যুক্তরাষ্ট্রে গৃহস্থালি আয়ে নতুন রেকর্ড

যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর গড় গৃহস্থালি আয় ১ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ৬১ হাজার ৩৭২ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে টানা তিন বছর ধরে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে আয় বাড়ল, যা ১৯৬৭ সালের পর রেকর্ড।

আয় বাড়লেও দেশটিতে দারিদ্র্যের হার খুব একটা কমেনি, উপরন্তু শ্বেতাঙ্গ ও অশ্বেতাঙ্গ পরিবারগুলোর মধ্যে বৈষম্য আরো বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান বিভাগ সেন্ট্রাল ব্যুরোর এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। খবর এএফপি ও রয়টার্স।

এর আগে প্রকাশিত প্রতিবেদনে কর্মসংস্থান ও ভোক্তা আস্থা নিয়ে ইতিবাচক তথ্য পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছিল, ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের ১০ বছর পর আমেরিকান অর্থনীতিতে অনেকটাই অগ্রগতি হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, বার্ষিক হিসেবে তুলনা করলে আয়সীমায় বড় ধরনের উল্লম্ফন হয়েছে। তবে সে অনুযায়ী দেশটিতে দারিদ্র্যের হারে চোখে পড়ার মতো পতন হয়নি।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী ২০১৬-এর তুলনায় ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে দারিদ্র্যের হার দশমিক ৪ শতাংশ কমে ১২ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছর ছিল ১২ দশমিক ৭ শতাংশ। দেশটির মোট ৩ কোটি ৯৭ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে। ২০১৬ সালের তুলনায় দারিদ্র্যের হার খুব একটা হ্রাস না হওয়ায় কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

জাতিসংঘের চরম দারিদ্র্য এবং মানবাধিকার বিভাগের বিশেষ প্রতিনিধি ফিলিপ আলস্টন এক বিবৃতিতে এ প্রসঙ্গে বলেন, পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে গত বছরের তুলনায় দারিদ্র্য খুব একটা কমেনি, যা যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসন ব্যবস্থাকে লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে ফেলবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘রেকর্ড কর্মসংস্থান, শেয়ারবাজারে রেকর্ড দরবৃদ্ধি, শীর্ষ বিত্তবানদের সম্পদ আরো বাড়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রে এখনো ২ কোটি ৮৫ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যবীমা নেই। চরম উত্কর্ষের সময়ে বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশের যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে তাকে লজ্জাজনকই বলতে হয়।’

পুওর পিপলস ক্যাম্পেইনের সহকারী প্রতিষ্ঠাতা রেভারেন্ড উইলিয়াম বারবার বলেন, ‘এ সংখ্যাগুলো আমাদের আঘাত করেছে। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এখনো বাকি রয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান ব্যুরোর আয় পরিসংখ্যান বিভাগের প্রধান জোনাথন রথবম বলেন, ‘২০১৭ সালে পরিবারগুলোর গড় আয় সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌঁছেছে, যা ১৯৬৭ সালের পর রেকর্ড। সমন্বয়ের পর পূর্ববর্তী বছরগুলোর আয়ও অনেক বেশি ছিল বলেই তথ্য পাওয়া যাবে।’

কিন্তু শ্বেতাঙ্গ ও অশ্বেতাঙ্গ পরিবারগুলোর আয়ে ব্যাপক পার্থক্য দেখা গেছে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ পরিবারগুলোর আয় ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ৬৮ হাজার ১৪৫ ডলার হলেও হিস্পানিক পরিবারের আয় ৩ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫০ হাজার ৪৮৬ ডলার। অন্যদিকে আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মার্কিন পরিবারগুলোর আয় দশমিক ২ শতাংশ কমে হয়েছে ৪০ হাজার ২৫৮ ডলার।

ওয়াশিংটনভিত্তিক ইকোনমিক পলিসি বিভাগের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ এলিস গোল্ড বলেন, ‘গত দশকের দুর্দশার ধাক্কা খুব কম পরিবারই পুরোপুরি সামলে উঠতে পেরেছে। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে বিস্তৃতভাবে আয় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সে সময় স্বল্প ও মধ্যম আয়ের পরিবারগুলো প্রবৃদ্ধির পুরো সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু ২০১৭ সাল থেকে অত্যন্ত গতানুগতিক বৈষম্য আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সাধারণ পরিবারগুলোর তুলনায় সম্পদশালী পরিবারগুলোর শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি লক্ষ করা গেছে।’

বিশ্লেষকরা আরো বলছেন, ২০১৪ সাল থেকে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় থেকে দারিদ্র্যের হার হ্রাসের একটি ধারা লক্ষ করা গেছে। কিন্তু আইএইচএস মার্কিটের অর্থনীতিবিদ ক্রিস ক্রিস্টোফার বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়াদে ইকুইটি বাজার এবং সার্বিক ব্যবসায় আস্থা চাঙ্গা হলেও বেকারত্ব ও আয়ের ক্ষেত্রে নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *