৪৫ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে সিঙ্গাপুর

স্টাফ রিপোর্টার

রেকর্ড পরিমাণ বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে সিঙ্গাপুর। গত বছর এশিয়ার নগর রাষ্ট্রটি ৪৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার নতুন অর্থের প্রবাহ দেখেছে। এ বিনিয়োগের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ৫৯ শতাংশ বেশি। তবে বিপুল পরিমাণ এ অর্থপ্রবাহ দেশটির রিয়েল এস্টেট খাতে উদ্বেগ তৈরি করেছে। এমনিতেই দেশটিতে বাড়ির দাম ও ভাড়া রেকর্ড উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। তবে দেশটি বিপুল পরিমাণ এ অর্থ পরিচালনা করতে সক্ষম বলে আশস্ত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান।

সম্প্রতি একটি টেলিভিশন সাক্ষাত্কারে মনিটারি অথরিটি অব সিঙ্গাপুরের (এমএএস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাভি মেনন বলেন, যখন কোনো দেশে একটি বড় অংকের অর্থ আসে তখন সেটা নিয়ে অবশ্যই চিন্তার বিষয় রয়েছে। এ ধরনের প্রবণতা রিয়েল এস্টেটের বাজারে ব্যাপকভাবে দাম বাড়িয়ে দেয়। তবে আমাদের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ অর্থ আসতে বাধা দেয়ার পরিবর্তে আবাসন খাতে অস্থিতিশীলতা মোকাবেলায় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণের আওতায় রয়েছে।

এটিকে আন্তর্জাতিক সম্পদ কেন্দ্র হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার জন্য সিঙ্গাপুরের প্রচেষ্টার সফলতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। শহরটি কভিডজনিত পুনরুদ্ধারের বিষয়টি উপভোগ করছে। অন্যান্য দেশের চেয়ে আগেভাগে কভিডজনিত বিধিনিষেধ শিথিল করায় হংকং ও চীনের অন্যান্য শহর থেকে সম্পদশালীরা সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমাচ্ছেন। দেশটির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে। দেশটির স্থানীয় সংস্থাগুলোর পরিচালিত সম্পদ ২০২১ সালে ৪ লাখ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। এ অর্থের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি। বেশির ভাগই বিদেশ থেকে আসা এ সম্পদের পরিমাণ বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। মার্কিন হেজ ফান্ড টাইকুন রে ডালিও থেকে ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানি পর্যন্ত বিনিয়োগকারীরা তাদের ব্যক্তিগত সম্পদ পরিচালনায় অফিস স্থাপন করেছে।

সিঙ্গাপুরের আবাসন খাত এখনো ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। যেখানে বৈশ্বিক চাহিদা হ্রাসের পরিপ্রেক্ষিতে অস্ট্রেলিয়া, হংকং ও কানাডাসহ অন্য প্রধান বাজারের রিয়েল এস্টেট খাতে মন্দা দেখা দিয়েছে। এমনকি বাজারে ঊর্ধ্বমুখী অস্থিরতা মোকাবেলায় সিঙ্গাপুরের সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে।

এদিকে বাড়িওয়ালারা ভাড়াটিয়াদের কাছে বড় ধরনের ভাড়া বাড়ানোর নোটিস দিয়েছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভাড়া বৃদ্ধির হার দ্বিগুণ পর্যন্ত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, নতুন অর্থের এ প্রবাহ সিঙ্গাপুরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিবি) প্রায় তিন-চতুর্থাংশ। গত বছর বিপুল পরিমাণ এ বিনিয়োগ দেশটিতে বাড়ির দাম বাড়াতে প্ররোচিত করেছে। এ সম্পদ দেশটির আর্থিক কেন্দ্র হিসেবে সিঙ্গাপুরের অবস্থান দৃঢ় করছে। কারণ দেশটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও টেকসই অর্থায়নের মতো ক্ষেত্রগুলোয় আগামী পাঁচ বছরে ২০ হাজার কর্মসংস্থান যুক্ত করতে চায়।

এমএএসের এমডি রাভি মেনন বলেন, এশিয়াজুড়ে ক্রমবর্ধমান সম্পদ থেকে আমাদের এখানে অর্থ আসছে। ধনীরা বিনিয়োগের জন্য স্থিতিশীল জায়গা খুঁজছে। উত্তর এশিয়ার ধনীরা সিঙ্গাপুরে সম্পদের প্রবাহে বড় অবদান রাখছে বলেও স্বীকার করেছেন তিনি। গতকাল শুরু হওয়া সিঙ্গাপুরের ফিনটেক ফেস্টিভ্যালের আগে তিনি বলেন, এশিয়ার সম্পদশালীরা এখন আরো ধনী এবং তাদের আরো বিনিয়োগযোগ্য সম্পদ রয়েছে।

এশিয়ার বৃহত্তম সম্পদ বাজার চীন। কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং পুনরায় ক্ষমতা পাকাপোক্ত করায় দেশটি থেকে সম্পদশালীরা সরে যাবেন বলে ধারণা পশ্চিমা বিশ্লেষকদের। বিষয়টি নিয়ে রাভি মেনন বলেন, এটা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে এরই মধ্যে এমন প্রবণতা দেখা দিয়েছে। আপনি কয়েক বছরের প্রবণতার দিকে তাকালে দেখতে পাবেন, দেশটির কিছু ধনী সিঙ্গাপুরে বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন। তবে এখানে সব দেশ থেকেই বিনিয়োগ বাড়ছে। নির্দিষ্ট কোনো দেশ সম্পর্কে এখনো বলার সময় আসেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *