শিশুর চুলে উকুন হলে যা করবেন

প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় এক কোটি মানুষের মাথায় উকুন হয়। তার মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই ১২ বছরের নিচের শিশু। শিশুর মাথায় উকুন হওয়ার প্রথম লক্ষণ হলো অনবরত মাথা চুলকানো। এ অবস্থায় শিশুর মাথা ভালো করে দেখলেই উকুন সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। চুলে বড় উকুনের চেয়ে নিকি বা উকুনের ডিমই বেশি দেখা যায়। এ উকুন থেকে পরিত্রাণ পাওয়া মোটেও কঠিন কোনো কাজ নয়। এখানে এর কিছু উপায় বর্ণনা করা হলো :

উকুন নির্মূল করার যেসব পদ্ধতি আছে, তা কিছুটা সময়সাপেক্ষ। তাই ধৈর্যের সঙ্গে সমস্যার সমাধান করতে হবে। এতে লজ্জার কিছু নেই, ঠিকমতো ব্যবস্থা নিলে কিছুদিনের মধ্যেই সেটি চলে যাবে।

দোকানে প্রাপ্ত বিভিন্ন উকুনের ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে

দোকানে যেসব উকুনের ওষুধ পাওয়া যায়, তার মধ্যে গামা বেনজিন হেক্সাক্লোরাইড (১%) বেশ কার্যকর। এটি ভালোভাবে পুরো মাথায় লাগিয়ে ২৪ ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলতে হবে। এ ছাড়া বর্তমানে বাজারে লট্রিক্স নামে আরেকটি ক্রিম পাওয়া যায়। এটি মাথায় লাগিয়ে ১০ মিনিট রেখে দিতে হয়। লক্ষ রাখতে হবে, ওষুধ যেন চোখে না যায়। এর পর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি উকুন নিধনে বেশ কার্যকর। এ ছাড়া বাজারে আরো উকুন নিধনকারী ওষুধ, সাবান ও শ্যাম্পু বেরিয়েছে। এগুলো চিকিৎসকের পরামর্শমতো ব্যবহার করা যেতে পারে।

শুধু উকুন হওয়ার কারণে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তবে চুল ছেঁটে ছোট করে দিলে ওষুধ, সাবান, শ্যাম্পু ইত্যাদি ব্যবহারে সুবিধা হয়। কিন্তু চুল শেভ করে দিলেও উকুন একেবারে চলে যাবে। সে ক্ষেত্রে উকুনের উৎস নির্মূল না করলে লাভ হবে না।

যেহেতু উকুনের ওষুধ হলো এক ধরনের পোকা মারার ওষুধ, তাই এগুলো শরীরের ত্বক ও চোখের জন্য ক্ষতিকর। কাজেই ওষুধ ধোয়ার সময় যদি মাথায় পানি ঢেলে বা ঝরনার নিচে দাঁড়িয়ে শিশুকে গোসল করানো হয়, তবে তা চোখে বা শরীরের অন্যান্য স্থানে লেগে চুলকানি, অ্যালার্জিসহ অন্যান্য লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

তাই প্রথমে মাথা উপুড় করে জামা খুলে, মুখে তোয়ালে পেঁচিয়ে শুধু চুলগুলো ধুয়ে নিয়ে তার পর গোসল করা ভালো।

উকুনের ওষুধ শুধু বড়, অর্থাৎ চলমান উকুনগুলোই ধ্বংস করে, কিন্তু নিকি বা উকুনের ডিম রয়েই যায়। তাই ডিম মারার জন্য তৈরি বিশেষ ধরনের চিরুনি (যা বাজারে বা অনেক সময় উকুন মারার ওষুধের সঙ্গেই পাওয়া যায়) দিয়ে ভালোভাবে মাথা আঁচড়াতে হবে। কেননা, যত বেশি নিকি মারা যাবে, পুনরায় উকুন হওয়ার আশঙ্কা তত কমে যাবে। চিরুনিতে ভালোভাবে নিকি না এলে ভোঁতা আগাওয়ালা ছোট কেঁচি দিয়ে যেসব চুলে নিকি লেগে আছে, সেগুলো ছেঁটে দেওয়া যেতে পারে। এর পর চুল ভালোভাবে আঁচড়ে দিতে হবে এবং চিরুনিটি পুরোনো টুথব্রাশ ও পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। আর এ সময় শিশুর গায়ে কাপড় বা তোয়ালে থাকলে তা খুলে সঙ্গে সঙ্গে গরম পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং এর পর গরম ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে ফেলতে হবে।

একটি উকুন একসঙ্গে ১০টি পর্যন্ত ডিম পাড়তে পারে। আর খুব অল্পসংখ্যক উকুনই একটি শিশুর মাথা আক্রমণ করার জন্য যথেষ্ট। তা ছাড়া উকুন খুব সহজেই এক মাথা থেকে আরেক মাথায় ছড়িয়ে পড়ে। তাই শিশুর উকুনের চিকিৎসা ফলপ্রসূ করতে হলে বাসায় আর কার কার মাথায় উকুন আছে, খুঁজে বের করে সবাইকে একই সঙ্গে চিকিৎসা দিতে হবে।

শিশুর উকুনের চিকিৎসা করার পর বাসায় যে যে জিনিস শিশুর চুলে সংস্পর্শে এসেছে, যেমন—হ্যাট, হুডওয়ালা কোট, স্কার্ফ, মাথার ব্যান্ড ইত্যাদি যা যা ধোয়ার যোগ্য, সবকিছু গরম পানিতে ধুয়ে কড়া রোদে বা গরম ড্রায়ার শুকাতে হবে।

এমনকি বালিশের কভার, বিছানার চাদর ইত্যাদির কথাও ভুললে চলবে না। আর যেসব জিনিস বাসায় ধোয়া সম্ভব নয়, যেমন—সোফা, সোফার কভার, ম্যাট্রেস, গায়ে দেওয়ার কম্বল ইত্যাদি ড্রাই ক্লিনারে অথবা ভ্যাকুয়াম ক্লিনারে দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এর পর ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের ব্যাগ একটি পলিথিনে ভরে ডাস্টবিনে ফেলে আসতে হবে। শিশু যেসব রোমশ খেলনা দিয়ে খেলে ও রাতে শোয়ার সময় কাছে রাখে, সেগুলো সাবধানতার সঙ্গে ভ্যাকুয়াম ক্লিনারে পরিষ্কার করে নিলেই শিশু সেগুলো দিয়ে আবার খেলতে পারবে। আর যদি সেটি সম্ভব না হয়, তাহলে সেগুলো একটি পলিথিনে ভরে ভালো করে মুখ আটকে শিশুর নাগালের বাইরে ১৪ দিন রেখে দিতে হবে। কেননা, মাথার বাইরে যদিও উকুন চব্বিশ ঘণ্টার বেশি বাঁচে না, তবে ডিম ফুটতে ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। তাই ১৪ দিন বাইরে থাকলে উকুন এবং পরে ডিম ফুটে বের হওয়া উকুনও মরে যাবে। এতে সেসব খেলনা থেকে শিশুর আবার উকুন দিয়ে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে না।

উকুনের চিকিৎসা যদিও সম্পূর্ণভাবে ঘরে করা সম্ভব, তবুও কিছু কিছু পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। যেমন :
•    দুই বছরের ছোট শিশুর ক্ষেত্রে
•    কারো অ্যালার্জি বা অ্যাজমা থাকলে
•    ভ্রু বা চোখের পাতায় নিকি হলে
•    গর্ভবতী বা স্তনদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে
•    বারবার উকুন হলে
•    ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে উকুনের চিকিৎসা সবচেয়ে কার্যকর ও নিরাপদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *