হামলার এক সপ্তাহ আগে মসজিদ দু’টি রেকি করে ব্রেন্টন
ক্রাইস্টচার্চের ডিনস অ্যাভিনিউয়ের লিনউড মসজিদে শেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী সন্ত্রাসী ব্রেন্টন ট্যারান্টের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ থেকে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছেন দুই বাংলাদেশি। হামলার এক সপ্তাহ আগে ওই মসদিজের সামনে হামলাকারী ব্রেন্টনকে পায়চারী করতে দেখেছেন বলে দেশটির ইংরেজি দৈনিক নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশি প্রবাসী নাসিম খান হেরাল্ডকে বলেন, আমি এক সপ্তাহ আগে তাকে ডিনস অ্যাভিনিউয়ের মসজিদের সামনের ফুটপাতের সামনে পায়চারী করতে দেখেছি। তখন তার পরনে ছিল নির্মাণ শ্রমিকদের মতো পোশাক। সে আমার দিকে তাকিয়েছিল। আমি তাকে এড়িয়ে চলেছিলাম।
নাসিম খানের বোন নাসরিন খানমও এক সপ্তাহ আগে লিনউড মসজিদের সামনে হামলাকারীর মতো এক ব্যক্তিকে ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন। ওই ব্যক্তি খানমের দিকে তাকিয়েছিলেন; তখন তিনি কিছুটা ভীত হয়ে নিজের গাড়িতে উঠে ম্যাকডোনাল্ডের স্টোরে কর্মরত মেয়েকে নিতে যান।
নাসরিন খানম বলেন, সে আমার দিকেও তাকিয়েছিল…আমি খুবই অস্বস্তি বোধ করছিলাম। যে কারণে আমি দ্রুত গাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ি। কেননা আমি নিরাপত্তাহীনতা বোধ করলে, আমার মেয়ে কীভাবে নিরাপদ থাকবে? পরে আমার মেয়ের কাছে গিয়ে তাকে নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করি।
গত শুক্রবার অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত উগ্রপন্থী শেতাঙ্গ সন্ত্রাসী বেন্টন ট্যারান্ট ক্রাইস্টজচার্চের দুটি মসজিদে আধা-স্বয়ংক্রিয় বন্দুক নিয়ে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায়। এতে অন্তত ৫০ জন মুসল্লির প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরো কমপক্ষে ৪৯ জন। এদের মধ্যে ১২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
হামলাকারী অস্ট্রেলীয়র বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ আনা হবে। মঙ্গলবার পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশনে অংশ নিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্ন বলেছেন, নিউজিল্যান্ডের আইনের পুরো সাজা ভোগ করতে হবে হামলাকারীকে।
মসজিদে এই সন্ত্রাসী হামলার পর সোমবার নিউজিল্যান্ডের মন্ত্রিসভা দেশটির অস্ত্র আইন সংশোধনে সায় দিয়েছে। দেশটির বর্তমান আইনের সুযোগ নিয়ে হামলাকারী ট্যারেন্ট একসঙ্গে একাধিক অস্ত্র কিনেছিল।
১৯৯৫ সালে পরিবার-সহ নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমান বাংলাদেশি ওই প্রবাসী। শুক্রবার যখন লিনউড মসজিদে গুলি শুরু হয়; তখন তিনি ভেতরে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু সৌভাগ্যবশত তিনি মসজিদের দরজার পাশের একটি কক্ষে লুকিয়ে ছিলেন। যে কারণে সেখান থেকে সহজেই বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন।
খান বলেন, কেউ গুলি ছুড়ছে; এটি ভেবে তিনি মসজিদ থেকে বের হননি। তিনি মনে করেছিলেন, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে কোনো সমস্যা হয়েছে; যে কারণে প্রচণ্ড শব্দ। ‘আমি ভেবেছিলাম, এটা শর্ট সার্কিট দুর্ঘটনা। কারণ সে সময় বুলেটের শব্দ হচ্ছিল টাক টাক টাক টাক টাক। আমার কাছে যখন মনে হলো, শর্ট সার্কিট দুর্ঘটনা; তখন ভাবলাম এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়া দরকার।’
কিন্তু তিনি যখন বুঝতে পারলেন মসজিদের মুসল্লিরা ভয়ঙ্কর বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছেন; তখন তিনি দ্রুত সেখান থেকে বেরিয়ে পার্ক করে রাখা গাড়ির আড়ালে লুকিয়ে পড়েন। বাইরে বেরিয়ে আসার পর তিনি যে দৃশ্য দেখেন তা ছিল একেবারেই দুঃস্বপ্নের মতো।
‘মানুষ আর্তনাদ করছে, এখনো অনেক মানুষ বেঁচে আছেন। তারা মরদেহের নিচে ছিলেন। আমি মরদেহগুলো সেরেয় জীবিতদের বের করে এনেছি, তাদের পানি দেয়ার চেষ্টা করেছি…সবাই তখন শুধু পানি পানি পানি বলে চিৎকার করছে।’
পরে তিনি তার বন্ধু বাংলাদেশি ফরিদ আহমেদের দেখা পান; যিনি হুইলচেয়ারে বসা ছিলেন। তার মুখ ছিল ফ্যাকাশে। আমি তাকে বলেছিলাম, সমস্যা নেই। আমি তোমাকে ছেড়ে যাব না। আমি এখান থেকে কোথাও যাব না। আমি তোমার সঙ্গেই মরবো। ভীত হইও না।
খান বলেন, পুলিশ আসার আগে পর্যন্ত তিনি ফরিদ আহমেদের সঙ্গে মসজিদের ভেতরে অবস্থান করছিলেন। পরে পুলিশের সহায়তায় তারা মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসেন।