বাণিজ্যযুদ্ধে কপাল খুলছে ভারতের

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ চলছে। একে অন্যের পণ্যের ওপর পাল্টাপাল্টি আমদানি শুল্ক আরোপ করছে বিশ্বের এ দুই শীর্ষ অর্থনীতি। বাড়তি আমদানি শুল্কযুক্ত পণ্যের তালিকায় তুলাও রয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনের বাজারে তুলা আমদানিতে ব্যয় বেড়ে গেছে। মার্কিন তুলায় চীনের বাড়তি আমদানি শুল্ককে সুযোগ হিসেবে দেখছেন ভারতীয় রফতানিকারকরা। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে চীনের বাজারে নিজেদের অবস্থান আরো পোক্ত করে নিতে চাইছেন তারা। এ ধারাবাহিকতায় শুরু হতে যাওয়া ২০১৮-১৯ বিপণন মৌসুমে ভারত থেকে চীনে তুলা রফতানি আগের তুলনায় পাঁচ গুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে। ফলে ভারতের বাজারে রফতানিযোগ্য তুলার দাম বাড়বে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। খবর ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস ও রয়টার্স।

নেদারল্যান্ডসভিত্তিক গ্লোবাল মার্চেন্ট ফার্ম লুইস দ্রেফুস কোম্পানির এক নোটে বলা হয়েছে, মার্কিন তুলায় ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের কারণে এরই মধ্যে চীনা আমদানিকারকরা পণ্যটির বিকল্প বাজার খুঁজতে শুরু করেছে। এর ফলে একদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে তুলা আমদানি কমবে, অন্যদিকে অন্য রফতানিকারক দেশগুলো চীনের বাজারে অবস্থান পোক্ত করার সুযোগ পাবে। সেই হিসাবে, সবার আগে আসছে ভারতের নাম। দেশটিতে আগামী ১ অক্টোবর থেকে তুলার ২০১৮-১৯ বিপণন মৌসুম শুরু হবে। এ মৌসুমে ভারতীয় রফতানিকারকরা চীনের বাজারে আগের তুলনায় পাঁচ গুণ বাড়িয়ে সব মিলিয়ে ৪০ লাখ বেল (প্রতি বেলে ৪৮০ পাউন্ড) তুলা রফতানি করতে পারে।

তুলা আমদানিতে চীনা আমদানিকারকদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প হিসেবে ভারত লাভজনক উৎস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর পেছনে দুটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রথমত. ভারতে উৎপাদিত ও দেশটি থেকে রফতানি হওয়া তুলার মান তুলনামূলক ভালো।

দ্বিতীয়ত. ভৌগোলিক নৈকট্যের কারণে পরিবহন ব্যয় কম লাগায় ভারত থেকে তুলা আমদানি লাভজনক। এসব কারণে আসছে নভেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে সরবরাহের চুক্তিতে ভারত থেকে প্রায় ১২ লাখ বেল তুলা আমদানির অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন চীনা আমদানিকারকরা।

বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের পর চীন বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ তুলা আমদানিকারক দেশ। মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে চীনে সব মিলিয়ে ৭০ লাখ বেল তুলা আমদানি হতে পারে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৭ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি। ২০১৭ সালে দেশটিতে আগের বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ বেড়ে ৫৫ লাখ বেল তুলা আমদানি হয়েছিল। অন্যদিকে ভারত বিশ্বের শীর্ষ তুলা উৎপাদনকারী দেশ। পণ্যটির রফতানিকারকদের বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় ভারত তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। ভারতীয় তুলার সবচেয়ে বড় রফতানি বাজার চীন। ইউএসডিএর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০১৮ সাল শেষে ভারত থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৪৫ লাখ বেল তুলা রফতানি হতে পারে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ কম। ২০১৭ সালে ভারত থেকে আগের বছরের তুলনায় ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ বেড়ে মোট ৫২ লাখ বেল তুলা রফতানি হয়েছিল।

প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আসছে মৌসুমে ভারতে তুলা উৎপাদন আগের তুলনায় কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। একই সময় শীর্ষ বাজার চীনে পণ্যটির বাড়তি রফতানি চাহিদা বজায় থাকবে। ফলে সীমিত উৎপাদন ও বাড়তি চাহিদার কারণে সৃষ্ট সম্ভাব্য সরবরাহ সংকটের মুখে ভারতে রফতানিযোগ্য তুলার দাম আকাশ ছুঁতে পারে বলে মনে করছেন পণ্যবাজার-বিষয়ক বিশ্লেষকরা। এর ফলে শুধু চীন নয়, বরং বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের আমদানিকারকদেরও তুলনামূলক বেশি দামে ভারত থেকে তুলা আমদানি করতে হবে।

মুম্বাইভিত্তিক কটন অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট অকুন জ্ঞানেত্র বলেন, চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বিশ্বের শীর্ষ তুলা রফতানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে পণ্যটির আমদানি কমতে শুরু করেছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে চীনা বাজারে ভারতীয় তুলার চাহিদা ক্রমে বাড়ছে। অগ্রিম বুকিংয়ের পরিমাণ আগের তুলনায় বেড়েছে। এ কারণে ২০১৮-১৯ বিপণন মৌসুমে একদিকে ভারত থেকে তুলা রফতানি বাড়বে, অন্যদিকে ভারতের বাজারে তুলার দাম আগের তুলনায় চাঙ্গা হয়ে উঠবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *