চীনা পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কারোপ

চীনের আরো ২০ হাজার কোটি ডলার মূল্যমানের পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। চীন এর বিরুদ্ধে কোনো পাল্টা পদক্ষেপ গ্রহণ করলে আরো শুল্কারোপের হুমকি দিয়ে রেখেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ পদক্ষেপের মাধ্যমে আলোচনার পরিবেশ ‘বিষাক্ত’ করে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। খবর রয়টার্স।

যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা অনুযায়ী চীন থেকে আমদানি করা ২০ হাজার কোটি ডলার পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্কারোপ করা হবে। এক বিবৃতিতে শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনকে সতর্ক করে বলেন, পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চীন যদি যুক্তরাষ্ট্রের কৃষক অথবা শিল্প খাতের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তাহলে ‘আমরা আরো ২৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলার মূল্যমানের পণ্যে শুল্ক আরোপ করব।’

মঙ্গলবার সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন করে আলোচনায় বসার ব্যাপারে ওয়াশিংটনে প্রতিনিধি পাঠানোর পরিকল্পনাটি পুনরায় বিবেচনা করে দেখছে চীন। চীনের এ মনোভাবের পর আশঙ্কা করা হচ্ছে, বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ আরো দীর্ঘমেয়াদি হবে, যা বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করবে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের এ শুল্ক চীনের অর্থনীতিতে খুব একটা প্রভাব ফেলবে না বলে দেশটির পক্ষ থেকে আভাস দেয়া হয়েছে। দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তারা মনে করেন, বিস্তৃত রাজস্ব ও মুদ্রানীতিমালা পদক্ষেপ শুল্কের প্রভাব সামলে নেবে। চীনের সিকিউরিটিজ রেগুলেটরের ভাইস চেয়ারম্যান ফ্যাং জিংহাই তিয়ানজিনে এক সম্মেলনে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প খুবই আক্রমণাত্মক ব্যবসায়ী এবং আলোচনায় সুবিধা পেতে তিনি চীনকে চাপে রাখতে চাইছেন।’

এদিকে নতুন করে ১০ শতাংশ শুল্ক ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর করবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে চলতি বছরের শেষ নাগাদ তা বৃদ্ধি করে ২৫ শতাংশ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো যাতে বিকল্প দেশগুলোর সঙ্গে তাদের সরবরাহ শৃঙ্খল সমন্বয় করে নিতে পারে, সেজন্যই এ সময়টুকু হাতে রেখেছে তারা।

এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করা চীনের পণ্যগুলোর মধ্যে ৫ হাজার কোটি ডলার পণ্যে শুল্কারোপ করেছে ওয়াশিংটন। মূলত বাণিজ্য, প্রযুক্তি স্থানান্তর, উচ্চপ্রযুক্তি শিল্পে ভর্তুকি নীতিমালা পরিবর্তনে বেইজিংকে চাপ দিতেই যুক্তরাষ্ট্র এ শুল্ক আরোপ করেছে।

জবাবে চীনও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা সমপরিমাণ পণ্যে শুল্কারোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কারোপে সরকার কী ধরনের প্রতিক্রিয়া জানাবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মঙ্গলবার বৈঠক আহ্বান করেছেন দেশটির ভাইস প্রধানমন্ত্রী লিউ হি। তবে এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ গ্রহণের অঙ্গীকার করে চীন। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থাগুলোও আগ্রাসী ‘পাল্টা হামলার’ আহ্বান জানিয়েছে।

সিটি গ্রুপের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, নতুন ১০ শতাংশ শুল্কারোপের প্রভাব ধীরে ধীরে চতুর্থ প্রান্তিকে প্রতীয়মান হবে। আর মোট ২৫ শতাংশ শুল্কের পুরোপুরি আঁচ বোঝা যাবে আগামী বছর, এটি চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দশমিক ৮৩ শতাংশ কমিয়ে দেবে। যদিও চীনের শীর্ষ রেগুলেটর ফ্যাং বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে চীনের সমুদয় রফতানি পণ্যে শুল্কারোপ করলে চীনের অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব হবে দশমিক ৭ শতাংশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *