৪০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম ডিসেম্বরে

প্রায় দুই বছর পর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। এবার সারাদেশে বিভিন্ন স্তরে প্রায় ৪০ হাজার নিবন্ধিত প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়া হবে। আগামী ডিসেম্বরের মাঝামাঝি এ সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে বলে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বেসরকরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সারাদেশে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষক সঙ্কট রয়েছে। মামলাসহ নানা জটিলতায় গত ২ বছর শিক্ষক নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি। এ কারণে দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

জানা গেছে, সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো তালিকা চূড়ান্ত করেছে এনটিআরসি। এতে বিভিন্ন বিষয়ের প্রায় ৪০ হাজার নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রথম থেকে ১৪তম নিবন্ধিত প্রার্থীদের কাছে আবেদন চেয়ে আগামী ১৫ ডিসেম্বর গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। এক মাসব্যাপী আবেদন কার্যক্রম চলবে। মেধাক্রম অনুযায়ী যোগ্যদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুপারিশ পাঠাবে এনটিআরসিএ। মার্চের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হবে।

এদিকে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) ১৪তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়েছে। এতে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার প্রার্থী পাস করেন। উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মেধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ১৪তম নিবন্ধিত প্রার্থীরাও নতুন নিয়োগের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।

একাধিক চাকরি প্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করেছেন একরামুল অভি। নবম শিক্ষক নিবন্ধনে পাস করে চাকরির অপেক্ষায় দিন পার করছেন। কলেজ শাখায় ইসলামের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি বিষয়ে তিনি ৩৩তম মেধা তালিকায় রয়েছেন।

একরামুল অভি জানান, কয়েক বছর আগে শিক্ষক নিবন্ধন পাস করেও এখনও চাকরি পাননি। নিয়োগ দেই-দিচ্ছি বলে দুই বছর কাটিয়ে দিয়েছে এনটিআরসিএ। তার আর ৬ মাস চাকরির বয়স আছে। তিনি শিক্ষাকতা করবেন এ আশা পরিবারের সবার। বর্তমানে চাকরি না হওয়ায় আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

মেহেদী হাসান স্কুল শাখায় সামাজিক বিজ্ঞানে ১০তম মেধা স্থানে রয়েছে। মাত্র এক বছর চাকরির বয়স রয়েছে তার। এখনও চাকরি না হওয়ায় তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তার মতো এমন সাড়ে ৪ লাখ নিবন্ধিত প্রার্থী শিক্ষাকতা পেশায় নিয়োগ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানান মেহেদী।

এদিকে এনটিআরসিএর নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করার পরও নিয়োগ না পেয়ে বিভিন্ন সময়ে নিবন্ধিত প্রার্থীরা প্রায় ২০০টি মামলা করেন। এর ভিত্তিতে আদালত থেকে নিবন্ধিত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের নির্দেশনা দেয়া হয়।

সে মোতাবেক প্রথম থেকে ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করা প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। এ তালিকায় সারাদেশে মোট ৬ লাখ ৪ হাজার ৬৮৫ জনের নাম প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। বর্তমানে ১৪তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করা আরও প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার প্রার্থীকে এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

এনটিআরসিএ থেকে জানা গেছে, এবার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কলেজ, মাদরাসা) মহানগর অথবা জেলা সদরের পৌর এলাকায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে অনুমোদিত শিক্ষক পদসংখ্যার অন্তত ৩০ শতাংশ পদে নারী কোটায় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে।

এ ছাড়াও শরীরচর্চা শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। সম্প্রতি এনটিআরসিএর সুপারিশের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ৩৫ বছর বয়সসীমা নির্ধারিত হয়েছে। এর বেশি হলে নিবন্ধিত ব্যক্তি নিয়োগের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। জেলাভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে জাতীয়ভাবে নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব এ এম আশফাক হুসাইন  বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসন করতে দিনরাত কাজ করা হচ্ছে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নতুন নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হবে বলে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *