যানজট-দূষণ হ্রাসে ২ হাজার কোটি ডলারের রেল প্রকল্প

তীব্র যানজটের জন্য বেশ পরিচিতি রয়েছে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের। এবার নগরের ভিড় ও দূষণ সমস্যা নিরসনে একটি বিশাল ট্রেন স্টেশন নির্মাণ ও রেল যোগাযোগ নেটওয়ার্ক সংস্কারের পরিকল্পনা করেছে দেশটি। খবর ব্লুমবার্গ।

থাইল্যান্ডের বৃহত্তম রেল উন্নয়ন প্রকল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখা হয়েছে প্রতিদিনের তীব্র যানজট ও প্রতি মৌসুমে বিষাক্ত কুয়াশায় জর্জরিত রাজধানীটিকে। এ প্রকল্পের আওতায় ব্যাংককের সঙ্গে চীন ও সিঙ্গাপুরের রেল সংযোগ স্থাপনের পাশাপাশি দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর সঙ্গে রাজধানীকে যুক্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্যাংককের ট্রানজিট ব্যবস্থাকেও সম্প্রসারিত করা হবে।

রাজধানীর রেল ট্রানজিট, রেলপথ সম্প্রসারণ ও উচ্চগতির রেলপথ নির্মাণে ২ হাজার ১০০ কোটি ডলারের বেশি ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে থাই সরকার। এছাড়া রাজধানীর কেন্দ্রে ১৩০ কোটি ডলার ব্যায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম রেল স্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ২০২১ সালে স্টেশনটি চালু করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পরিকল্পনাটি থাই সরকারের বায়ুদূষণ হ্রাসে গৃহীত পদক্ষেপের অংশ। বিপুলসংখ্যক গাড়ি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো থেকে নির্গত ধোঁয়ার কারণে কয়েক মাস ধরে ব্যাংকক ও থাইল্যান্ডের বিভিন্ন অংশ বিপজ্জনক ধোঁয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে সরকার জনগণকে আরো বেশি গণপরিবহন ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছে এবং ট্রানজিট ব্যবস্থার সম্প্রসারণকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।

ব্যাংক অব আয়ুধ্যার প্রধান অর্থনীতিবিদ সোমপ্রভিন মানপ্রাসের্ত বলেন, সরকারের পরিকল্পনা দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতি ও পরিবেশের জন্য ভালো হবে। দূষণ সমস্যার তীব্রতা থেকে উপলব্ধি করা যাচ্ছে, আমরা এমন একটি অবস্থানে পৌঁছে গিয়েছি, যেখানে আমাদের কার্যকলাপই নিজেদের ক্ষতির কারণ হয়ে উঠেছে।

থাইল্যান্ডের এ উচ্চাকাঙ্ক্ষী রেল পরিকল্পনা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাসে কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি দেশটির নাজুক অর্থনীতি শক্তিশালী করতেও সহায়ক হবে। এ পরিকল্পনা থাইল্যান্ডের পিছিয়ে থাকা রেল ব্যবস্থার আমূল সংস্কার ঘটাবে ও মুদ্রার মান নিয়ন্ত্রণে রাখবে। তীব্র খরা ও নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে পর্যটন খাতের পতনে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হিসেবে দেখা হচ্ছে অবকাঠামো প্রকল্পটিকে।

আগামী তিন বছরের ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার অবকাঠামো বাজেটের সিংহভাগই এ রেল প্রকল্পে ব্যয় করা হবে। প্রকল্পটির অন্যতম লক্ষ্য আরো বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও ব্যয় শক্তিশালী করা। এ মুহূর্তে পাঁচ বছরের সবচেয়ে মন্থর প্রবৃদ্ধি পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে থাইল্যান্ড। প্রকল্পটি সরকারের এ লক্ষ্য অর্জনের অন্যতম ভিত্তি।

স্টেট রেলওয়ে অব থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর ভোরাভুত মালা বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতি বেশ দুর্বল ও সুদহারও তুলনামূলকভাবে নিচের দিকে রয়েছে। ফলে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের এটাই শ্রেষ্ঠ সময়। জনগণ যদি দ্রুত ও সুবিধাজনকভাবে চলাচল করতে পারে, তবে অর্থনীতিও ভালো করবে। এমন ভাবনা থেকেই সরকার এ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

রেল নেটওয়ার্কের উন্নয়ন দেশটির যাত্রীবাহী ট্রেনের সক্ষমতা দ্বিগুণ করবে। এছাড়া ট্র্যাক সংখ্যা দ্বিগুণ বাড়ার কারণে পণ্য পরিবহন সক্ষমতা তিনগুণ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। রেল যোগাযোগ হালনাগাদ করা হলে বছরে ২ কোটি ২০ লাখের বেশি যাত্রী সুবিধা ভোগ করবে। এছাড়া বার্ষিক ৩ কোটি টনের বেশি পণ্য পরিবহন সম্ভব হবে। প্রকল্পের আওতায় থাই শহরগুলোকে ব্যাংককের সঙ্গে উচ্চগতির ট্রেনের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হবে।

চীন ও জাপানের তুলনায় বৃহৎ রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলেও এত বড় রেল অবকাঠামো প্রকল্প থাইল্যান্ডে বিরল। গত প্রায় সাত দশকে অনুন্নয়নের কবলে রয়েছে থাই রেল ব্যবস্থা। ১৯৫১ সালে ৩ হাজার ৩০০ কিলোমিটার রেল নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হলেও গত ৬৯ বছরে মাত্র ৭০০ কিলোমিটার সংযোগ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

থাম্মাসত বিজনেস স্কুলের ডিপার্টমেন্ট অব ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস, লজিস্টিকস অ্যান্ড ট্রান্সপোর্টের সহযোগী অধ্যাপক পাভিদা পানান্দ বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য রেল ব্যবস্থায় বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *