সঞ্চয়পত্রে ৫% উৎসে কর এ সপ্তাহেই কার্যকর

সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের উৎসে কর কমানোর ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ঘোষণা ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী এটি কার্যকর হবে প্রজ্ঞাপন জারির দিন থেকে।

অর্থমন্ত্রী সচিবালয়ে গত মাসে সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দেন যে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর সরকার উৎসে কর নেবে ৫ শতাংশ। বিনিয়োগের পরিমাণ এর বেশি হলেই উৎসে কর ১০ শতাংশ হবে।

কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ নেওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি হবে চলতি সপ্তাহেই। ১ জুলাই থেকে তা কার্যকর হচ্ছে না। বরং যেদিন প্রজ্ঞাপন জারি হবে, সেদিন থেকেই তা কার্যকর হবে। এতে সঞ্চয়পত্রের ক্ষুদ্র গ্রাহকদের সাশ্রয় হবে।

চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছর শুরুর দুই মাস শেষ হতে চললেও সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের উৎসে কর সমস্যার সমাধান এখনো হয়নি। অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার পরও পার হলো ২৬ দিন। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের মুনাফায়ও গ্রাহকেরা উৎসে কর দিয়ে গেছেন ১০ শতাংশ হারে।

অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে প্রজ্ঞাপন কবে জারি হবে—জানতে চাইলে এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া  বলেন, ‘সব কাজ চূড়ান্ত। আগামী সপ্তাহের যেকোনো দিন প্রজ্ঞাপন জারি হবে।’

সঞ্চয়পত্র হচ্ছে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আর্থিক পণ্য। অথচ এ বিষয়ে দপ্তরই রয়েছে অন্ধকারে। কবে প্রজ্ঞাপন হবে, কোন দিন থেকে কার্যকর হবে—অধিদপ্তরের কেউ গ্রাহকদের এসব প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে পারছেন না।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শামসুন্নাহার বেগম বলেন, ‘আমরাও প্রজ্ঞাপনের অপেক্ষায় আছি।’

অর্থমন্ত্রীর ২৯ জুলাইয়ের ঘোষণার পর ৩১ জুলাই এনবিআর চেয়ারম্যানও সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন, যাঁরা এরই মধ্যে বেশি উৎসে কর দিয়ে ফেলেছেন, তাঁরা তা সমন্বয় করতে পারবেন।

অন্যদিকে এনবিআরেরই দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলছেন, সঞ্চয়পত্রের মুনাফার উৎসে কর চূড়ান্ত দায় হিসেবে বিবেচিত হয়। একবার এই কর কেটে নেওয়া হলে তা আর সমন্বয় করা যায় না। যেসব গ্রাহকের করযোগ্য আয় নেই, কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নেই এবং যাঁরা বছর শেষে রিটার্ন দেন না; কেটে নেওয়া বাড়তি টাকা তাঁদের ফেরত দেওয়ার সুযোগও নেই।

এ বিষয়ে গতকাল এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, সবার সঙ্গে কথা বলে যেটা জানা গেছে, যেদিন প্রজ্ঞাপন জারি হবে, সেদিন থেকেই তা কার্যকর হওয়া উচিত হবে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা ১ জুলাই থেকে কার্যকর করার বিষয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেই প্রজ্ঞাপন জারি করতে সময় লাগছে। এনবিআরের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতও চাওয়া হয়েছে।

সিদ্ধান্ত বদল চারবার

অর্থমন্ত্রী গত ১৩ জুন সঞ্চয়পত্রের উৎসে কর নিয়ে বাজেট বক্তব্যে অবশ্য কিছু বলেননি। একই দিন দেওয়া অর্থবিলে দেখা যায়, ১ জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে কর ১০ শতাংশ। এই হার নিয়ে সংসদে মৃদু হইচই হলেও অর্থবিল পাস হওয়ার সময় প্রস্তাবিত হারই বহাল থাকে।

বাজেট পাসের পর ২ জুলাই সঞ্চয় অধিদপ্তর এবং পরে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারি করে জানায়, নতুন-পুরোনো সব সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপরই উৎসে কর ১০ শতাংশ।

পরে এনবিআর গত ৪ জুলাই আরেক প্রজ্ঞাপন জারি করে বলেছে, পেনশনার সঞ্চয়পত্রে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ থাকলে উৎসে কর দিতে হবে না। এই সিদ্ধান্ত আর থাকছে না। চলতি সপ্তাহে প্রজ্ঞাপন জারির পর দেখা যাবে, সব সঞ্চয়পত্রেরই পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের মুনাফায় উৎসে কর ৫ শতাংশ। আর বিনিয়োগ ৫ লাখ টাকার বেশি থাকলেই ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর দিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *