আবরার হত্যা: প্রতিবাদে যা বললেন শাওন

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন দেশের মানুষ। নানা পেশার মানুষ যার যার অবস্থান থেকে এ হত্যার বিচার চাইছেন। সেই প্রতিবাদী মিছিলেই শামিল হয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন।

বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক (তড়িৎ প্রকৌশল) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন আবরার ফাহাদ। গত রোববার দিবাগত রাতে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা পিটিয়ে তাকে মেরে ফেলে। ওই দিন রাত ৩টায় বুয়েটের শেরেবাংলা হলের একতলা থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ির মাঝ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার মরদেহে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

মৃত আবরারের ক্ষত-বিক্ষত পিঠের ছবি ছড়িয়ে গেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এ ছবি দেখে চোখের পানি ফেলছেন অনেকেই। অনেকেই দিচ্ছেন আবেগঘন স্ট্যাটাস।

আববার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে এক দীর্ঘ স্টাটাস দিয়েছেন মেহের আফরোজ শাওন। লিখেছেন, ‘বুয়েটের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগেরই ‘৬৯ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন আমার বাবা। সারাজীবন তার মুখে গর্বের সাথে উচ্চারিত হওয়া এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হওয়ার স্বপ্ন ছিল আমারও। ভর্তি পরীক্ষার ফরম তোলার সময় ঢাকার বাইরে থাকায় পরীক্ষাই দিতে পারিনি আমি! সেই দুঃখ ভোলার জন্য প্রায়ই ভেবেছি পুত্রদ্বয়ের যেকোনো একজন যেন এই মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অংশীদার হতে পারে।

এ প্রতিষ্ঠানের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগেরই ছাত্র ছিল আবরার। আবরারের কথা ভাবি আর আমার পুত্রদ্বয়ের মুখের দিকে তাকাই। আমার বুক কাঁপে। বাচ্চা দুটোর পিঠ হাত-পা’র ওপর হাত বুলিয়ে দেই। ছোটবেলায় এরকম ছোট ছোট হাত পা-ই তো ছিল আবরারের! তার মা কত রাত পিঠে হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে তাকে!

একেকটা আঘাতে ছেলেটা কি ‘মা গো’ বলে চিৎকার দিয়েছিল? ‘মা গো’ ডাক শুনে খুনি ছেলেগুলোর কি একটুও নিজের মার কথা মনে পড়েনি। ঠিক কতবার। কতক্ষণ ধরে, কতটুকু আঘাত করলে ২০-২১ বছরের একটা তরুণ ছেলে মরেই যায়। আমি আর ভাবতে পারি না।

ফেসবুকে আবরারের পিঠটার ছবি দেখলাম। কি ভয়ংকর। কি নৃশংস। কি কষ্ট।
এ ছবিটা যেন তার বাবা-মা’র চোখে না পড়ে। ভুল বলেছি। আবরারের বাবা, আবরারের মা তাদের বাবুটার ক্ষতবিক্ষত পিঠে হাত বুলিয়ে যেন অভিশাপ দেন মানুষের মতো দেখতে খুনি অমানুষগুলোকে। তাদের অভিশাপে যেন ধ্বংস হয়ে যায় এই অসুস্থ সমাজ।

নুসরাতকে ভুলে গিয়েছি। আবরারকেও ভুলে যাব বিচার চাই বলে লাভ আছে কিনা জানি না তবুও বিচার চাই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *