বৈশ্বিক তুলা উৎপাদন সাড়ে ১২ কোটি বেল ছাড়াবে
বিশ্বব্যাপী তুলার চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে উৎপাদনকারী দেশগুলো পণ্যটির উৎপাদনে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে। দেশে দেশে তুলা উৎপাদনে উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার বাড়ানো হয়েছে। কৃষকদের বিশেষ প্রণোদনা দেয়াসহ বাজার ব্যবস্থা সহজ করতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে অনেক দেশ। এসব উদ্যোগের প্রভাবও দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।
আসছে ২০১৯-২০ মৌসুমে বৈশ্বিক তুলা উৎপাদন প্রত্যাশার তুলনায় বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিস। প্রতিষ্ঠানটির সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০১৯-২০ মৌসুমে বিশ্বব্যাপী প্রাক্কলনের তুলনায় অতিরিক্ত ৭০ লাখ বেল (প্রতি বেলে ৪৮০ পাউন্ড) তুলা উৎপাদন হতে পারে। একই সঙ্গে উল্লিখিত মৌসুমে তুলার বৈশ্বিক ব্যবহার ২ দশমিক ৬ শতাংশ বাড়তে পারে। খবর এগ্রিমানি ও কমোডিটি অনলাইন।
ইউএসডিএর পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০১৯-২০ মৌসুমে বিশ্বব্যাপী সব মিলিয়ে ১২ কোটি ৫৫ লাখ বেল তুলা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানটির আগের প্রাক্কলনের তুলনায় ৭০ লাখ বেল বেশি। চলতি বছরের শুরুতে ইউএসডিএর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০১৯-২০ মৌসুমে বিশ্বব্যাপী ১১ কোটি ৮৫ লাখ বেল তুলা উৎপাদনের প্রাক্কলন করা হয়েছিল। মূলত বিগত সাত বছরের মধ্যে এ মৌসুমে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি জমিতে তুলা আবাদ করা হচ্ছে। এ কারণে তুলা উৎপাদন পূর্বাভাস আগের প্রাক্কলনের তুলনায় বাড়িয়ে দিয়েছে ইউএসডিএ।
তুলা উৎপাদনকারীদের বৈশ্বিক তালিকায় ভারত শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। ইউএসডিএর পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০১৯-২০ মৌসুমে দেশটিতে ২ কোটি ৮৫ লাখ বেল তুলা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। আগের মৌসুমে ভারতে মোট ২ কোটি ৫৫ লাখ বেল তুলা উৎপাদন হয়েছে। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে পণ্যটির উৎপাদন বাড়তে পারে ৩০ লাখ বেল। মহারাষ্ট্র, উত্তর প্রদেশসহ ভারতের কয়েকটি রাজ্যে তীব্র খরা চলছে। বৃষ্টির দেখা মেলেনি অনেকদিন। এর জের ধরে চলতি মৌসুমে দেশটিতে তুলা উৎপাদন ১২ দশমিক ৭ শতাংশ কমলেও ২০১৯-২০ মৌসুমে প্রায় ১২ শতাংশ বাড়তে পারে।
তবে ২০১৯-২০ মৌসুমে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ তুলা উৎপাদনকারী দেশ চীনে পণ্যটির উৎপাদন ১ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার বেলে অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ইউএসডিএ। অন্যদিকে ২০১৯-২০ মৌসুমে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ তুলা উৎপাদনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যটির উৎপাদন ১৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়ে ২ কোটি ২০ লাখ বেলে উন্নীত হতে পারে। ২০০৪-০৫ মৌসুমের পর এটাই দেশটিতে তুলার সর্বোচ্চ উৎপাদন।
২০১৯-২০ মৌসুমে ব্রাজিলের তুলা উৎপাদন খাতে মন্দা ভাব দেখা যেতে পারে। এ সময় দেশটিতে সব মিলিয়ে ১ কোটি ২০ লাখ বেল তুলা উৎপাদন হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ইউএসডিএ, যা আগের মৌসুমের তুলনায় ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কম। মূলত প্রতিকূল আবহাওয়া ব্রাজিলে তুলা উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। একই চিত্র দেখা যেতে পারে অস্ট্রেলিয়াতেও। ২০১৯-২০ মৌসুমে দেশটিতে তুলা উৎপাদন ১২ শতাংশ কমে ২২ লাখ বেলে নেমে আসতে পারে। আগের মৌসুমে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ২৫ লাখ বেল তুলা উৎপাদন হয়েছে।
এদিকে ২০১৯-২০ মৌসুমে পাকিস্তানে তুলা উৎপাদনের পরিমাণ ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৮০ লাখ বেলে, যা আগের মৌসুমের তুলনায় ৩ লাখ বেল বেশি। একই সময়ে উজবেকিস্তানে পণ্যটির উৎপাদন ৫ দশমিক ৩ শতাংশ কমে ৩১ লাখ ২৫ হাজার বেলে নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইউএসডিএর পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০১৯-২০ মৌসুমে তুলার বৈশ্বিক ব্যবহার দাঁড়াতে পারে ১২ কোটি ৫৯ লাখ বেলে, যা আগের মৌসুমের তুলনায় ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। এ সময় চীনে তুলার ব্যবহার দাঁড়াতে পারে ৪ কোটি ১৫ লাখ বেলে। ভারতে ব্যবহার হতে পারে ২ কোটি ৫৩ লাখ বেল তুলা। বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামে পণ্যটির ব্যবহার বেড়ে দাঁড়াতে পারে যথাক্রমে ৮৪ লাখ ১০ হাজার বেল ও ৭৬ লাখ বেলে।