ব্যবসা বৃদ্ধির শীর্ষে সামিট পাওয়ার
বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশে বাধাঅনেক। সর্বশেষ ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান একদমই নিচের দিকে। তবুএর মধ্যেই দেশী অনেক প্রতিষ্ঠান দ্রুত বড় হচ্ছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হাজারকোটি টাকার ওপরে রাজস্ব আয় আছে এমন কোম্পানির অনেকেই গত কয়েক বছরে ঈর্ষণীয়ভাবেতাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে। তালিকাভুক্ত এসব কোম্পানির মধ্যে ২০১৮-১৯ হিসাববছরে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা বেড়েছে সামিটের। এ সময় কোম্পানিটির রাজস্ব প্রবৃদ্ধির হারছিল ৬৫ শতাংশ। এর পরই প্রকৌশল খাতের কোম্পানি জিপিএইচ ইস্পাত ৩৫ ও বিএসআরএমলিমিটেড ৩৩ শতাংশ রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত উৎপাদনও সেবা খাতের ২২০টি কোম্পানির ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৯ হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদনপর্যালোচনা করেছে বণিক বার্তা। এক্ষেত্রে ন্যূনতম ১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়করেছে এমন ২০টি কোম্পানিকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে, যার মধ্যে ১১টিই ঢাকা স্টকএক্সচেঞ্জের নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস ৩০-এ রয়েছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত স্থানীয়কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব বেড়েছে বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানি সামিটপাওয়ারের। কোম্পানিটি ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে ৩ হাজার ৪৭ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করেছে, যাপূূর্ববর্তী ২০১৭-১৮ হিসাব বছরে ছিল ১ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা। রাজস্ব আয় বাড়ার কারণেকোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা ৩৮ শতাংশ বেড়ে ৭২৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
সামিট পাওয়ারের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনাপরিচালক ফয়সাল করিম খান বলেন,গত বছর গাজীপুরে আমাদের ১৫০ ও ৩০০ মেগাওয়াটেরনতুন দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র যোগ হয়েছে। মূলত এ কারণেই আমাদের রাজস্ব আয় বেড়েছে।স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোরও বহুজাতিকদের মতোই বড় আকারের রাজস্ব আয়ের বিষয়ে আমিমোটেই বিস্মিত নই। কারণ আমরা বহুজাতিকদের মতোই করপোরেট সুশাসন অনুসরণ করছি। আমাদেরসক্ষমতা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার কারণেই কিন্তু সামিটের সঙ্গে জাপানেরজিরার মতো প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে।
সামিটের পরই সবচেয়ে বেশি রাজস্বপ্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রকৌশল খাতের কোম্পানি জিপিএইচ ইস্পাতের। ২০১৮-১৯ হিসাব বছরেকোম্পানিটির রাজস্ব আয় ১ হাজার ৩২৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যাআগের বছর ছিল ৯৮১ কোটি টাকা।
জিপিএইচ ইস্পাতের ব্যবস্থাপনা পরিচালকমোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, জিপিএইচইস্পাতের কারখানায় আমরা নতুন যে অত্যাধুনিক ইউনিট স্থাপন করেছি, তাতেআমাদের উৎপাদন সক্ষমতা অনেক বেড়ে গেছে। এ কারণে আমরা আগে থেকেই আমাদের সেলসনেটওয়ার্ককে শক্তিশালী করেছি। আমরা আমাদের বিদ্যমান উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় শতভাগব্যবহার করেছি। এছাড়া গুণগত মানের কারণে ক্রেতারা আমাদের পণ্যের ওপর আস্থারেখেছেন। মূলত এসব কারণে জিপিএইচ ইস্পাতের রাজস্ব বেড়েছে বলে জানান তিনি।
জিপিএইচ ইস্পাতের পরই রাজস্বপ্রবৃদ্ধিতে এগিয়ে আছে বিএসআরএম লিমিটেড। ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে কোম্পানিটির রাজস্ব৩৩ দশমিক ৬১ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার ৪৪০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যাআগের বছর ছিল ৩ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা। একই হিসাব বছরে বিএসআরএম গ্রুপের আরেকপ্রতিষ্ঠান বিএসআরএম স্টিলের রাজস্ব আয় ২৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার ১০৬ কোটিটাকা হয়েছে, যা ২০১৭-১৮ হিসাব বছরে ছিল ৪ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা।
সিমেন্ট খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে২০১৮-১৯ হিসাব বছরে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা বেড়েছে এমআই সিমেন্ট ও প্রিমিয়ারসিমেন্টের। এ সময়ে এমআই সিমেন্টের রাজস্ব আয় আগের বছরের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেড়ে ১হাজার ৪৬২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। প্রিমিয়ার সিমেন্টের রাজস্ব আয় ১৯ শতাংশ বেড়েহয়েছে ১ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা।
ওষুধ খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোরমধ্যে ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হয়েছে বেক্সিমকোফার্মাসিউটিক্যালসের। ওই বছর কোম্পানিটির রাজস্ব আয় প্রায় ২৯ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার২৮১ কোটি টাকা হয়েছে, যা আগের হিসাব বছরে ছিল ১ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা২০ শতাংশ বেড়ে ৩০৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
ওষুধ খাতের আরেক কোম্পানি রেনাটালিমিটেড ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে ২ হাজার ২২২ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে, যাআগের হিসাব বছরে ছিল ১ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরে কোম্পানিটির রাজস্বআয় বেড়েছে ১৯ শতাংশ। এ সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফাও ১৯ শতাংশ বেড়ে ৩৮২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
