বেজোসের ফোন হ্যাক করলেন সৌদি যুবরাজ

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট থেকে একটি বার্তা পেয়েছিলেন আমাজনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেফ বেজোস। এরপরই তাঁর মোবাইল ফোনটি হ্যাকড হয়ে যায়। অজ্ঞাত সূত্রের বরাতে গার্ডিয়ান পত্রিকার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

হ্যাকিংয়ের ঘটনার পর বেজোসের ফোনটির ডিজিটাল ফরেনসিক বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আমাজন ইনকরপোরশনের প্রধানের ফোন থেকে তথ্য চুরির ওই ঘটনা ঘটে ২০১৮ সালের দিকে। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তার মোবাইল ফোনে মোহাম্মদ বিন সালমানের অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ভাইরাসযুক্ত ভিডিও ফাইল পাঠানো হয়েছিল।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানানো হয়, বেজোসের অ্যাকাউন্ট থেকে কোন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, তা জানা যায়নি। ২৫ বছর সংসার করার পর বেজোস ও ম্যাকেঞ্জির বিবাহ বিচ্ছেদের এক বছর পরে এ ধরনের তথ্য সামনে এল।

গত বছর বেজোসের সঙ্গে সাবেক টিভি উপস্থাপিকা লরেন সানচেজের বিবাহবর্হিভূত সম্পর্কের কথা কয়েকটি সিরিজ প্রতিবেদন করে প্রকাশ করে দ্য ন্যাশনাল এনকোয়ারার। বেজোসের পাঠানো অন্তরঙ্গ টেক্সট বার্তার ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদনগুলো প্রকাশিত হয়।

বিশ্বের শীর্ষ ধনী আমাজন ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস মার্কিন ট্যাবলয়েড সাময়িকী ন্যাশনাল এনকোয়ারারের মালিকের বিরুদ্ধে ‘নোংরা ছবি’ ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেলের অভিযোগ করেন।

বিবিসি ওই সময় এক প্রতিবেদনে জানায়, বেজোস অভিযোগ করেন, ওই সাময়িকীর পরিচালনা প্রতিষ্ঠান (প্যারেন্ট কোম্পানি) আমেরিকান মিডিয়া ইনকরপোরেশন (এএমআই) তাঁকে একটি অনুসন্ধান বা তদন্ত করতে নিষেধ করেছে। ওই ট্যাবলয়েড পত্রিকা কীভাবে তার ব্যক্তিগত ছবি সংগ্রহ করেছে, সে বিষয়ে তদন্ত করতে চান তিনি।

গত বছরের জানুয়ারিতে বেজোস ও তাঁর স্ত্রী ম্যাকেঞ্জি ছাড়াছাড়ির ঘোষণা দেন। ওই ঘোষণার পরপরই ন্যাশনাল এনকোয়ারার বেজোসের পরকীয়া সম্পর্ক নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

বেজোস তাঁর ব্লগ পোস্টে একটি ই-মেইলের কথা উল্লেখ করেন। যাতে এএমআইয়ের প্রতিনিধির পক্ষ থেকে তাঁকে হুমকি দিয়ে বলা হয়, বেজোস ও তাঁর প্রেমিকা সাবেক টিভি উপস্থাপিকা লরেন সানচেজের অন্তরঙ্গ ছবি প্রকাশ করা হবে। ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার মালিক বেজোস বলেছেন, এএমআই তাঁর কাছ থেকে মিথ্যা বিবৃতি দাবি করে, ন্যাশনাল এনকোয়ারারে তাঁকে ও তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়।

বেজোসের নিরাপত্তা পরামর্শক গেভিন ডে বেকার বলেন, তিনি মনে করেন এনকোয়ারার ওই সম্পর্ক ফাঁস করার আগে সৌদি আরবের সরকারের কাছে বেজোসের ফোনে ঢোকার সুযোগ ছিল। তবে তিনি তাঁর কথার পক্ষ কোনো প্রমাণ দেননি। তবে তিনি বলেন, আমাদের তদন্তকারী ও কয়েকজন বিশেষজ্ঞ করার পর এ তথ্য পেয়েছেন।

এনকোয়ারারের মালিকের সঙ্গে সৌদির ব্যবসার সম্পর্কের পাশাপাশি বেজোসের মালিকানাধীন ওয়াশিংটন পোস্টের সৌদি রাজতন্ত্রের সমালোচনা ও সাংবাদিক খাসোগি হত্যায় কঠোর প্রতিবেদনগুলোর কারণে সালমান বেজোসের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন।

গত বছরে ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের প্রতিবেদনে প্রকাশ করে সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার পেছনে যুবরাজের ঘনিষ্ঠ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা যুক্ত ছিল।

বেজোসের ফোন হ্যাক করে আমাজন করপোরেট খাতের কোনো স্পর্শকাতর তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি। বেকারের ওই অভিযোগের পর থেকে অবশ্য আমাজনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো কথাবার্তা বলা হয়নি। আমাজনের কোনো কর্মকর্তা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *