এক বস্তার বেশি চাল নিলে দিতে হবে ঠিকানা

রাজধানীর শাহজাহানপুরের এক বাসিন্দা ইতোমধ্যে ৫ বস্তা (২৫০ কেজি) চাল কিনে বাসায় মজুদ করেছেন। গত শুক্রবার তিনি আরও ২ বস্তা চাল কিনলেন খিলগাঁও রেলগেট বাজার থেকে।

আলাপচারিতায় তিনি বলেন, চালের পাশাপাশি তিনি কাঁচাতরকারিসহ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রীও মজুদ করেছেন। অথচ স্ত্রী, ৮ বছরের এক সন্তান ও গৃহকর্মীসহ চার সদস্যের পরিবার তার। গড়ে ১৫ থেকে ১৮ কেজি চালেই তার পুরো মাস চলার কথা। এত চাল দিয়ে কি করবেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি কোন দিকে যায় বলা যাচ্ছে না। প্রয়োজন না হলে পরে বিক্রি করে দেব।’ শুধু রফিকুল ইসলামই নন, গত এক সপ্তাহে এ ধরনের অনেক মানুষ নিজ প্রয়োজনের কয়েকগুণ বেশি চাল কিনে মজুদ করেছেন। ফলে চালের দাম বস্তাপ্রতি বেড়েছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।

এ পরিস্থিতিতে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখন থেকে এক বস্তার (৫০ কেজি) বেশি চাল কিনতে হলে সংশ্লিষ্ট দোকানে ক্রেতার নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর নিবন্ধন করতে হবে। এ বিষয়ে শিগগিরই রাজধানীর চাল ব্যবসায়ী সমিতিগুলোর কাছে চিঠি দেবে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা ১০০ টিমের সদস্যদের এ বিষয়ে মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

চালের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। অযৌক্তিকভাবে চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। যারা দাম বাড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে জেল-জরিমানা শুরু হয়ে গেছে। সাভারে একজনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, একই সঙ্গে জেল দেয়া হয়েছে। আশা করি ইচ্ছামতো দাম বাড়ানো বন্ধ হয়ে যাবে। যারা কোনো কারণ ছাড়া চালের দাম বাড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার করা হবে। শুধু আমরাই জোরদার করব না, ভোক্তা অধিদফতর, জেলা-উপজেলা প্রশাসনও অভিযান পরিচালনা করছে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোসাম্মৎ নাজমানারা খানুম শনিবার বলেন, ‘চালের বাজার সহনীয় রাখতে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে মাঠ প্রশাসনে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এসব চিঠিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মাধ্যমে করোনার কারণে যেন চালের দাম না বাড়ানো হয় সে ব্যাপারে সহযোগিতা এবং বাজার মনিটরিং করতে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ চালকল মালিক সমিতি, চাল ব্যবসায়ী সমিতিগুলোর নেতাদেরও চিঠি দেয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলন করে চালের পর্যাপ্ত মজুদের কথা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তারপরও মানুষ প্রয়োজনে অতিরিক্ত চাল কিনে মজুদ করছে। এখন আমরা বেশি চাল কেনা মানুষের নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর রাখার জন্য চাল ব্যবসায়ী সমিতিগুলোকে নির্দেশ দিয়েছি। শিগগিরই চিঠিও দেয়া হবে।’

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ১৫ মার্চের হিসাব অনুযায়ী দেশের সরকারি গুদামগুলোতে খাদ্য মজুদ রয়েছে ১৭ লাখ ৫১ হাজার ৬ টন। আরও দুই লাখ টন গম দেশের পথে। গত বছর এ সময় খাদ্য মজুদের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৩০ হাজার টন। সরকারের পক্ষ থেকে ১৮ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে বলা হয়েছে, দেশে চালের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। চালের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। কোনো ব্যবসায়ী কারসাজি করে চালের দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, স্বাভাবিকভাবে চালের বাজার মনিটরিংয়ে ২৫টি টিম ছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়ের। পরিস্থিতি বিবেচনায় রাজধানীতে এখন ১০০টি টিম চালের বাজার মনিটর করছে। ইতোমধ্যে অসাধু চাল ব্যবসায়ী ও মিল মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে। চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে হার্ডলাইনে যাচ্ছে সরকার। এই অভিযান আরও জোরদার করা হবে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সঙ্গে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনও চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে অভিযান পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে মাঠ প্রশাসনকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অভিযান পরিচালনা করা ছাড়াও ওএমএসের (খোলাবাজারে বিক্রি) মাধ্যমে চাল বিক্রি শুরু হয়েছে। করোনার কারণে চালের সংকট দেখা দিলে প্রয়োজনে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

বাজার মনিটরিং টিমের দায়িত্বে থাকা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তাহমিদুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু রাজধানীতেই আমাদের ১০০টি মনিটরিং টিম কাজ করছে। এছাড়া ভোক্তা অধিকার, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন তো আছেই। আমরা টিমগুলোকে বলে দিয়েছি তারা যেন চাল ব্যবসায়ীদের বলে দেন, এক বস্তার বেশি চাল নিলেই তাকে দোকানির কাছে নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর দিতে হবে। আজও (শনিবার) রাজধানীর কাপ্তানবাজারে ক্রেতার ছদ্মবেশে দেখলাম একজন তিন বস্তা চাল কিনতে চাইছে, কিন্তু দোকানি তাকে এক বস্তার বেশি দিতে রাজি হননি। এছাড়া গণমাধ্যমকর্মীরাও আমাদের সর্বোচ্চ সহায়তা দিচ্ছেন।’

চালের বাজার মনিটরিং প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া জানান, ‘ডিসি স্যারের নির্দেশে জামালপুরের সব উপজেলায় চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের বাজার কঠোর মনিটরিং করা হচ্ছে। একাধিক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। যেখানেই অবৈধ মজুদদার পাওয়া যাচ্ছে আইন অনুযায়ী জরিমানাসহ শাস্তি দেয়া হচ্ছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *