৫০ হাজার কর্মী ছাঁটাই ফক্সকনের

২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ৫০ হাজার চুক্তিভিত্তিক কর্মী ছাঁটাই করেছে তাইওয়ানভিত্তিক ফক্সকন টেকনোলজি গ্রুপ। গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে একাধিকবার আইফোনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা কমানোয় চুক্তিভিত্তিক পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি এ বিপুলসংখ্যক কর্মী ছাঁটাই করেছে। খবর নিক্কেই এশিয়ান রিভিউ।

বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে আইফোন ডিভাইস দিয়েই বেশি ব্যবসা করছে অ্যাপল। ফক্সকন টেকনোলজি গ্রুপ হলো আইফোনের সবচেয়ে বৃহৎ সংযোজনকারী। তাইওয়ানভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি চীনে তাদের নিজস্ব কারখানায় আইফোন সংযোজনের কাজ করে আসছে।

নিক্কেইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছুটির মৌসুমে আইফোনের চাহিদা বেড়ে যায়। যে কারণে অ্যাপলের নির্দেশনা অনুযায়ী বাড়তি ডিভাইস সংযোজন করতে হয়।

বরাবরের মতোই অক্টোবরে শুরু হওয়া ছুটির প্রান্তিক ঘিরে বাড়তি ডিভাইস সংযোজনের প্রস্তুতি রাখে প্রতিষ্ঠানটি। এ সময় বিপুল সংখ্যক চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ করা হয়। তবে গত বছরের শেষ প্রান্তিকে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। গত অক্টোবরে শুরু প্রান্তিকে বাড়তি পণ্যের জোগান নিশ্চিতে কর্মী নিয়োগ বাড়ানোর পরিবর্তে ছাঁটাই করা হয়েছে, যা এক বছর আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।

চীনের মতো বৃহৎ স্মার্টফোন বাজারে ক্রমান্বয়ে আইফোনের বিক্রি কমছে। বিশ্বের অন্য গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলোতেও আইফোনের চাহিদা কমেছে। যে কারণে গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে একাধিকবার আইফোনের উৎপাদন কমানোর নির্দেশ দেয় অ্যাপল। সর্বশেষ দুই সপ্তাহ আগেও আইফোনের উৎপাদন ১০ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

ফক্সকনের একযোগে অর্ধলাখ চুক্তিভিত্তিক কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রধান কারণ আইফোনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা কমানো। কারণ চুক্তিভিত্তিক এসব কর্মী নিয়োগ দেয়াই হয় বাড়তি উৎপাদন সক্ষমতা নিশ্চিত করা এবং আইফোন সরবরাহের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা।

বিশ্লেষকরা কিছুদিন ধরেই আইফোন বিক্রি কমার পূর্বাভাস দিয়ে আসছিলেন। চলতি মাসের শুরুর দিকে বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছে অ্যাপল কর্তৃপক্ষ। সে সময় বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে লেখা এক চিঠিতে গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অ্যাপলের প্রথম প্রান্তিকে আইফোন বিক্রিতে ৯০০ কোটি ডলার রাজস্ব হারানোর আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) টিম কুক।

বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে টিক কুক জানান, আইফোনের নতুন তিন সংস্করণের প্রত্যাশিত ইউনিট বিক্রি না হওয়ার নেতিবাচক প্রভাব তাদের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের আর্থিক খতিয়ানে পড়তে যাচ্ছে। এর ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে চুক্তিভিত্তিক আইফোন নির্মাতারা। বিশ্বব্যাপী আইফোন হালনাগাদ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। যে কারণে প্রান্তিকটিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রাজস্ব কমার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে আইফোনের গুরুত্বপূর্ণ বাজার চীন। দেশটিতে আইফোনের চাহিদা উল্লেখযোগ্য হ্রাস পেয়েছে। বিশ্বের উন্নত বাজারগুলোতেও আইফোনের চাহিদা কমছে। চীনে আইফোন বিক্রি কমার জন্য দেশটির অর্থনীতির দুর্বল অবস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধকে দায়ী করা হয়। বাণিজ্যযুদ্ধের জেরে চীনের অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠান আইফোন বর্জন করে কর্মীদের স্থানীয় কোম্পানির হ্যান্ডসেট ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে।

সিটি রিসার্চের বিশ্লেষক উইলিয়াম ইয়াং জানান, চলতি বছরের প্রথমার্ধের জন্য অ্যাপল ৪ কোটি ৫০ লাখ ইউনিট আইফোন উৎপাদন করতে পারে। যদিও এর আগে একই সময় পাঁচ কোটি ইউনিট আইফোন তৈরির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল।

আমরা মনে করি, আইফোন মজুদ হ্রাসের ধাপে প্রবেশ করেছে, যা সরবরাহ চেইনের জন্য ভালো কোনো লক্ষণ নয়। যে কারণে আইফোনের বৃহৎ সংযোজনকারী কর্মী বাহিনী ছোট করে আনতে বাধ্য হয়েছে।

বিবৃতিতে ফক্সকন জানিয়েছে, ২০১৮ চুক্তিভিত্তিক পণ্য নির্মাতাদের জন্য কঠিন এবং তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ একটি বছর ছিল। সামগ্রিক বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে তারা ৩০০ কোটি ডলার ব্যয় সংকোচনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে।

বর্তমানে চীনে ফক্সনের ১২টি ডিভাইস উৎপাদন কারখানা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে এখন বেশির ভাগ আইফোন উৎপাদন কারখানা ভারতে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানটি। ভারতে আইফোন উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে ৩৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়েছে ফক্সকন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *