দেশে ঊর্ধ্বমুখী গমের দাম

কিছুদিন ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম তুলনামূলক কম রয়েছে। অন্যান্য সময়ে এমন পরিস্থিতিতে দেশীয় আমদানিকারকরা কৃষিপণ্যটির আমদানি বাড়িয়ে দেন। ফলে বাড়তি সরবরাহের কারণে দেশের বাজারে গমের দাম কমে আসে।

বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও দেশে গমের দাম আগের তুলনায় মণপ্রতি ৩০ টাকা বেড়েছে। এজন্য কৃষিপণ্যটির সরবরাহ সংকটকে দায়ী করছেন দেশীয় আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। গমের বাড়তি দামের জের ধরে দেশে আটা ও ময়দার দামও বাড়তে শুরু করেছে। রাজধানীতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে আটা ও ময়দার দাম কেজিতে সর্বোচ্চ ২ টাকা বেড়েছে।

রাশিয়াসহ কৃষ্ণসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোয় সর্বশেষ মৌসুমে বাম্পার ফলনের কারণে গত এক মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন গমের দাম মানভেদে সর্বনিম্ন ৪ ডলার ৫০ সেন্ট থেকে সর্বোচ্চ ১১ ডলার পর্যন্ত কমেছে। তবে দেশের বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। গতকাল পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের পাইকারি আড়তগুলো ঘুরে আটা তৈরির উপযোগী প্রতি মণ গম ৯১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

এক সপ্তাহ আগেও এ গম মণপ্রতি ৮৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সেই হিসাবে সাতদিনের ব্যবধানে রাজধানীর পাইকারি বাজারে কৃষিপণ্যটির দাম বেড়েছে মণে ৩০ টাকা। সপ্তাহখানেক আগে ময়দা তৈরির উপযোগী প্রতি মণ গম বিক্রি হয়েছিল ৯৯০ টাকায়। সপ্তাহান্তে কৃষিপণ্যটির দাম মণে ৩০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২০ টাকা।

কই চিত্র দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জেও। বর্তমানে স্থানীয় মিল গেটে আটা তৈরির উপযোগী প্রতি মণ গম বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও পণ্যটি মণপ্রতি ৮৪০-৮৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। অন্যদিকে গতকাল নারায়ণগঞ্জে ময়দা তৈরির উপযোগী প্রতি মণ গম বিক্রি হয় ১ হাজার ১০০ টাকায়। সপ্তাহখানেক আগেও পণ্যটি মণপ্রতি ১ হাজার ১০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সেই হিসাবে সপ্তাহান্তে কৃষিপণ্যটির দাম সর্বোচ্চ ১০০ টাকা বেড়েছে।

দেশে গমের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের মেসার্স সানফ্লাওয়ার মিলের স্বত্বাধিকারী ইমাম হোসেন টুটুল বলেন, মুদ্রাবাজারে ডলার বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। বিপরীতে টাকার মান আগের তুলনায় কমেছে। এ পরিস্থিতিতে আমদানি লাভজনক নয়। মূলত এ কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমা সত্ত্বেও দেশে গমের দাম আগের তুলনায় বাড়তি রয়েছে।

এদিকে গমের বাড়তি দামের প্রভাব পড়েছে আটা ও ময়দার বাজারেও। দুটি পণ্যেরই দাম আগের তুলনায় বেড়েছে। রাজধানীর মৌলভীবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, এক সপ্তাহ আগে ৫০ কেজির এক বস্তা আটা ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সেই হিসাবে প্রতি কেজি আটার দাম পড়ে ২১ টাকা। সপ্তাহান্তে প্রতি বস্তা আটার দাম ১০০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৫০ টাকা। বর্তমানে প্রতি কেজি আটার দাম পড়ছে ২৩ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহান্তে রাজধানীর পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আটার দাম বেড়েছে ২ টাকা।

অন্যদিকে সপ্তাহখানেক আগেও ৫০ কেজির এক বস্তা ময়দা ১ হাজার ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সেই হিসাবে খাদ্যপণ্যটির দাম পড়েছিল কেজিপ্রতি ২৯ টাকা। গতকাল পাইকারি বাজারে প্রতি বস্তা ময়দা বিক্রি হয় ১ হাজার ৫২০ টাকায়। অর্থাৎ পাইকারি বাজারে ময়দার কেজিপ্রতি দাম পড়ে ৩০ টাকা ৪০ পয়সা। সেই হিসাবে সপ্তাহান্তে খাদ্যপণ্যটির দাম বেড়েছে মণে ৭০ আর কেজিতে ১ টাকা ৪০ পয়সা।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান বলেন, বাজারে গমের সরবরাহ সংকট রয়েছে, এমন কারণ দেখিয়ে মিল গেটেই বাড়তি দামে আটা ও ময়দা বিক্রি হচ্ছে। কোরবানির ঈদের পর থেকে কয়েক ধাপে পণ্য দুটির দাম বেড়েছে। যখন আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম কমতির দিকে রয়েছে, তখন দেশে আটা-ময়দার দাম বেড়ে যাওয়া অযৌক্তিক।

এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত দেশে বেসরকারি পর্যায়ে ৯ লাখ ৬২ হাজার টন গম আমদানি হয়েছে। বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে আরো ৯৮ হাজার ২৫৫ টন গম। আরো প্রায় ১১ লাখ টন গম আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছেন দেশীয় আমদানিকারকরা। আমদানি করা এসব গম দেশের বাজারে সরবরাহ শুরু হলে বিদ্যমান দাম কমে আসতে পারে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *