বিদেশী অর্থায়ন ছাড়াই এসডিজি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, বাংলাদেশে অর্থায়নের বিষয়ে জাতিসংঘ কিংবা উন্নত দেশগুলো যে প্রতিশ্রুতি দেয়, তা কখনো পরিপূর্ণভাবে পূরণ করা হয় না। তাই বলে আমাদের হাত গুটিয়ে বসে থাকলে হবে না। এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অর্থায়নের বিষয়ে আমরা বিদেশনির্ভর থাকব না। আমরা কারো কাছ থেকে দান কিংবা খয়রাত চাই না। আমরা কাজ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ চাই। তাই বিদেশী অর্থায়ন ছাড়াই এসডিজি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ।
গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। সম্প্রতি জাতিসংঘের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ‘গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর ইফেক্টিভ ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন (জিপিইডিসি)’ শীর্ষক সম্মেলনে অংশগ্রহণের বিভিন্ন দিক ও অর্জনের বিষয় তুলে ধরতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এ সময় পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. নূরুল আমিন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মনোয়ার আহমেদ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, আইএমইডির সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়েজ উল্লাহ, পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) বেগম সাহিন আহমেদ চৌধুরী, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) শামীমা নারগিস উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে জাতিসংঘ অনেক উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু সেখান থেকে অর্থ পাওয়া যায় না। তাই আমরা নিজেদের অর্থে এবং সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে যাচ্ছি। এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে জাতিসংঘে। তাছাড়া সৃজনশীল কাজ হিসেবে এসডিজি ট্রাকার তৈরির বিষয়টিও তুলে ধরা হয়। তবে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সবার সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, হাঙ্গেরি আমাদের পানি ব্যবস্থাপনায় সহায়তা দিতে চেয়েছে। সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশীদের এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আমি তাদেরও বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ভালো হচ্ছে। রাজস্ব আদায় বাড়ছে, সুতরাং এসডিজি বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা হবে না।
এমএ মান্নান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় এরই মধ্যে আমরা একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছি। এসডিজির বিষয়টি বাজেটের সঙ্গে যুক্ত করায় সেটির বাস্তবায়ন সহজ হচ্ছে।
৯-১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত জিপিইডিসি সম্মেলনের সিনিয়র লেভেল মিটিং এবং হাই-লেভেল পলিটিক্যাল ফোরাম অন সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট-সংক্রান্ত বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রীর নেতৃত্বে দুটি প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করে। এই দলে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীও ছিলেন। জিপিইডিসির উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিনিধি হিসেবে সম্মেলনে নেতৃত্ব দেয় বাংলাদেশ। উন্নত দেশের নেতৃত্বে ছিল সুইজারল্যান্ড এবং অনুন্নত দেশের নেতৃত্বে মালয়।
ড. শামসুল আলম বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে সারা বিশ্বের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অর্থায়ন। তাই পিপিপি (সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব) এবং সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বাড়াতে হবে রাজস্ব আহরণও।
তিনি বলেন, আগামীতে শুধু আয় দিয়ে দারিদ্র্য পরিমাণের পদ্ধতিটি বাদ দেয়া হবে। কেননা এখন দারিদ্র্যের বহুমাত্রিকতা দিয়ে তা পরিমাপের প্রথা চালু হয়েছে। একজন মানুষ কোথায় বাস করে, তার শিক্ষা, চিকিৎসা কী ধরনের ইত্যাদি প্রায় ১০টি সূচক দিয়ে অনেক দেশ দারিদ্র্যের হার পরিমাপ করে। আমাদেরও সেদিকে যেতে হবে। তবে বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এগিয়ে রয়েছে।
গ্র্যাজুয়েশনের পর দেশের আর্থিক সক্ষমতায় কোনো ধরনের ঝুঁকি তৈরি করবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমদ বলেন, এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে হয়তো স্বল্প সুদে ঋণ এবং কিছু সুবিধা পাওয়া যাবে না। কিন্তু ঋণপ্রাপ্তির অনেক পথই খুলে যাবে। তাছাড়া জিএসপি সুবিধা না থাকলেও জিএসপি প্লাসতো আছেই। তবে সাময়িকভাবে সহজ শর্তের কিছু ঋণ কমলে সার্বিক পরিমাণে সেটি বাড়বে। সুতরাং ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তাছাড়া স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য একটি মূল্যায়ন করা হচ্ছে।