নয় ছয় নিয়ে যা বললেন অর্থমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রীকে সুদহার কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ব্যাংকের চেয়ারম্যান পরিচালকরা। সুযোগ-সুবিধাও নিয়েছে। নানা টালবাহানায় দেড় বছরেও তা বাস্তবায়ন করেননি। এবার তাদেরই সঙ্গেই বৈঠক করে নয়-ছয় বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

তিনি জানিয়েছেন, নতুন বছরের (২০২০) এপ্রিলের ১ তারিখ থেকে ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ এবং আমানতের সুদ ৬ শতাংশ বাস্তবায়ন হবে।

সোমবার সন্ধ্যায় গুলশানে ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবি এবং ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এসব জানান।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী ১ লা জানুয়ারি থেকে আমানতে ৬ ও ঋণে ৯ শতাংশ সুদহার চালুর কথা ছিল। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি তিনি আরও কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আজকে তাদের সাথে বৈঠক করেছি। এটি (নয়-ছয় সুদহার) চালু করতে তারা আরও কিছুদিন সময় চেয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে আরও দুই মাস সময় দেওয়ার কথা বলা হয়। তারা আরও এক মাস সময় বেশি চেয়েছে। সব মিলিয়ে আগামী বছরের অর্থাৎ ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে এটি চালু করা যাবে। সুদহার শুধু ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সকল প্রকার ব্যাংক ঋণে ৯ শতাংশ এবং আমানতে ৬ শতাংশ বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি।

নয়-ছয় বাস্তবায়ন করলে ব্যাংকের কোনো ক্ষতি হবে না জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকারের কাছে যে টাকা আছে তার ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে রাখা হবে। এটি করা হবে মূলধনের ভিত্তিতে। যার মূলধন বেশি, সে বেশি আমানত পাবে। এটি যাতে সবাই সঠিকভাবে পায়; তার নজরদারি করা হবে। অন্যদিকে আমানত ও ঋণের সুদহারের ক্ষেত্রে দশমিক ৫ শতাংশের ব্যবধান থাকবে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে। আগামী এক দুই দিনের মাধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে সার্কুলার জারি করবে।

বিএবি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, রোববার রাতে প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, গভর্নর এবং আমি একত্রে বসেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শুধু শিল্প-কলকারখানা নয় সব ঋণের সুদহার হতে হবে নয় শতাংশ। সেজন্যই আমরা কিছুদিন সময় চেয়েছিলাম। তিনি সময় দিয়েছেন। দেশের স্বার্থে, অর্থনীতির স্বার্থে আগামী এপ্রিল থেকে এটি চালু হবে বলে জানান ব্যাংকের চেয়ারম্যানদের এ নেতা।

এর আগে ২০১৮ সালের ২০ জুন ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছিল বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। যা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করেনি। উল্টো অর্থ সংকটে ব্যাংকগুলো সুদহার বাড়িয়েছে।

এদিকে চলতি মাসের ১ ডিসেম্বর ব্যাংকের চেয়ারম্যান-এমডিদের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এতে ‘নয়-ছয়’ সুদ হার বাতিল করে নির্দিষ্ট খাতের ঋণে সর্বোচ্চ (সীমা) ৯ শতাংশ সুদ হার বেঁধে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে এটি বাস্তবায়নে কয়েকটি দাবি করেন ব্যাংক পরিচালকরা।

বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, জানুয়ারি থেকে সিঙ্গেল ডিজিট কার্যকর হবে। কীভাবে কার্যকর হবে তা নির্ধারণ করার জন্য একটি কমিটি গঠন করার ঘোষণা তিনি। অর্থমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামানকে প্রধান করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখার বিষয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটি বাস্তবায়নের ওপরও জোর দেওয়া হয়। পাশাপাশি শিল্পঋণে ৯ শতাংশ সুদ কার্যকর বিষয়ে সুপারিশ করা হয়। আর আমানতের বিষয়ে বলা হয়েছে, এই সুদ হার নির্ধারণ করবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

পরে কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শুধু উৎপাদনশীল খাতে তথা শিল্পঋণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদ। তবে এটি ১ জানুয়ারি বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *