১৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে হুন্ডি ও মূল্য পরিশোধের নামে
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা, আইএমএফের উপাত্ত, প্রকাশিত সংবাদ এবং এসবের ভিত্তিতে নিজস্ব অনুমানের ভিত্তিতে অর্থ পাচারের পরিমাণ প্রাক্কলন করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের প্রকৃত মূল্য না দেখিয়ে এবং হুন্ডির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে কেনা সম্পদের মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে মূলত অর্থ পাচার হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, হংকং, সিঙ্গাপুর, ভারত এবং ‘করের স্বর্গ’ বলে পরিচিত বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জনশক্তি রপ্তানিতে ভিসা কেনার প্রক্রিয়ায় রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে এক দশকে হুন্ডিতে ১৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এ পরিমাণ অর্থ দিয়ে ঢাকায় উত্তরা-মতিঝিল রুটের মতো চারটি মেট্রোরেল নির্মাণের ব্যয় মেটানো যায়।
প্রতিবেদনে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্যের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরি রিপোর্টের (২০২৪) তথ্য অনুযায়ী, দুবাইতে ৪৫৯ বাংলাদেশির ৯৭২টি আবাসিক স্থাপনা রয়েছে, যার মূল্য প্রায় ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। একই সংস্থার ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ‘করের স্বর্গ’ বলে পরিচিত বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। ‘এন্ড স্নো ওয়াশিং’ নামে একটি সংস্থার প্রতিবেদনে কানাডায় বাংলাদেশিদের ৫ লাখ ৬৪ কোটি থেকে ১২ লাখ কোটি টাকার মতো সম্পদের প্রাক্কলন করা হয়েছে। গত মার্চ পর্যন্ত মালয়েশিয়ার ‘সেকেন্ড হোম’ প্রকল্পে বাংলাদেশিদের ৩ হাজার ৬০০র বেশি স্থাপনা রয়েছে।
এর আগে রোববার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। কমিটির প্রধান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন। এ সময় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর উপস্থিত ছিলেন।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সোমবার সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদন বিষয়ে তারা বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবেন। প্রতিবেদন জমার সময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে তিনি অর্থনীতি সংস্কারে সব পদক্ষেপ সমন্বিতভাবে পূর্ণাঙ্গ উপস্থাপনের সুপারিশ করেছেন। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় ড. দেবপ্রিয় প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, তারা উন্মুক্ত ও স্বাধীনভাবে প্রতিবেদন প্রণয়ন করেছেন, যাতে কেউ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য খুঁজতে না পারে। তারা দেখেছেন, উন্নয়নের বয়ানের বড় ভিলেন ছিল তথ্য-উপাত্ত। প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ, রপ্তানিসহ অর্থনীতির বিভিন্ন তথ্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সাজানো হয়েছিল। দৃশ্যমান কিছু অবকাঠামো হয়েছে। কিন্তু প্রচুর পরিমাণ টাকা তছরুপ হয়েছে। অর্থনীতিতে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে, তা অনেক গভীর। রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও আমলাদের ত্রিমুখী আঁতাত অর্থনীতিতে সংস্কার আটকে দেয়।