বৈশ্বিক চাহিদা প্রবৃদ্ধি কমার আশঙ্কা

চীন-যুক্তরাষ্ট্রের চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ বৈশ্বিক রাজনীতি থেকে শুরু করে বাণিজ্য, অর্থনীতি থেকে কূটনীতি—সবখানেই অনিশ্চয়তার জন্ম দিয়েছে। কমিয়ে দিয়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির গতি। পরিস্থিতি দিন দিন এমন পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে, বিশ্লেষকরা বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের মন্দার আশঙ্কা দেখছেন। বাদ যায়নি জ্বালানি খাতও।

বাণিজ্যযুদ্ধের জের ধরে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে আসায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সম্মিলিত চাহিদা কমে আসতে পারে। এ সম্ভাবনা মাথায় রেখে চলতি বছরের জন্য জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদায় সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন কমিয়ে এনেছে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ)।

তবে চলতি বছর কমলেও ২০২০ সাল নাগাদ অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা প্রবৃদ্ধি ফের চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে। খবর মার্কেট ওয়াচ ও অয়েলপ্রাইসডটকম।

প্যারিসভিত্তিক আইইএর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা প্রবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে দৈনিক ১২ লাখ ব্যারেলে, যা প্রতিষ্ঠানটির আগের প্রাক্কলনের তুলনায় প্রতিদিন গড়ে এক লাখ ব্যারেল কম। তবে চলতি বছর কমে এলেও ২০২০ সাল নাগাদ অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা প্রবৃদ্ধি ফের চাঙ্গা হয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৪ লাখ ব্যারেলে উন্নীত হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। ওই সময় ধারণা করা হয়েছিল, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বার্থে উভয় দেশই এ বিরোধ থেকে সরে আসবে।

তবে বাস্তবে উল্টো চিত্রই দেখা গেছে। বিরোধ নিষ্পত্তির বদলে যত দিন যাচ্ছে তত নতুন নতুন বিরোধে জড়াচ্ছে ওয়াশিংটন ও বেইজিং। চীনা পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে। এ পরিস্থিতিতে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ সহসাই নিরসন হচ্ছে না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ পরিস্থিতি বিশ্ববাণিজ্য ও অর্থনীতিকে উদ্বেগের মধ্যে ফেলেছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতের গতি শ্লথ হয়ে এসেছে। কমে গেছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিও। সামগ্রিক বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা কড়া নাড়ছে। উৎপাদন খাত আগের তুলনায় শ্লথ হয়ে আসায় দেশে দেশে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা কমে গেছে। মূলত এ কারণেই চলতি বছরের জন্য জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন কমিয়ে এনেছে ইআইএ। তবে আগামী বছর নাগাদ বাণিজ্যযুদ্ধের দামামা তুলনামূলক কমে এলে জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা প্রবৃদ্ধি ফের চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে চলতি বছরের মে মাসে ওপেকভুক্ত দেশগুলোয় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সম্মিলিত উত্তোলন দাঁড়িয়েছে প্রতিদিন গড়ে ২ কোটি ৯৮ লাখ ৭৬ হাজার ব্যারেলে। এর মধ্য দিয়ে ওপেকভুক্ত দেশগুলোয় জ্বালানি পণ্যটির মাসভিত্তিক উত্তোলন গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমেছে। ওপেকের সর্বশেষ মাসভিত্তিক জ্বালানি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

জোটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ, ব্রেক্সিট ইস্যুতে চূড়ান্ত ফলাফল না আসা, ইরান ও ভেনিজুয়েলার ওপর নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর—এসব কারণে একদিকে যেমন বিশ্ব অর্থনীত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে কমে যাচ্ছে জ্বালানি তেলের ব্যবহারও। চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বাণিজ্যযুদ্ধ নিরসনে চীন-যুক্তরাষ্ট্র দৃশ্যমান উদ্যোগ নিতে পারে। তখন নিজেদের প্রয়োজনেই দেশ দুটি জ্বালানি তেলের ব্যবহার বাড়িয়ে দেবে। বাড়তে পারে দামও। এ পরিস্থিতি উত্তোলক দেশগুলোকে জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন বাড়াতে উৎসাহ দেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *