বাইক্কা বিল
হাইল হাওড়ের জীব বৈচিত্র্য (মূলত পাখি ও মাছ) রক্ষা করাই হল বাইক্কা বিল অভয়ারণ্যর মূল উদ্দেশ্য। এছাড়া এখানে আগত একজন পর্যটক যেন এই স্থানটি উপভোগ করার পাশাপাশি প্রকৃতিকে কাছে থেকে বুঝতে পারেন এবং জলাভুমি সংরক্ষণের গুরুত্ব বুঝতে পারেন সেটিও এই অভয়ারণ্যর আরেকটি উদ্দেশ্য। এখানকার অভয়ারণ্য ও সেটিকে ঘিরে তৈরি হওয়া সুযোগ সুবিধাসমূহ দেশের অন্যান্য স্থানেও আরও অভয়ারণ্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে রোল মডেল হতে পারে।
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে হাইল হাওড়ে প্রায় ১০০ হেক্টর জলাভুমির ওপর অবস্থিত এই অভয়ারণ্যটি কোন কোন মৌসুমে ৩০০০ হেক্টর থেকে ১২০০০ হেক্টর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। বইক্কা বিলে রয়েছে মূলত শাপলা ফুল এবং প্রায় পাঁচ থেকে আট বছর পূর্বে রোপণ করা জলজ গাছ। এই বিলে প্রায় ৯০ প্রজাতির মাছ বাস করে। তবে এখানে শীতকালে আগত অতিথি পাখিদের সংখ্যাও দিন দিন বেড়ে চলেছে।
এ পর্যন্ত এই অভয়ারণ্যতে প্রায় ১৪১ প্রজাতির পাখিদের দেখা মিলেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রায় ৯ প্রজাতির ফিশ ঈগল উইন্টার, প্রায় ৪৫০০ ফুল্ভাস হুইসটলিং হাঁস সহ শীতকালে আগত হাঁসদের বিশাল বহর। এছাড়া এখানে নিয়মিত গ্রেট স্পটেড ঈগল সহ বিভিন্ন ধরনের পাখিদের দেখা মেলে। এখানে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের দেখা কম মিললেও মেছোবাঘের দেখা পাওয়া যায়।
২০০৭ সালের শুরুতে এখানে স্থায়ী ভিত্তিতে উদাহরন ভিত্তিক ব্যাখ্যাসহ একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার চালু করা হয়। এটিই দেশের একমাত্র জলাভূমি যেখানে এ রকম সুবিধা প্রদান করার পাশাপাশি অভয়ারণ্যর মাধ্যমে প্রাণী জগতকে নিরাপদ করা হয়েছে। এমএসিএইচ প্রকল্প থেকে বেঁচে যাওয়া অর্থ দিয়ে ২০১০ সালে অন্যান্য সুযোগ সুবিধাসহ এখানে একটি ভিজিটর সেন্টার গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়। এখানে আগত দর্শনার্থীদের সংখ্যা সংরক্ষণ করা না হলেও প্রতি বছর এ সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়। এখানে আগত দর্শনার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্র, সরকারি চাকুরে, বিদেশী পর্যটকসহ নানা বয়সের নানা শ্রেণীপেশার মানুষ।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে কিভাবে শ্রীমঙ্গলে পৌছাবেন ইতিমধ্যেই উল্ল্যেখ করা হয়েছে। আপনি যদি মৌলভীবাজার থেকে আসেন তাহলে মৌলভিবাজার-শ্রীমঙ্গল মহাসড়কে ভৈরবগঞ্জ বাজারের প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে এখানে পৌঁছানোর নির্দেশনাটি আপনার ডান দিকে পরবে।
শ্রীমঙ্গল শহরের স্টেশন রোড থেকে সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে এই বিলে আসতে আপনার প্রায় ৪০০/- টাকা থেকে ৫০০/- টাকা খরচ পরবে। তবে ব্যাক্তিগত গাড়িতে আসলে ফোর হুইল ড্রাইভ জীপ অথবা এই জাতীয় ভারি গাড়িতে আসাই ভাল কারন এখানকার রাস্তা মোটেও ছোট গাড়ির জন্য উপযুক্ত নয়। মৌলভীবাজারের পথ ধরে প্রায় ৬ কিলোমিটার অগ্রসর হলে এই বিলে পৌঁছানোর নির্দেশিকা সম্বলিত সাইন বোর্ডটি আপনার বাম পাশে পরবে। আপনি সাইন বোর্ডের নির্দেশনা সম্বলিত রাস্তায় পৌছাবেন এছাড়াও দিক নির্দেশনার জন্য আপনি স্থানীয়দেরও সাহায্য নিতে পারেন।
এখানকার গ্রামের মেঠো পথে আপনি হাঁটতে পারেন অথবা সাইকেলও চালাতে পারেন। হাঁটতে চাইলে আপনাকে মহাসড়কের নির্দেশনা সম্বলিত স্থানে বাস থেকে নেমে পরতে হবে। তারপর হেঁটে বইক্কা বিলে পৌছাতে প্রায় ২ ঘণ্টা সময় লাগবে। বিলে পৌছানোর রাস্তাটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর গ্রামবাংলার চিরচেনা পথের মতই।
কোথায় থাকবেন
কি করবেন
১। টেলিস্কোপ এবং বাইনোকুলারের মাধ্যমে বইক্কা বিলের পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে এখানে আগত অতিথি পাখিদের পাশাপাশি এখানকার অন্যান্য প্রাণীদের পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। এখানকার পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে উঠতে খরচ হবে ৫/- টাকা।
২। বইক্কা বিলে নৌকা ভ্রমণও করতে পারেন। এখানে আধ ঘণ্টা এবং এক ঘণ্টার জন্য নৌকা ভ্রমন করতে খরচ হবে যথাক্রমে ২০/- টাকা এবং ৩০/- টাকা।
খাবার সুবিধা
বিলের আশেপাশে খাওয়ার ভাল ব্যবস্থা না থাকলেও পথের পাশে কিছু চায়ের দোকান রয়েছে। তাই সাথে করে খাবার নিয়ে যাওয়াই শ্রেয়।
ভ্রমণ টিপস
খুব সকালে সূর্যোদয়ের পরের দুই ঘণ্টা এবং সূর্যাস্তের পরের দুই ঘণ্টা এখানে পাখিদের দেখার জন্য সবচেয়ে ভাল সময়। বিকালে পাখি দেখার পরিকল্পনা করলে আপনাকে খুব সকালেই দিন শুরু করতে হবে এবং এতে করে দুপুর ৩ টার মধ্যেই আপনি বিলে পৌঁছে যাবেন এবং পাখিদের দেখার জন্য ও ছবি তোলার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাবেন। প্রাণী ও পাখিদের ছবি তোলার অভ্যাস থাকলে সাথে করে টেলিলেন্স আনতে ভুলবেন না। আপনি নৌকা ভাড়া করেও পাখিদের খুব কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারেন।