগে স্বল্পমেয়াদে জ্বালানি তেলের বাজার পরিস্থিতি উঠে এসেছে। এর বিপরীতে ট্রাম্পের টুইটার বার্তায় এটাই স্পষ্ট হয় যে, ওয়াশিংটন কোনোভাবেই ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলারে উপরে দেখতে চায় না।
ইরান থেকে সরবরাহ কমার আশঙ্কা মোকাবেলার জন্য ওপেক-নন ওপেক দেশগুলো অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ওপেকভুক্ত ১৫টি দেশের মধ্যে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েত জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন বাড়াতে পেরেছে। একই সঙ্গে রাশিয়ায় জ্বালানি তেল উত্তোলন বেড়েছে। উত্তোলন বাড়ানোর মধ্য দিয়ে জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে রাখতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে চাপ দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। এ বিষয়ে ওলে স্লথ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলনকারী ও রফতানিকারকের পাশাপাশি অন্যতম শীর্ষ ভোক্তাও। এ কারণে পণ্যটির দাম ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যাওয়াকে আর্থিকভাবে লোকসান বিবেচনা করছেন ট্রাম্প।
এদিকে ট্রাম্পের এ অবস্থানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইরান। গতকাল দেশটির তেলমন্ত্রী বিজান জাঙ্গানেহ বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে ট্রাম্পের টুইট মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন মিত্র দেশগুলোর জন্য অবমাননাকর। আশা করছি, ট্রাম্পের অবস্থান ও নির্দেশের দ্বারা প্রলুব্ধ হওয়া থেকে ওপেক-নন ওপেক দেশগুলো বিরত থাকবে।
প্রতিবার ট্রাম্পের ওপেকবিরোধী টুইটার বার্তা দীর্ঘমেয়াদে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্টের টুইটকে জ্বালানি তেলের বাজারে ‘ওয়াশিংটন প্রিমিয়াম’ বলে মন্তব্য করেছেন ওমানের তেলমন্ত্রী মোহাম্মদ আল রুমহি। তিনি বলেন, এর আগেও মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওপেকবিরোধী অবস্থান দীর্ঘদিন ধরে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী রেখেছিল। এবারো এর ব্যতিক্রম আশা করা যাচ্ছে না। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর জন্য ওপেক দীর্ঘদিন ধরে যা করতে পারেনি, ট্রাম্প কয়েকটি টুইটে তা করে দেখিয়েছেন।
ঝানু ব্যবসায়ী ট্রাম্পের টুইট অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির গতি কমিয়ে আনলেও পণ্যটির দাম কমাতে পারেনি। নভেম্বরে ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে জ্বালানি তেলের দাম আরো বাড়তে পারে। এ পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের দেখানো পথে ওপেকভুক্ত দেশগুলো উত্তোলন বাড়ালে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে ওয়াশিংটনের অবস্থান আরো জোরদার হবে বলেই মনে করছেন জ্বালানি বিশ্লেষকরা।