হাবিবুল আউয়ালকে প্রধান করে নতুন ইসি গঠন

স্টাফ রিপোর্টার

সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালকে নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তার সঙ্গে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন চারজন। তারা হলেন সাবেক জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান, সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ও সাবেক সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান। সবকিছু ঠিক থাকলে আজ বিকালে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশনারদের শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতে পারে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে গতকাল নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করে দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। এর আগে গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটির বাছাই করা ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে জমা দেয়া হয়। সেদিনই জানানো হয়েছিল, রাষ্ট্রপ্রধান নামগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবেন।

দেশের ত্রয়োদশ সিইসি হিসেবে নিয়োগ পেলেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। তার নেতৃত্বাধীন কমিশনের পরিচালনায়ই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সাবেক আমলা কাজী হাবিবুল আউয়াল প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে ২০১৭ সালে অবসর নিয়েছিলেন।

এর আগে বিসিএস ১৯৮১ ব্যাচের এ কর্মকর্তা আইন, ধর্ম ও সংসদ সচিবালয়ে সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্র্যাকে অধ্যাপনা করছিলেন।

নতুন নির্বাচন কমিশন ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়ায় কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমার ওপর একটি গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। সে দায়িত্বটা সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করতে হবে। বাংলাদেশের কনটেক্সটে দায়িত্বটা বেশ চ্যালেঞ্জিং। এখানে নির্বাচনগুলো খুব স্মুথলি হয় না। পক্ষরা খুব সহমর্মিতার সঙ্গে মিলেমিশে নির্বাচনে আসেন না।

দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি আশা প্রকাশ করে সিইসি বলেন, ওনারা যদি একটি ভালো পলিটিক্যাল ক্লাইমেট ক্রিয়েট করতে পারেন; অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারেন, তাহলে নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব স্বাচ্ছন্দ্যে পালন করতে পারবে। আরো বেশি সফলতার সঙ্গে কাজ করতে পারবে।

নির্বাচনে সবার সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন উল্লেখ করে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমাদের দেশটা গণতান্ত্রিক। অব দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল—সেই গভর্নমেন্ট করতে হলে সবাইকে আসতে হবে। ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে হবে। নিজে রিপ্রেজেন্টেটিভ নির্বাচিত করতে হবে।

সিইসি বলেন, আমরা আমাদের সীমিত ক্ষমতায় কতটুকু করতে পারব, সেটা শপথ গ্রহণ করার পর আমি সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বোঝার চেষ্টা করব। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান প্রয়োগের চেষ্টা করব।

কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন সাবেক নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি। তার পর থেকে এ পর্যন্ত কমিশন কার্যত শূন্য ছিল। স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম আইন অনুযায়ী ইসি গঠন হয়েছে। গত ২৭ জানুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২ জাতীয় সংসদে পাস হয়।

নতুন ইসি গঠনের লক্ষ্যে ৫ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে সার্চ কমিটি গঠিত হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহাহিসাব নিরীক্ষক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন ও কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক।

এর আগের দুটি নির্বাচন কমিশন সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠন করা হয়েছিল। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ২০১২ সালে কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ ও ২০১৭ সালে কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। তবে অতীতে সার্চ কমিটির কাছে জমা পড়া কোনো নাম প্রকাশ করা হয়নি।

ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম প্রস্তাব করতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের কাছে নাম চেয়েছিল সার্চ কমিটি। পরবর্তী সময়ে ২৪টি রাজনৈতিক দল ও ছয়টি সংগঠন নামের তালিকা জমা দেয়। ব্যক্তিগতভাবেও অনেকে নামের তালিকা জমা দিয়েছিলেন। তবে বিএনপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ (সিপিবি) বেশ কয়েকটি দল নাম দেয়া থেকে বিরত ছিল। সব মিলিয়ে মোট ৩২২ জনের নাম পেয়েছিল সার্চ কমিটি। ওই তালিকায় অধিকাংশই ছিলেন অধ্যাপক, বিচারপতি, সাবেক সচিব ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তা। সেখান থেকে প্রাথমিকভাবে ২০ জনের নামের তালিকা করা হয়। পরে সেটি আরো ছোট করে ১২-১৩ জনের একটি তালিকা করা হয়। সেখান থেকে ১০ জনের নাম বাছাই করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *