৩১ বলে ৮৩ করে দলকে জেতালেন পোলার্ড

লক্ষ্যটা আকাশছোঁয়া, দলে নেই সেরা তারকা ও অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ঘরের মাঠ ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে এর আগে কখনোই ১৯৭ রানের বেশি তাড়া করে জেতার রেকর্ড নেই মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের। প্রথমবারের মতো দলের অধিনায়কত্ব পেয়ে সেটিই করে দেখালেন ক্যারিবীয় তারকা কাইরন পোলার্ড।

লোকেশ রাহুলের প্রথম আইপিএল সেঞ্চুরিতে ১৯৭ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল কিংস এলেভেন পাঞ্জাব। যা তাড়া করতে নেমে একপর্যায়ে মনে হচ্ছিলো মুম্বাইয়ের পক্ষে এটি সম্ভব নয়। তবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন পোলার্ড। মাত্র ৩১ বলে ১০ ছক্কার মারে ৮৩ রান করে দলকে এনে দেন অবিশ্বাস্য এক জয়।

অথচ মুম্বাইয়ের শুরুটা একদমই ছিলো না জেতার মতো। চতুর্থ ওভারে সাজঘরে ফেরেন রোহিতের জায়গায় খেলতে নামা ওপেনার সিদ্ধেশ লাড (১৩ বলে ১৫)। অষ্টম ওভারে দলীয় ৫৬ রানের মাথায় আউট হয়ে যান সুর্যকুমার যাদভ (১৫ বলে ২১)।

তখন উইকেটে আসেন পোলার্ড। তবে এক ওভার পরই কুইন্টন ডি কক ২৩ বলে ২৪ রান করে ফিরলে চাপ বাড়তে থাকে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের ঘাড়ে। দশ ওভার শেষে মুম্বাইয়ের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৬৫ রান। অর্থাৎ শেষ দশ ওভারে তখনো করতে হতো আরও ১৩৩ রান।

উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ইশান কিশানকে সঙ্গে নিয়ে ৩২ রান যোগ করেন পোলার্ড। যেখানে কিশানের অবদান মাত্র ৭ রান। অশ্বিনের করা ১১তম ওভারে ছয়-চারের মারে ১১ এবং স্যাম কুরানের করা ১২তম ওভার থেকে ২ ছক্কা ও ১ চারে ১৮ রান তোলেন পোলার্ড।

পাঞ্জাব অধিনায়ক অশ্বিনের ওপর যেনো বাড়তি রাগ ঝাড়েন তিনি। পরে ১৪তম ওভারে ২ ছক্কায় নেন আরও ১৯ রান। সমীকরণ নেমে আসে ছয় ওভারে ৭০ রানে। অর্থাৎ চার ওভারেই ৬৩ রান করে ফেলে মুম্বাই।

তবু ১৬তম ওভারে পান্ডিয়াদের দুই ভাই হার্দিক (১৩ বলে ১৯) ও ক্রুনাল (২ বলে ১) আউট হয়ে গেলে ফের চাপে পড়ে যায় স্বাগতিকরা। শেষের ৪ ওভারে বাকি থাকে ৫৪ রান। কুরানের করা ১৭তম ওভারে ২ ছক্কার মারে ১৪ রান তুলে নেন পোলার্ড।

১৮তম ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করেন মোহাম্মদ শামী, খরচ করেন মাত্র ৮ রান। ১২ বলে তখনো ৩২ রানের প্রয়োজন মুম্বাইয়ের। ১৯তম ওভারটি করতে আসেন কুরান। ওভারের প্রথম চার বলে ৪, ০, ৬ ও ৬ মেরে সমীকরণ হাতের নাগালেই রাখেন পোলার্ড। শেষ ওভারে বাকি থাকে ১৫ রান।

পাঞ্জাবের অধিনায়ক বল হাতে তুলে দেন অনভিজ্ঞ পেসার অঙ্কিত রাজপুতের হাতে। যিনি প্রথম ডেলিভারিতেই করে বসেন নো বল, ছক্কা মেরে দেন পোলার্ড। পরে ফ্রিহিট বলেও চার মেরে সমীকরণটা ৫ বলে ৪ রানে নামিয়ে ফেলেন মুম্বাই অধিনায়ক।

তবে ওভারের দ্বিতীয় বলে ডিপ মিড উইকেটে দাঁড়ানো ডেভিড মিলারের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন পোলার্ড। আউট হওয়ার আগে দলের জয় প্রায় নিশ্চিত করে ফেলা ইনিংসে ৩১ বলে ৩ চার ও ১০ ছয়ের মারে ৮৩ রান করেন তিনি।

বাকি কাজটুকু সারেন পোলার্ডের স্বদেশী আলঝারি জোসেফ। সোজা ব্যাটে স্ট্রেইট ড্রাইভ খেলে শেষ বলে প্রয়োজনীয় ২ রান সহজেই নিয়ে নেন ১৩ বলে ১৫ রান করে অপরাজিত থাকা জোসেফ। ম্যাচের একদম শেষ বলে গিয়ে ৩ উইকেটের দুর্দান্ত জয় পায় মুম্বাই।

এর আগে একপাশে দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে শুধু ব্যাট চালিয়ে গেছেন পাঞ্জাবের ওপেনার লোকেশ রাহুল। অন্যপ্রান্তে ক্রিস গেইলের সঙ্গে ১১৬ রানের বিশাল জুটি গড়লেও সেটা ভেঙে পড়ার পর একাই লড়াই চালিয়ে যান ভারতীয় এই ব্যাটসম্যান।

অন্যপ্রান্তে ব্যাটসম্যানরা শুধু আসা-যাওয়ার মিছিলে ছিলেন। কিন্তু লোকেশ রাহুল একা ব্যাট চালিয়ে পূরণ করেন নিজের আইপিএল ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরি। সে সঙ্গে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে ছুঁড়ে দেন ১৯৮ রানের বিশাল চ্যালেঞ্জ।

রোহিত শর্মার পরিবর্তে অধিনায়ক হিসেবে টস করতে নামেন কাইরন পোলার্ড। টস জিতে তিনি ব্যাটিংয়ে পাঠান পাঞ্জাবকে। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ক্রিস গেইল আর লোকেশ রাহুল মিলে তান্ডব চালান মুম্বাই বোলারদের ওপর।

১২.৫ ওভারে ১১৬ রানের বিশাল জুটি গড়ার পরই বিচ্ছিন্ন হন এ দু’জন। বেহেনডর্ফের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ক্রুনাল পান্ডিয়ার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ক্রিস গেইল। এ সময় তিনি ব্যাট করছিলেন ৩৬ বলে ৬৩ রান নিয়ে। ৩ বাউন্ডারি আর ৭ ছক্কায় এই রান করেন ক্যারিবীয় ব্যাটিং দানব।

গেইল আউট হয়ে গেলে অপরপ্রান্তে ডেভিড মিলার (৭), করুন নায়ার (৫), স্যাম কুরানকে (৮) ফিরে যেতে দেখেন লোকেশ রাহুল। তবে মানদ্বীপ সিংকে (৭) নিয়ে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবকে ১৯৭ রানের চূড়ায় পৌঁছে দেন লোকেশ রাহুল।

তার আগে আইপিএলে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি পূরণ করেন ভারতীয় এই ব্যাটসম্যান। ৬৪ বলে ৬টি করে বাউন্ডারি এবং ছক্কার মার মারেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেট হারিয়ে ১৯৭ রান সংগ্রহ করে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *