তোতলামি দূর করার ম্যাজিক টিপস
অনেকেই ভাবে মুখে পয়সা দিলে তোতলামি কমে। এজন্য পরিবারের সদস্যরা যে শিশুটি তোতলাভাবে কথা বলে তার মুখের ভেতরে হয়তো পয়সা দিয়ে রাখে। তবে আসলেই কী মুখের ভেতর পয়সা দিলে তোতলামি কমে? আসুন জানি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, আসলে তোতলামি একটি জন্মগত ত্রুটি। এটি কেন হয় তার সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি।
ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ আরো বলেন, ‘অনেকে মনে করেন মুখে পয়সা দিলে হয় তো তোতলামি কমে। তবে এর বৈজ্ঞানিক কোনো ব্যাখা নেই। মানুষের ধারণা হলো, পয়সা ঢুকিয়ে রাখলে হয়তো মুখের ব্যায়াম হয়, পেশি শিথিল হয়। তবে এই পদ্ধতি আসলে তোতলামি কমাতে কোনো কাজ করে না।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিকেল অফিসার ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু বলেন, ‘আসলে তোতলামি হওয়ার মূল কারণ কী সেটি এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে বিভিন্ন গবেষণায় এর কিছু কারণ সম্বন্ধে ধারণা করা হয়েছে। বংশগত কারণে এটি হতে পারে। মা-বাবা, ভাইবোন অর্থাৎ যারা ফার্স্ট রিলেটিভ তাদের কারো এই সমস্যা থাকলে শিশুর মধ্যে এটি হওয়ার প্রবণতা তিনগুণ বেশি থাকে।
জিনগত কারণে এটি হতে পারে। ২০১০ সালের যুক্তরাজ্য, পাকিস্তানের ৬০০ জন লোকের ওপর করা একটি গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, তিনটি জিনের রূপান্তরের কারণে এই সমস্যা হতে পারে। তবে এটা নিয়ে আরো গবেষণা হচ্ছে। গবেষণাটি পূর্ণাঙ্গভাবে করা হলে এর কারণ সম্বন্ধে আরো নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
চিকিৎসকরা মনে করেন, মানসিক কারণেও তোতলামির সমস্যা হতে পারে। যে শিশুটি অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ভয়, উৎকণ্ঠা এসবের মধ্যে থাকে তার এই সমস্যা হতে পারে।
এ ছাড়া নিউরোলজিক্যাল কারণেও এই সমস্যা হতে পারে। আমরা যে কথা বলি, উচ্চারণ করি, সেটা মস্তিস্কের ব্রেকাস অংশ থেকে নিয়ন্ত্রণ হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের তোতলামি থাকে তাদের এই অংশ কম সক্রিয় থাকে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিকেল অফিসার ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু বলেন, ‘এই সমস্যা চার থেকে আট বছরের শিশুদের বেশি হয়। তবে এদের মধ্যে ৮০ শতাংশের ক্ষেত্রেই বড় হলে সমস্যাটি সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। আর ২০ শতাংশের ক্ষেত্রে রোগটি থেকে যায়। যদি কারো তোতলামি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে থাকে তবে অবশ্যই অভিভাবকদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।’
কিন্তু মুখে পয়সা বা ধাতব কিছু রাখলে তোতলামি সেরে যায়, এই কথা কি সমর্থনযোগ্য? উত্তরে ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু বলেন, ‘আসলে মুখের ভেতরে পয়সা দিয়ে রাখলে তোতলামি ভালো হয়- বিষটির কোনো ভিত্তি নেই। গবেষণায় এ ধরনের কোনো তথ্য কখনো পাওয়া যায়নি। আসলে এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা।’
অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘কোনো ধরনের ভ্রান্ত ধারণায় বিশ্বাস না করে ব্যক্তিটিকে যদি সঠিক বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসা দেওয়া হয় সেটা অনেক বেশি কাজে লাগে। তোতলামি দূর করতে স্পিচ থেরাপি দেওয়া যেতে পারে। যাদের তোতলামির সমস্যা কম রয়েছে তাদের স্পিচ থেরাপি দিলে রোগটি অনেক কমে যায়। আর যাদের সমস্যা জটিল তাদের একবারে চলে না গেলেও উন্নতি হয়।’
ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু বলেন, ‘তোতলামির সমস্যা নিয়ন্ত্রণযোগ্য। স্পিচ থেরাপির মাধ্যমে এটি অনেক নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং কিছু ক্ষেত্রে সাইকোথেরাপি বেশ কাজে লাগে।’
চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন তোতলামি কমাতে মুখের বিভিন্ন ব্যায়াম করা যেতে পারে। চোয়াল, গাল , ঠোঁট, জিহ্বা এগুলোর ব্যায়াম করতে হবে। মুখ হা করলে চোয়ালের ব্যায়াম হবে। জিহ্বার ব্যায়াম করতে জিহ্বা পেছন দিকে উল্টো করে তালুতে ঠেকাতে হবে। আবার সামনে আনতে হবে। এভাবে এই ব্যায়ামগুলো কয়েকবার করতে হবে।
তোতলামির সমস্যা নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই জানিয়ে ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিদের এই সমস্যার ছিল। এদের মধ্যে বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন, দার্শনিক অ্যারিস্টটল- এদের এই সমস্যা ছিল। এই সমস্যা নিয়েও ভালোভাবে জীবন যাপন করা যায়। তবে এর জন্য পরিবারকে ব্যক্তি বা শিশুটির প্রতি সহোযোগিতাপূর্ণ মানসিকতা তৈরি করতে হবে। মা-বাবার শিশুটির ওপর বিরক্ত না হয়ে তাকে সাহায্য করতে হবে। অনেক সময় পরিবারের লোকজন শিশুটিকে দ্রুত সুস্থ করে তুলতে হয়তো কথা বলার সময় শিশুটিকে বকাঝকা করতে থাকে। এর ফলে শিশুটি আরো বেশি হীনম্মন্যতায় ভুগতে থাকে। এতে সে ভীত হয়ে পড়ে। এটা ঠিক নয়। চিকিৎসা এবং মানসিক সাহায্যই পারে ব্যক্তি বা শিশুটিকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসতে।’