একই খাতের কোম্পানি এসিআই লিমিটেডেররাজস্ব আয় ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ বেড়ে ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে ৬৩১৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।অবশ্য রাজস্ব আয় বাড়লেও সাবসিডিয়ারি কোম্পানির লোকসানের কারণে গত বছর কোম্পানির ৮৯কোটি টাকা কর-পরবর্তী লোকসান হয়েছে।
অন্যদিকে একমি ল্যাবরেটরিজ ২০১৮-১৯হিসাব বছরে ১ হাজার ৬৩০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করেছে, যা আগের বছর ছিল ১ হাজার ৪৮১ কোটিটাকা। এক বছরে কোম্পানিটির রাজস্ব আয় বেড়েছে ১০ শতাংশ। একই সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফাবেড়ে ১৪৪ কোটি হয়েছে।
২০১৮-১৯ হিসাব বছরে ওষুধ খাতের আরেককোম্পানি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১১ শতাংশ।ওই বছর কোম্পানিটি ৫ হাজার ৮৬ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে, যাআগের হিসাব বছরে ছিল ৪ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা। রাজস্বের পাশাপাশি কোম্পানিটির কর-পরবর্তীমুনাফাও প্রায় ৯ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ২৬৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের নির্বাহীপরিচালক এবং হিসাব ও অর্থ বিভাগের প্রধান মো.কবির রেজা বলেন, ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে দেশে ওষুধ খাতেরব্যবসায় ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে,যা আমাদের রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলেছে।তাছাড়া আমরা সেলস ও প্রমোশনাল খাতে আগের তুলনায় কিছুটা ব্যয় বাড়িয়েছি। এটিও রাজস্বআয় বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে বলে আমি মনে করি।
জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের তালিকাভুক্তকোম্পানির মধ্যে এমজেএলবিডির রাজস্ব আয় ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে আগের বছরের তুলনায়প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ১৪৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তীমুনাফাও আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৮ শতাংশ কমে ২১০ কোটি টাকা হয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ সঞ্চালনকোম্পানি পাওয়ার গ্রিডের রাজস্ব আয় ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে আগের বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশবেড়ে ১ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা হয়েছে। এ সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা৭৬ শতাংশ বেড়ে ৩৮৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
বিদ্যুৎ খাতের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিডেসকো ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে ৪ হাজার ৭৫ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করেছে, যাআগের হিসাব বছরে ছিল ৩ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে কোম্পানিটির রাজস্ব আয়বেড়েছে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। রাজস্ব বাড়ার পাশাপাশি কোম্পানিটির কর-পরবর্তীমুনাফাও ১৩৪ শতাংশ বেড়ে ১১০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশনঅ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের রাজস্ব আয় আকারের দিক দিয়ে সবার ওপরেরয়েছে। ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে কোম্পানিটির রাজস্ব আয় হয়েছে ১৪ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা, যাআগের বছর ছিল ১৪ হাজার ২১৬ কোটি টাকা। গত বছর কোম্পানিটির রাজস্ব আয় কিছুটা কমলেওকর-পরবর্তীমুনাফা প্রায় ৩৭ শতাংশ বেড়ে ৪৬৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানি ইউনাইটেডপাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের রাজস্ব আয় ২০১৮-১৯হিসাব বছরে আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কমে ১ হাজার ১২৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। তবেআলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা প্রায় ৩ শতাংশ বেড়ে ৭৮৫ কোটি টাকা হয়েছে।
চামড়া খাতের কোম্পানি এপেক্সফুটওয়্যারের রাজস্ব আয় ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে আগের তুলনায় কিছুটা কমে ১ হাজার ৫৮০কোটি টাকা হয়েছে। এ সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফাও ৫ শতাংশ কমে ১২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
দেশের শীর্ষস্থানীয় বিস্কুটউৎপাদনকারী কোম্পানি অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে ১ হাজার ৩৭৩ কোটিটাকার রাজস্ব আয় করেছে। আগের বছরে কোম্পানিটির রাজস্ব আয় হয়েছিল ১ হাজার ২৯২ কোটিটাকা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা ৪ শতাংশ বেড়ে ১৮৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
কাগজ খাতের কোম্পানি বসুন্ধরা পেপারমিলসের রাজস্ব আয় ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে ১ হাজার ১০৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যেখানেআগের বছর কোম্পানিটির রাজস্ব আয় হয়েছিল ১ হাজার ৮২ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানেকোম্পানিটির রাজস্ব আয় বেড়েছে ২ শতাংশ।
শীর্ষ ২০-এর তালিকায় থাকা বেক্সিমকোগ্রুপের দুই কোম্পানির মধ্যে বেক্সিমকো লিমিটেডের রাজস্ব আয় সামান্য বেড়ে ২০১৮-১৯হিসাব বছরে ২ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা হয়েছে,যা আগের বছর ছিল ২ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা। এ সময়েকোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফাও প্রায় ১৩ শতাংশ বেড়ে ১৪৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।