৩ লাখ কোটি ডলারের মাইলফলকে পৌঁছেছে অ্যাপল
আরেকটি বড় মাইলফলক ছুঁয়েছে অ্যাপল। সম্প্রতি আইফোন নির্মাতার বাজারমূল্য ৩ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রথম কোনো প্রতিষ্ঠান হিসেবে এমন রেকর্ড স্পর্শ করেছে প্রযুক্তি জায়ান্টটি। সম্প্রতি সংস্থাটির শেয়ারদর ৩ শতাংশ বেড়ে ১৮২ ডলার ৮৮ সেন্টে উন্নীত হয়। এটি সংস্থাটির ইতিহাসেও সর্বকালের সর্বোচ্চ শেয়ারদর। যদিও পরে সংস্থাটির শেয়ারদর কিছুটা পতন হয়। কভিডজনিত কারণে প্রযুক্তি পণ্যের তুমুল চাহিদা অ্যাপলকে এ মাইলফলকে পৌঁছতে সহায়তা করেছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। খবর দ্য গার্ডিয়ান।
এর আগে ২০১৮ সালের আগস্টে বিশ্বের প্রথম ট্রিলিয়ন বা লাখ কোটি ডলারের কোম্পানি হিসেবে রেকর্ড গড়েছিল অ্যাপল। ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটি ২ লাখ কোটি ডলারের মাইলফলকও পেরিয়ে যায়। এরপর নতুন বছরের শুরুতে ৩ লাখ কোটি ডলারের মাইলফলক ছুঁয়েছে আইফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। অ্যাপলের বাজারমূল্য এখন বোয়িং, কোকা-কোলা, ডিজনি, এক্স-মবিল, নেটফ্লিক্স ও ওয়ালমার্টের সম্মলিত মূল্যের চেয়েও বেশি। গত বছরের শুরু থেকে সংস্থাটির শেয়ারদর ৩৮ শতাংশ বেড়েছে।
কভিডের নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ সত্ত্বেও অ্যাপল এমন রেকর্ড তৈরি করল। গত অক্টোবরে সংস্থাটি সর্বশেষ প্রান্তিকভিত্তিক মুনাফা প্রকাশ করেছিল। কভিডজনিত সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তৃতীয় প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটি ২ হাজার ৬০ কোটি ডলার মুনাফা পেয়েছে। তবে ৩ লাখ কোটি ডলারের ক্লাবে আরো প্রতিষ্ঠান যোগ দিতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের আশা, বছরের শেষ দিকে মাইক্রোসফট এ মাইলফলক স্পর্শ করতে পারে। আবার সার্চ জায়ান্ট গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট ও ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজনও এ দৌড়ে রয়েছে। বর্তমানে মাইক্রোসফটের বাজারমূল্য প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলার। এছাড়া অ্যালফাবেট ও অ্যামাজনের বাজারমূল্য যথাক্রমে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি ডলার ও ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলার।
২০২১ সালে বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের শেয়ারদর বৃদ্ধি ৩৪ শতাংশ হারকেও ছাড়িয়ে গেছে। গত বছর মাইক্রোসফট ও টেসলার শেয়ারদর প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া অ্যালফাবেটের ৬৫ শতাংশ, এনভিডিয়ার ১২৫ শতাংশ বেড়েছে। শেয়ারদর বেড়ে চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়ার বাজারমূল্য ৭০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
গত কয়েক মাসে অ্যাপলের শেয়ারদর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্লেষকরা পূর্বাভাসও বাড়িয়েছেন। রিফিনিটিভের মতে, জেপি মরগান ও ব্যাংক অব আমেরিকার গ্লোবাল রিসার্চ অ্যাপলের শেয়ারদরের লক্ষ্যমাত্রা ২১০ ডলারে উন্নীত করেছে। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর এ পর্যায়ে উন্নীত হলে অ্যাপলের বাজারমূল্য দাঁড়াবে ৩ লাখ ৪৫ হাজার কোটি ডলার।
প্রথম দিকে আয়ের প্রধান উৎস ব্যক্তিগত কম্পিউটার থাকলেও প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছর পরে এসে সংস্থাটির বেশির ভাগ রাজস্ব আসছে আইফোন থেকে। ২০০৭ সালে সংস্থাটি প্রথম আইফোন উন্মোচন করেছিল। স্মার্টফোনের বাইরে ক্রমবর্ধমান স্মার্টফোন পরিষেবা সংস্থাটির আয়ের অন্যতম উৎস হয়ে উঠছে। এগুলোর মধ্যে অ্যাপল টিভি স্ক্রিমিং পণ্য ও অ্যাপল পে পরিষেবাগুলো গত পাঁচ বছরে তিন গুণ বেড়েছে।
বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিম কুকের অধীনে এ ব্যবসা শুরু হয়েছিল। যদিও প্রথম দিকে প্রযুক্তি বিকাশের সক্ষমতা নিয়ে তিনি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিলেন। তবে স্পষ্ট যোগাযোগ ও কাজের মাধ্যমে তিনি ওয়াল স্ট্রিটে জয়লাভ করেছেন। কারণ তিনি পরিধানযোগ্য সামগ্রীসহ নতুন নতুন ব্যবসা গড়ে তুলতে সহায়তা করেছেন। এ পণ্যগুলোই গত বছর অ্যাপলকে ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলারেরও বেশি আয়ের জোগান দিয়েছে।
মার্কিন আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান জেফরিজের একজন গ্লোবাল ইকুইটি স্ট্র্যাটেজিস্ট শন ডার্বি বলেন, কভিড-১৯ মহামারীর নতুন নতুন ধরন আসা সত্ত্বেও ২০২১ একটি রেকর্ডের বছর ছিল। গত বছর প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারদর রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছিল। তবে ২০২২ সাল নিয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। আমরা আশা করি, এ বছরও শেয়ারদরের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকবে।