করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ১০৬

চীনে করোনাভাইরাস মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। এখন পর্যন্ত সেখানে ১০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে এক হাজার ৩শ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে এখন পর্যন্ত চার হাজার ১৯৩ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা। মূলত চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে গত বছরের ডিসেম্বরে প্রথম এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, নেপাল, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রেও লোকজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে।

হুবেই প্রদেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেখানে ২৪ জনের বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। সোমবার পর্যন্ত সেখানে এক হাজার ২৯১ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন এই ভাইরাসের নাম দিয়েছে ২০১৯ নোভেল করোনাভাইরাস। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে চীনে সফর করেছেন এমন লোকজনের মাধ্যমেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। সে কারণে অনেক দেশই এই ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে চীন সফরে নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা এনেছে।

করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ কী?

এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শুরুতে জ্বর ও শুষ্ক কাশি হতে পারে। এর সপ্তাহখানেক পর শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়। অনেক সময় নিউমোনিয়াও হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা লাগে। তবে এসব লক্ষণ মূলত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরই জানা গেছে।

সেক্ষেত্রে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার একদম প্রাথমিক লক্ষণ কী বা আদৌ তা বোঝা যায় কি-না তা এখনও অজানা। তবে নতুন এই করোনাভাইরাস যথেষ্ট বিপজ্জনক। সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের লক্ষণ থেকে এটি মৃত্যুর দুয়ার পর্যন্তও নিয়ে যেতে পারে।

এই ভাইরাস বিপজ্জনক হয়ে উঠছে কারণ এ বিষয়ে এখনও ভালোভাবে জানা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে এই ভাইরাস কতটা বিপজ্জনক এবং এটা একজন থেকে আরেকজনের শরীরে কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে এ বিষয়গুলো এখনও পরিষ্কার নয়।

এখন পর্যন্ত এটা জানা সম্ভব হয়েছে যে, এই ভাইরাস থেকে নিউমোনিয়া হবার আশঙ্কা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই এটা অনেক ভয়াবহ হতে পারে। অপরদিকে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষমতা আরও প্রবল হচ্ছে এবং সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন।

চীনে এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৫৮ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। অপরদিকে থাইল্যান্ডে ৮, জাপানে ৪, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪, যুক্তরাষ্ট্রে ৫, ভিয়েতনামে ২, সিঙ্গাপুরে ৫, মালয়েশিয়ায় ৪, নেপালে ১, ফ্রান্সে ৩, অস্ট্রেলিয়ায় ৫, কানাডায় ১, জার্মানিতে ১ এবং কম্বোডিয়াতে একজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এদিকে, চীনের উহান শহরের গোপন জীবাণু যুদ্ধাস্ত্র গবেষণাগার থেকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বলে দাবি করেছেন ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর সাবেক এক কর্মকর্তা। প্রাণঘাতী চীনা করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে উহানের গোপন ওই জীবাণু গবেষণাগারের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন তিনি।

অপরদিকে, মার্কিন সামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেছেন, জীবাণু অস্ত্র গবেষণাগার থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাকে আড়াল করতে চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখনও ভুয়া তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এতে বলা হচ্ছে, চীনের বিরুদ্ধে জীবাণু অস্ত্র ছড়িয়ে দেয়ার মিথ্যা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার করছে যুক্তরাষ্ট্র।

উহানের বেসামরিক এবং প্রতিরক্ষা গবেষণাগার থেকে নতুন করোনাভাইরাসের বিস্তার হয়েছে; এই অভিযোগ মোকাবিলার জন্য চীন প্রোপাগাণ্ডা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ওই মার্কিন কর্মকর্তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *