৯ শতাংশ সুদে ব্যাংক ঋণ এপ্রিল থেকে শুরু

চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ব্যাংক ঋণের সুদ ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সুবিধা নিয়ে কোনো গ্রাহক খেলাপি হলে ২ শতাংশ হারে জরিমানা হিসাবে সুদ গুণতে হবে। তবে ঋণের সুদহার নির্ধারণ করলেও ৬ শতাংশে আমানত সংগ্রহে কোনো বাধ্যবাধকতা রাখা হয়নি।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত এক সার্কুলার জারি করেছে।

বাংলাদেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়, লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বর্তমানে ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ দেশের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পসহ ব্যবসা ও সেবা খাতের বিকাশে প্রধান অন্তরায় হিসেবে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংক ঋণের সুদহার বেশি হলে শিল্প, ব্যবসা ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানসমূহের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায় এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।

ফলে শিল্প, ব্যবসা ও সেবা প্রতিষ্ঠানসমূহ কখনো কখনো প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। যথা সময়ে ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয় গ্রাহক। যে কারণে ব্যাংক খাতে ঋণ শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয় এবং সার্বিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়।

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে অধিক সক্ষমতা অর্জন, শিল্প ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, ঋণ পরিশোধে সক্ষমতা এবং কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের সুদহার নির্ধারণ করেছে।

নির্দেশনা অনুযায়ী, ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্যান্য খাতে অশ্রেণিকৃত ঋণের ওপর সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। কোনো ঋণের ওপর উল্লিখিতভাবে সুদহার ধার্য করার পরও যদি সংশ্লিষ্ট ঋণ গ্রহিতা খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয় সে ক্ষেত্রে যে সময়কালের জন্য খেলাপি হবে অর্থাৎ মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে খেলাপি কিস্তি এবং চলতি মূলধন ঋণের ক্ষেত্রে মোট খেলাপি ঋণের ওপর সর্বোচ্চ ২ শতাংশ হারে দণ্ড অতিরিক্ত মুনাফা আরোপ করা যাবে।

প্রি-শিপমেন্ট রফতানি ঋণের বিদ্যমান সর্বোচ্চ সুদহার ৭ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকবে।

চলতি বছর থেকে ব্যাংকের মোট ঋণ স্থিতির মধ্যে এসএমই’র ম্যানুফ্যাকচারিং খাতসহ শিল্প খাতে প্রদত্ত সব ঋণের স্থিতি অব্যবহিত পূর্ববর্তী তিন বছরের গড় হারের চেয়ে কোনোভাবেই কম হতে পারবে না। নির্দেশনাটি ২০২০ সালে ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।

ব্যবসায়ীদের দাবি ও প্রধানমন্ত্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) এবং ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) বৈঠক করে।

বৈঠকে উভয় পক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে সব ধরনের ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ হবে। সাধারণ জনগণকে আমানতের বিপরীতে ৬ শতাংশের বেশি সুদ দেবে না। তবে ক্রেডিট কার্ডে সুদহার বেশি হবে। এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে ১ এপ্রিল থেকে। এ প্রেক্ষিতে আজ (সোমবার) নির্দেশনা জারি করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এদিকে ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বর্তমানে বেশিরভাগ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পে ১০ শতাংশের বেশি সুদে ঋণ বিতরণ করছে। অনেক ব্যাংক ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ সুদেও ঋণ দিচ্ছে। ক্ষুদ্র শিল্পে সর্বোচ্চ ১৮ ভাগ হারে ঋণ বিতরণ করছে কোনো কোনো ব্যাংক।

গবেষণা সংস্থা বিআইডিএসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো গড়ে এখন ৯ থেকে ১১ শতাংশে সুদে আমানত নিচ্ছে আর ১৩ থেকে ১৫ শতাংশে হারে ঋণ বিতরণ করছে।

এ বিষয়ে এবিবি চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার জানান, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী এপ্রিল থেকে ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা হবে। তাই আগে থেকে প্রস্তুতি হিসেবে ধীরে ধীরে আমানতের সুদহার কমানো হচ্ছে। কারণ আমানতের সুদ না কমলে সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণের সুদহারে নামিয়ে আনা সম্ভব নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *