৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের মার্কিন পণ্যে আমদানি শুল্ক কমাচ্ছে চীন

চীন ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার সমমূল্যের মার্কিন পণ্যে ধার্যকৃত আমদানি শুল্ক কমিয়ে অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের পর গত মাসে দেশ দুটির মধ্যে প্রথম ধাপের সমঝোতামূলক বাণিজ্য চুক্তি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত সেপ্টেম্বরে ১ হাজার ৭০০ মার্কিন পণ্যের ওপর আরোপিত ৫-১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ২ দশমিক ৫ থেকে ৫ শতাংশ করার ঘোষণা দিল চীন। খবর এএফপি ও রয়টার্স।

গতকাল চীনের স্টেট কাউন্সিল ট্যারিফ কমিশন জানায়, শুল্ক কমানোর এ সিদ্ধান্তের আওতায় থাকছে মার্কিন সামুদ্রিক খাবার, পোলট্রি ও সয়াবিন। এসব পণ্যে শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল ১০ শতাংশ। এছাড়া বৈজ্ঞানিক ও চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট কাজে ব্যবহারযোগ্য টাংস্টেন বাতি আমদানির ক্ষেত্রেও আরোপিত শুল্ক অর্ধেক করা হবে। শুল্ক কমানো হবে বিশেষ কিছু উড়োজাহাজের মডেলের ক্ষেত্রেও।

কমিশনের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্য সম্পর্ক আরো জোরদার ও স্থিতিশীল করার জন্যই শুল্ক কমানোর এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আশা করা হচ্ছে, ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন এ শুল্ক কার্যকরের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রও ১২ হাজার কোটি ডলার সমমূল্যের চীনা পণ্যে আমদানি শুল্ক অর্ধেক করবে। এর মধ্য দিয়ে উভয় দেশ প্রথম ধাপে সম্পাদিত বাণিজ্য চুক্তির বিভিন্ন শর্ত মেনে চলবে, যা বাজারের আত্মবিশ্বাসও ফিরিয়ে আনবে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চীনে চলমান করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে দেশটির অর্থনীতি মারাত্মক সংকটের মধ্যে রয়েছে। দেশটিতে এ ভাইরাসের সংক্রমণে মারা গেছে ৫৬০ জনেরও বেশি মানুষ। তাছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য এক রকম বন্ধ থাকায় সম্পদের ঘাটতি অনুভূত হচ্ছে। এ অবস্থায় শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেশটির ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের কিছুটা হলেও উজ্জীবিত করবে। এএনজেডের বৃহত্তর চীনের প্রধান অর্থনীতিবিদ রেমন্ড ইয়েউং বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের পুরো সময়টায়ই চীন এ ধরনের পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নিয়েছে। অন্যদিকে চীনের গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণেই শুল্ক কমানোর ক্ষেত্রে বেইজিং প্রথম ধাপের চুক্তির একটি আপত্কালীন ধারা ব্যবহার করছে।

সিঙ্গাপুরের ওসিবিসি ব্যাংকের চীন বিষয়ক গবেষণা প্রধান টমি শিয়ে বলেন, বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য নেয়া যেকোনো পদক্ষেপ সবসময়ই ইতিবাচক। বিশেষ করে শুল্ক কমানোর এ সিদ্ধান্ত ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার খবরে অস্থির হয়ে ওঠা বাজারকে অবশ্যই উদ্দীপ্ত করবে। তাছাড়া শুল্ক কমানোর এ ঘোষণা প্রথম ধাপের চুক্তির বিষয়ে চীনের প্রতিশ্রুতিরও প্রমাণ দিচ্ছে।

গত জানুয়ারিতে দীর্ঘ বাণিজ্যযুদ্ধের পর প্রথম ধাপের বাণিজ্য চুক্তি করে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। চুক্তি অনুযায়ী, চীন ২০ হাজার কোটি ডলার সমমূল্যের অতিরিক্ত মার্কিন পণ্য ক্রয়ের জন্য সম্মত হয়। আগামী দুই বছরে এ পণ্য কিনবে দেশটি। অন্যদিকে ১২ হাজার ডলার সমমূল্যের চীনা পণ্যে আমদানি শুল্ক অর্ধেক কমিয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করার কথা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। তাছাড়া কংগ্রেসে বার্ষিক স্টেট অব দি ইউনিয়ন ভাষণে চীনের সঙ্গে এ চুক্তি প্রসঙ্গে দেশ দুটির মধ্যে সাম্প্রতিক সম্পর্ক খুবই ভালো যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তবে মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যবিষয়ক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ভাইরাস সংক্রমণের কারণে প্রথম ধাপের চুক্তি অনুযায়ী মার্কিন পণ্য কিনতে বেইজিংয়ের আরো বেশ কিছুদিন দেরি হবে। তবে করোনাভাইরাস মার্কিন অর্থনীতিতে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারবে না বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

এদিকে চীনের শুল্ক কমানোর পরপরই বিভিন্ন আর্থিক বাজারে চাঙ্গা ভাব দেখা দিয়েছে, বিনিয়োগ বৃদ্ধির আশা করছে বেইজিং। তাছাড়া গত দুই সপ্তাহের মধ্যে গতকাল ইউয়ানের মূল্যমান ছিল সর্বোচ্চ। একই সঙ্গে চাঙ্গা ভাব দেখা যায় এশিয়ার শেয়ারবাজারগুলোয়ও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *