অনেকেই যথাযথ বাংলা বলতে পারে না

যথাযথভাবে বাংলা বলতে না পারা তরুণদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে বসবাস করে আমাদের অনেকে বাংলা ভাষা ভুলতে বসেছে। তারা যথাযথ উচ্চারণে বাংলা বলতে পারে না। তারা ইংরেজি উচ্চারণে বাংলা বলে। আমি তাদের কী বলব? আমি শুধু তাদের করুণা করতে পারি।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক ছেলে-মেয়ে বাংলা ভাষায় কথা বা নিজের এলাকার কথা বলাটা (আঞ্চলিক ভাষা) ভুলে গিয়ে কেমন যেন ইংরেজি অ্যাকসেন্টে বাংলা বলার চেষ্টা করে। মনে হচ্ছে বাংলা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। যারা এই দেশেই লেখাপড়া শিখেছে।’

তিনি জানান, জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের পর দেশে আসতে না পারায় বিদেশে থেকে বিদেশের স্কুলে পড়তে হলেও তারা দুই বোন (শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা) সবসময় চেষ্টা করেছেন তাদের ছেলে মেয়েরা যেন সঠিকভাবে বাংলা বলতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ও রেহানা সবসময়ই ছেলে-মেয়েদের বাংলা শেখাবার চেষ্টা করেছি এবং ঘরে বাংলায় কথা বলেছি। কারণ, বাংলা ভাষাটা শিখতে হবে।’

নিজেও ভালোভাবে কথা বলার ক্ষেত্রে গোপালগঞ্জ এবং ঢাকার ভাষা মিলিয়েই কথা বলে থাকেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেহেতু ছোটবেলায় ঢাকায় চলে এসেছি সেই ভাষার একটা প্রভাব, আর টুঙ্গিপাড়ায় জন্মেছি তার একটা প্রভাব, সব মিলিয়েই বলি, যার মধ্যে কোনো লজ্জা নেই।’

বন্ধবন্ধু কন্যা জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘জাতির পিতা সেই ভাষণে গোপালগঞ্জের শব্দ বলে গেছেন অকাতরে, যা মানুষের ভেতর একটা আবেদন সৃষ্টি করেছিল।’

‘জাতির পিতা দ্রুত মানুষের হৃদয়ে, মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছিলেন। মানুষের কথা বলতে পেরেছিলেন। সেটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। যে কারণে তিনি যে নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশের মানুষ সেটা কিন্তু গ্রহণ করেছে,’- যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব এখন বৈশ্বিক গ্রাম। এখানে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ, ব্যবসা করা, অন্য সাহিত্য ও সংস্কৃতি জানতে অন্য ভাষা শেখার প্রয়োজন আছে। কিন্তু মাতৃভাষাকে অবহেলা করে নয়।

তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। এটা বাস্তবতা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করে সেখান থেকে ফেলোশিপ প্রদানেও তার সরকারের উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানান। যাতে সরকার পরিবর্তন হলেও এটি আর কেউ বন্ধ করতে না পারে।

আন্তজাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে বিশ্বের সক মাতৃভাষা সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করায় বিভিন্ন দেশের কোমলমতি শিশুরা নিজস্ব মাতৃভাষায় অনুভূতি ব্যক্ত করে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *