৬০০ রুপির জন্য ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ভাঙে ইরফানের
বলিউডের শক্তিমান অভিনেতা ইরফান খান আর নেই। মাত্র ৫৩ বছর বয়সেই চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তার অকাল মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ভারত তথা আন্তর্জাতিক সংস্কৃতি অঙ্গনে।
গুণী এই অভিনেতা শুধু বলিউডের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। কাজ করেছেন হলিউডের মতো বড় মাধ্যমে। বাংলাদেশেও আলোচিত একটি চলচ্চিত্রে দারুণ অভিনয় করে প্রশংসা কুড়ান ইরফান।
প্রয়াত এই অভিনেতাকে একসঙ্গে যেন সব গুণ দিয়ে পাঠিয়েছিলেন সৃষ্টিকর্তা। অনেকেই হয়তো জানেন না, একটা সময় ভালো ক্রিকেটও খেলতেন ইরফান। হতে পারতেন বড় ক্রিকেটার, কিন্তু সে গল্পটা আরও বেশি ট্রাজেডিময়।
অভিনয়ে ক্যারিয়ার গড়ার আগে ক্রিকেটে চেষ্টা করেছিলেন ইরফান। ছিলেন অলরাউন্ডার। আস্তে আস্তে বড় পর্যায়ে উঠে আসার সুযোগ ছিল তার; কিন্তু অর্থাভাবে সে স্বপ্নটার পরিণতি দিতে পারেননি। মাত্র ৬০০ রুপি জোগাড় করতে না পেরে ক্রিকেট ছাড়তে হয় সদ্য প্রয়াত এই অভিনয়শিল্পীকে।
ইরফান ‘টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া’র সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছিলেন সেই গল্পটা। খেলোয়াড়ি জীবনের স্মৃতি টানতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘দলের অধিনায়ক আমার বোলিং পছন্দ করতেন, তাই আমাকে বোলার হিসেবেই দেখতে চাইতেন তিনি। তিনি প্রায়ই বলতেন, আমাকে ভালো একটা বল করে দেখাও। আমি শুধু বল থ্রো করতাম এবং যেকোনোভাবেই হোক মাঝে মাঝে উইকেটও পেয়ে যেতাম।’
খেলার প্রতি তার আলাদা একটা নেশা ছিল। কিন্তু পরিবার তখন এতটাই অর্থকষ্টে, ক্রিকেট ছিল রীতিমত বিলাসিতা। বাধ্য হয়েই মিথ্যা বলতে হতো ইরফানকে। একটা সময় ভারতের সিকে নাইডু টুর্নামেন্টে অনূর্ধ্ব-২৩ দলে ডাকও পেয়ে যান তিনি। কিন্তু ৬০০ রুপি জোগাড় করবেন, সেই অবস্থাও ছিল না।
ইরফানের ভাষায়, ‘আমি ক্রিকেটার হতেই চেয়েছিলাম। জয়পুরে প্রথম শ্রেণির দলে সবচেয়ে কম বয়সী ক্রিকেটার ছিলাম আমি। আমি সেখান থেকেই ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছিলাম। সিকে নাইডু ট্রফিতে ডাক পেলাম। আমার অর্থের প্রয়োজন ছিল; কিন্তু কার কাছে চাইবো বুঝতে পারছিলাম না। কারও কাছে ৬০০ রুপি চাইতে পারিনি। সেদিনই সিদ্ধান্ত নিলাম আর ক্রিকেট নয়।’
কিন্তু ইরফান এখানেই দমে যাননি। ক্রিকেট ছাড়ার পর ভারতের ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করেন। অর্থাভাবে সেটাও হয়তো হতো না, তার বোন যদি ভর্তির ৩০০ রুপির ব্যবস্থা করে না দিতেন।
ক্রিকেট ছাড়ার সিদ্ধান্তটা বুঝেশুনেই নিয়েছিলেন জানিয়ে ইরফান বলেন, ‘(ক্রিকেটে) সারা দেশ থেকে মাত্র ১১ জন্য খেলোয়াড় খেলার সুযোগ পায়। অভিনেতাদের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। এখানে কোনো বয়সসীমা নেই। যত পরিশ্রম করবেন…, আপনি নিজেই নিজের অস্ত্র।’
শেষ পর্যন্ত এই অভিনয় পেশাই তাকে নিয়ে গিয়েছিল খ্যাতির চূড়ান্ত সীমায়;। হাজারো ভক্তকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।