৬৮ বছরে সর্বোচ্চ রাজস্ব আহরণ মোংলা বন্দরে
মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ায় ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জাহাজ আগমন ও পণ্য ওঠানামায়। পশুর চ্যানেল ড্রেজিং, আধুনিক নৌযান, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংযোজন ও বন্দর ব্যবহারকারীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ফলে ব্যবসায়ীরা যেমন এ বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন, অন্যদিকে বেড়েছে রাজস্ব আহরণও। সদ্যসমাপ্ত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ বন্দর থেকে ৩১৫ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে কর্তৃপক্ষ। বন্দরের ৬৮ বছরের ইতিহাসে রাজস্ব আহরণে এটি একটি রেকর্ড।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, ১৯৫০ সালে মোংলা বন্দর সৃষ্টির পর আশির দশকের শেষ পর্যন্ত বন্দরটি সচল ছিল। নব্বইয়ের দশকের পর থেকে ক্রমে রুগ্ণ হতে থাকে বন্দরটি। দিনের পর দিন জাহাজ না আসায় লোকসানে পড়ে লাভজনক এ প্রতিষ্ঠানটি। এভাবে চলতে থাকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত। ২০০৮ সালে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বন্দরটি সচল করতে নানা উদ্যোগ নেয় সরকার। এর মধ্যে বন্দরে আধুনিক টাগবোট, আধুনিক ক্রেন সংযুক্ত করা, পশুর চ্যানেল ড্রেজিংসহ অভ্যন্তরীণ সব সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু করে কর্তৃপক্ষ। ফলে মুখ ফিরিয়ে নেয়া ব্যবসায়ীরা সময়ের ব্যবধানে ফের বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। জাহাজ আগমন ও মালামাল ওঠানামারও পরিমাণ দিন দিন বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে বাড়ে রাজস্ব আহরণ।
বন্দরের অর্থ ও হিসাব শাখা সূত্র জানায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বন্দরে জাহাজ ভেড়ে ৭৮৪টি আর গত অর্থবছরে আসে ৯১০টি। এক বছরের ব্যবধানে জাহাজ আগমন বাড়ে ১২৬টি। অন্যদিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বন্দরে পণ্য ওঠানামার পরিমাণ ছিল ৯৭ লাখ টন। গত অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ১ কোটি ২ লাখ টন। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে পণ্য ওঠানামা বাড়ে পাঁচ লাখ টন।
এছাড়া গত এক অর্থবছরের ব্যবধানে এ বন্দরে কনটেইনার ওঠানামা বাড়ে ১৩ হাজার ১১টি।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোংলা বন্দরে রাজস্ব আহরণ হয় ২৭৬ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরে হয় ৩১৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রাজস্ব আহরণ বাড়ে ৩৯ কোটি টাকা।
বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান অর্থ ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ১৯৫০ সালে নির্মাণের ৬৮ বছর পর রেকর্ড ভঙ্গ করে গত অর্থবছরই সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আহরণ করে এ বন্দর। বন্দরে আসা জাহাজের আগমন, পণ্যবোঝাই-খালাসসহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খাত থেকে এ রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আহরণ হয়েছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন খান জানান, এরই মধ্যে বন্দর জেটিতে ৪০০ টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন মোবাইল হারবার ক্রেনসহ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়েছে। আরো আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া জাহাজ আগমন ও পণ্য ওঠানামাসহ নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। এছাড়া বন্দর ব্যবহারকারীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে বিরাজমান সমস্যার সমাধানসহ চ্যানেলে ড্রেজিং করা হয়েছে। এতে করে ব্যবসায়ীরা এ বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী এইচএম দুলাল বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের নেয়া নানামুখী উদ্যোগের ফলে ব্যবসায়ীরা মোংলা বন্দর ব্যবহার করে এখন অনেকটাই স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। বন্দরকে আরো গতিশীল করার জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর ফারুক হাসান বলেন, ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বাড়ার কারণে মোংলা বন্দর গতিশীল হয়ে উঠেছে। এতে করে জাহাজ আগমন ও পণ্য ওঠানামার পাশাপাশি বন্দরের রাজস্ব আহরণও বাড়ছে। এ বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এরই মধ্যে ৭৫টি হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট সংযোজনসহ বিভিন্ন প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এগুলো যোগ হলে বন্দরের গতি আরো বাড়বে।